রোজার আগেই রাজধানীতে ভয়াবহ যানজটের আশঙ্কা
১১ মার্চ ২০২২ ২০:৪৭
ঢাকা: আগামী ৩ বা ৪ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে মুসলমানদের বৃহত্তম ইবাদত রমজান মাস। এমনিতেই এই মাসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয় রাজধানী ঢাকার বাসিন্দাদের। গত দুই বছর করোনার সংক্রমণরোধে সরকারি বিধিনিষেধের কারণে রাজধানীতে যানজটের ধকল খুব একটা পোহাতে হয়নি নগরবাসীকে। ট্রাফিক বিভাগ থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবার আশঙ্কা, এবার করোনা স্বাস্থ্যবিধি খুব একটা কার্যকর না থাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হবে রাজধানীতে। রমজানজুড়েই চলবে যানজটের দাপট।
সাধারণ মানুষের এখনই অভিযোগ, রমজান মাস তো পরের কথা, শবে বরাতের আগেই সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকছে যানবাহন। সড়কে নেই কোনো নিয়ন্ত্রণ। যে যেভাবে পারছে চলছে। একই সড়কে বাস, ট্রাক, মাইক্রো, কাভার্ডভ্যান, প্রাইভেটকার, রিকশাভ্যান, অটোরিকশা, সিএনজি, বাইসাইকেল-মোটরসাইকেল চলছে। ফলে সড়ক থাকছে থমকে। কে কার আগে যাবে তা নিয়ে যেন রীতিমতো যুদ্ধ শুরু হয় রাজধানীর পথে পথে।
তারা বলছেন, ট্রাফিক বিভাগ কার্যকরি পদক্ষেপ না নিলে রমজান মাসে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
বুধবার (৯ মার্চ) ও বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে তীব্র যানজটের চিত্র দেখা গেছে।
বিকেল তিনটার দিকে রাজধানীর কাকরাইল মোড়-মহাখালী সড়কে দেখা যায় প্রচণ্ড যানজট। একই সড়কে সবধরনের গাড়ি থাকায় মোটরসাইকেল-বাইসাইকেলও আটকে থাকছে দীর্ঘসময়। অথচ অতীতে এই সড়কে কখনো গাড়ি আটকে থাকত না। সিগনাল থাকলেও কিছুক্ষণ পরপর তা স্বাভাবিক হতো। কিন্তু মার্চ মাসের শুরু থেকে এই সড়কটি যেন আটকে থাকা এক গাড়ির দ্বীপে পরিণত হয়েছে।
কাকরাইল-মগবাজার-মহাখালী সড়কে চলাচলকারী মোটরসাইকেল চালক ইমরান হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, এর আগে এই সড়কে খুব একটা যানজট কখনোই দেখা যায়নি। গত কয়েকদিন হলো গাড়ি আটকে থাকছে। সিগনালও ছাড়ে না সহজে। এই সড়কে রিকশা চলত না, এখন দেখি রিকশাও চলছে। সামনে রোজার মাসে কী যে হবে তা বলতে পারছি না। হয়তো এখন এক ঘণ্টা লাগে, তখন লাগবে তিন ঘণ্টা।
ভিআইপি সড়কের অবস্থা যদি হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকা। তাহলে অন্যান্য সাধারণ সড়কে কি হবে এমন আশঙ্কা করে মালিবাগ-বাড্ডা-প্রগতি স্মরণী সড়কে চলাচলকারী রাইদা বাসের যাত্রী আরিফুল ইসলাম বলেন, এখন কোনো কিছুতেই উঠে আগে যাওয়ার সুযোগ নেই। সড়কে সবধরনের গাড়ি এমনভাবে ঢুকে পড়ে যে সবাইকে আটকে থাকতে হয়। মূল সড়ক থেকে রিকশা উঠিয়ে দেওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।
রাজধানীল লালবাগ, চকবাজার, বংশাল, তাঁতীবাজার, রায় সাহেব বাজার, সূত্রাপুর, গেন্ডারিয়া, যাত্রাবাড়ী, জুড়াইন, পোস্তগোলা, ধোলাইরপাড় ও ডেমরা এলাকার সড়কগুলো বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) ঘুরে দেখা যায়, সড়কে ট্রাফিক পুলিশের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সিগনালগুলোতে যে যার মতো গাড়ি ঢুকিয়েছে। যানজটে আটকে আছে। কোনো কিছু নড়াচড়া করতে পারছে না। ট্রাফিক পুলিশ অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে আছে।
