‘পঁচাত্তরের পর শুরু হয় খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের রাজত্ব’
১২ মার্চ ২০২২ ০৮:৫৪
ঢাকা: ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরিবারসহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের রাজত্ব শুরু হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময় বিদেশে থাকার কারণে ছোট বোন শেখ রেহানা ও তিনি বেঁচে গেলেও তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া নানা অন্যায় ও হয়রানির কথাও তুলে ধরেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমিরাত সফর উপলক্ষে এক নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। গতকাল শুক্রবার (১১ মার্চ) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আমিরাত সফরকালীন আবুধাবির আবাসস্থল থেকে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর আবাসস্থল প্রান্তে আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ.কে আব্দুল মোমেন। আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত মো. আবু জাফরের সঞ্চালনায় আমিরাত সফরকালে প্রধানমন্ত্রীর আবাসস্থল, আবুধাবি থিয়েটার, বাংলাদেশ কনস্যুলেট দুবাই, বাংলাদেশ প্রাইভেট স্কুল ও কলেজ রাস আল খাইমাতে একযোগে এ আয়োজনে অংশ নেন প্রবাসীরা। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন রাষ্ট্রদূত মো. আবু জাফর।
এ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৫ আগস্টের ঘটনায় হয়তো আমরা বেঁচে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওরা আমাদের পাসপোর্টটা পর্যন্ত আটকে রেখেছিল। প্রবাসে রিফিউজি হিসেবে আমাদের থাকতে হয়েছে। একদিকে পরিবারের শোক, অন্যদিকে এই কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেদের পরিচয়টা পর্যন্ত দিতে পারিনি।’
তিনি বলেন, ‘যে দেশে আমার বাবা-মা ও ভাই-বোনকে হত্যা করা হয়েছিল, আমাদের কোনো অধিকার ছিল না বিচার চাইবার। কারণ খুনিদেরকে পুরষ্কৃত করা হয়েছিল। তাদের কোনো বিচার করা যাবে না। তাদের বাঁচাতে ইন্ডেমনিটি আইন জারি করা হয়। অপরাধ করা সত্ত্বেও তাদের মুক্ত করে পুরষ্কৃত করে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেওয়া হয়েছিল। তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। জনগণের ভোট চুরি করে তাদের পার্লামেন্টে বসানো হয়েছিল। যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার দেশের নাগরিককে পাশবিক অত্যাচার করে, ঘরবাড়ি লুট করে, অগ্নিসংযোগ করে, গণহত্যা চালিয়েছিল- তাদের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা করা হয়েছিল। অর্থ্যাৎ রাজত্ব শুরু হয়েছিল খুনি, যুদ্ধাপরাধীদের।’
তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান করেছিলেম- আমাদের মাটি আছে, যে যা পারেন আপনারা ফসল ফলান। এক ইঞ্চি জমি যেন অনাবাদি না থাকে। আমি আবারও বলব, যারা প্রবাসে আছেন তারা আপনাদের পরিবারের মানুষদের বলবেন এক ইঞ্চি জমিও যেন তারা খালি না রাখে। কিছু না কিছু যেন আবাদ করে। একটা মরিচের গাছ হলেও যেন লাগাই। অন্তত নিজেরটা যেন নিজে করে খেতে পরি। তাহলে বিশ্বব্যাপী যতই মন্দা আসুক খাদ্য ঘাটতি নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের অসুবিধা হবে না।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে আবুধাবি থেকে বক্তব্য রাখেন আইয়ুব খান, দুবাই কনস্যুলেট প্রান্ত থেকে মিলন হাওলাদার ও বাংলাদেশ ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী অর্থি রাণী দাস। তারা বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের দাবি ও সুযোগ-সুবিধার তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানান।
এর আগে ভার্চুয়াল মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রাদেশিক শহর রাস আল খাইমার বাংলাদেশ ইংলিশ প্রাইভেট স্কুল অ্যান্ড কলেজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভবনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ সময় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার দেশে-বিদেশে বাংলা ভাষার উন্নয়নে দৃঢ়ভাবে কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছে। যে সমস্ত অঞ্চলে প্রবাসীরা রয়েছেন, প্রবাসে পরিবারসহ বসরাস করছেন অনেক ব্যবসায়ী। সেখানে তাদের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার সুবিধার জন্য বাংলাদেশি স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা বহুদিন ধরে প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলাম। স্কুলগুলোর উন্নয়নের জন্য কিছু কিছু জায়গায় আমরা সহযোগিতা দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০১৯ সালে যখন আমি আরব আমিরাতে এসেছিলাম তখনো এখানে বাংলাদেশি স্কুল চালুর ব্যাপারে আলোচনা হয়েছিল। পরবর্তীতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রী বিষয়টি আমাকে জানিয়েছিলেন স্কুলটির কিছু উন্নয়ন দরকার। স্কুলটা যেন বন্ধ না হয় তার জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তার জন্য আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি। এখন সেখানে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। আজ আরব আমিরাতে উপস্থিত থেকে এরকম একটি কার্যক্রমের উদ্বোধন করতে পেরে আমি আনন্দিত।’
রাসেল খাই মাহ প্রান্তে বঙ্গবন্ধু ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়কমন্ত্রী ইমরান আহমেদ, বাংলাদেশ ইংলিশ প্রাইভেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি তাজ উদ্দিন, প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান ও সাবেক সভাপতি পেয়ার মোহাম্মদ।
দুবাইয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ কনস্যুলেট প্রান্তে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, কনস্যুলেট জেনারেল বিএম জামাল হোসেন। আবুধাবি প্রান্তে ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রীর স্ত্রী।
সারাবাংলা/এনআর/এনএস