রাজধানীর দয়াগঞ্জ মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের অন্তত ছয়জন সদস্য দাঁড়িয়ে আছেন। অথচ মোড়ে চারদিকের সড়ক থেকে সিএনজি, পিকাপ, কাভার্ডভ্যান, বাস ও রিকশাভ্যানসহ সবধরনের গাড়ি একেবারে ঢুকিয়ে দিয়ে আটকে আছে। এ সময় কোনো ইমার্জেন্সি গাড়ি বা অ্যাম্বুলেন্স এলেও তা আটকে থাকছে। সাধারণ যাত্রীদের অভিযোগ, পুলিশ ইচ্ছা করেই এই অবস্থার সৃষ্টি করছে। সড়কগুলোতে যদি ট্রাফিক পুলিশ সঠিক ভূমিকা পালন করে তাহলে যানজট থাকত না। আর এ অবস্থা যদি রমজান মাসেও চলতে থাকে তাহলে রোজাদারদের সড়কেই ইফতারসহ দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে হবে।
পুরান ঢাকাসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় নতুন যানবাহন হিসেবে চলছে চায়না অটোরিকশা। এই অটোরিকশা নতুন করে যানজটের সৃষ্টি করছে। পুলিশের সামনেই এসব অটোরিকশা দিব্বি চলাচল করলেও কোনো বাঁধা দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন অনেকে। এর আগে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা যেভাবে শুরু হয়েছিল এখন তা দেদারছে চলছে। একইভাবে চায়না অটোরিকশাও রাজধানীর সড়কগুলোতে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করবে বলে আশঙ্কা করেছেন সাধারণ মানুষজন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ বুয়েটের অধ্যাপক ড. শামছুল হক সারাবাংলাকে বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা বলতে কিছুই নেই। তার ফল হলো, সবকিছু আটকে থাকা ও দুর্ঘটনা। সরকারকেই শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আসন্ন রোজায় এই যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। এখনই উদ্যোগ নিতে হবে যাতে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক থাকে। মুল সড়ক থেকে রিকশা ভ্যান প্রবেশে নিষিদ্ধ করতে হবে। ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি ও কড়াকড়ি আরোপ করতে হবে। ট্রাকগুলো যেন রাত ১০টার আগে সড়কে নামতে না পারে সেব্যবস্থাও ট্রাফিক পুলিশকে নিতে হবে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক সারাবাংলাকে বলেন, রাজধানীর সড়কগুলোতে যান চলাচলের সবচেয়ে বড় অন্তরায় হচ্ছে ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করা। এই মুহূর্তে এমন কোনো সড়ক নেই, যে সড়কের ফুটপাত বেদখল আছে। সব সড়কই দখল করে দোকানপাট বসানো হয়েছে। তাহলে যাত্রীরা হাঁটবে কিভাবে। এমনও সড়ক আছে যে সড়কে পায়ে হাটার কোনো ব্যবস্থা নেই। ওইসব সড়কে অন্যান্য যানবাহনের সঙ্গে যাত্রীদেরও পায়ে হেটে চলতে হয়। তাই ঈদের আগে পুরো রোজার সময়টাতে যানজটমুক্ত সড়ক রাখতে চাইলে ফুটপাত সবার আগে পরিস্কার রাখতে হবে।
যানজটমুক্ত সড়ক রোজার মাসে রাজধানীবাসী পাবে কি না জানতে চাইলে ডিএমপির ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মুনিবুর রহমান বলেন, রোজার আগে ও ঈদ কেন্দ্র করে ঢাকার সড়কগুলোতে যেন স্বাভাবিকভাবে যান চলাচল করতে পারে সেজন্য একটি পরিকল্পনা করা হয়েছে। সকালে অফিসগামী আর বিকেলে ঘরমুখী সবাই যেন যথাসময়ে কর্মস্থল ও ঘরে ফিরতে পারে সেজন্য বাড়তি ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এছাড়া থানা পুলিশও দায়িত্ব পালন করবে।
এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, রোজার আগে থেকেই রাজধানীর অনেক সড়কে রিকশাভ্যান প্রবেশ করতে পারবে না। এজন্য ট্রাফিক কনস্টেবলসহ একাধিক আনসার সদস্য মোড়গুলোতে অবস্থান করবে। এছাড়া দিনের বেলা কোথাও গাড়ি থামিয়ে কোনো মালামাল লোড-আনলোড করতেও পারবে না। সড়কে যেখানে সেখানে কেউ গাড়ি পার্কিংও করতে পারবে না বলে জানান তিনি।
সারাবাংলা/ইউজে/এএম