হতদরিদ্রের ভাষা মন্ত্রীরা বোঝেন না: জি এম কাদের
১২ মার্চ ২০২২ ২১:০৮
ঢাকা: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, মানুষের আয় বেড়েছে। দেশের প্রবৃদ্ধি ঈর্ষণীয় পর্যায়ে। কিন্তু টিসিবির ট্রাকের পাশে মানুষের লাইন দেখলেই বোঝা যায় মানুষ কতটা ভালো আছেন। এখন অনেকেই প্যান্ট-শার্ট পড়ে টিসিবির পণ্য কিনতে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। টিসিবির পণ্য কিনতে এক কিলোমিটার লাইন, দিনের শেষে অনেকেই খালি হাতে বাসায় ফেরেন। সরকার সাধারণ মানুষের কষ্ট বোঝে না, হতদরিদ্রের ভাষা মন্ত্রীরা বোঝেন না। এভাবে চলতে থাকলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। টিসিবির পণ্য দিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এমন বাস্তবতায় সরকার রেশনিং চালু করতে পারে।
শনিবার (১২ মার্চ) রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এ কথা বলেন।
দলের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনের মাধ্যমে আগামী দুই বছরের জন্য জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ-এর জন্য পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপিকে সভাপতি ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান-এর উপদেষ্টা জহিরুল ইসলাম রুবেলকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতেও নির্দেশ দিয়েছেন পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও মহানগর দক্ষিণ এর সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপির সভাপতিত্বে ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান-এর উপদেষ্টা জহিরুল আলম রুবেল-এর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরও বলেন, ‘যারা সরকারি দল করেন, শুধু তারাই অর্থনৈতিকভাবে ভালো আছেন। তারা লুটপাট, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দলবাজি আর দখলের রাম রাজত্ব কায়েম করেছে। মানুষ কারো কাছে বিচার দিতে পারে না। মানুষ জানে না কার কাছে গেলে কোন প্রতিকার মিলবে। কারো হয়ত আয় বেড়েছে লাখ-লাখ টাকা আর বেশির ভাগ মানুষের আয় কমেছে। তাই কাগজে কলমে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির সুফল পাচ্ছে না দেশের সাধারণ মানুষ। অন্য দিকে নিত্য পণ্যের দাম বেড়ে মানুষের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। দেশের মানুষ বর্তমান পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চায়।’
জি এম কাদের আরও বলেন, ‘তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৯০ সালে রাষ্ট্র ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। এরপর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সীমাহীন দুর্নীতি করে দেশের অর্থনীতি ভেঙে দিয়েছে। দুটি দল শুধু দলের নেতা ও কর্মীদের স্বার্থ বোঝে। তারা দেশ ও মানুষের স্বার্থ বোঝে না। ব্যাংকে টাকা নেই, ব্যাংকগুলো বড় লেনদেন করতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘১৯৯০ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। সংবিধানে ইচ্ছে মতো কাটাকাটি করে স্বৈরতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।’
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সোনার বাংলা নরক বানিয়েছে। তাদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা যেনতেনভাবে ক্ষমতায় যেতে। একটি দল যে কোনো মূল্যে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চায়। আর আন্য দলটি যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ক্ষমতার লোভে তাদের সামনে দেশ ও দেশের মানুষ মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। আমরা দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করি, আমরা দেশের মানুষকে মুক্তি দিতে চাই।’
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে দিয়েছে। তারা উৎসবের নির্বাচন আতংকে পরিণত করেছে। নির্বাচনের নাম শুনলেই মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তাই সাধারণ জনগণ এখন আর ভোটকেন্দ্রে যেতে চায় না। দেশের মানুষকে নির্বাচনমুখী করতে হবে। দেশের মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তবেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। দেশের মানুষ সুশাসন ভোগ করবে।’
এ সময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘জাতীয় পার্টি করে যারা অন্য দলের দালালি করবে তাদের জায়গা জাতীয় পার্টিতে হবে না। যারা ব্যক্তি স্বার্থে অন্য দলের দালালি করবে তাদের কঠিন শাস্তি পেতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টি কোনো দলের বি-টিম নয়। জাতীয় পার্টি কারও দালালি করে না। জাতীয় পার্টি শুধু তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে, যারা ক্ষমতায় গিয়ে লুটপাট করবে না। যারা ক্ষমতায় গিয়ে সুশাসন, আইনের শাসন, মানুষের মর্যাদা ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করবে তাদের সঙ্গেই জাতীয় পার্টির বন্ধুত্ব হবে। তিনি বলেন, মানুষের মর্যাদা ও অধিকার রক্ষার জন্যই আমাদের রাজনীতি।’
এ সময় জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, ‘দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের ওপর নাখোশ আর বিএনপিকে বিশ্বাস করে না। গণমানুষের অধিকার নিয়ে মাঠে নামলেই দেশের সুশীল সমাজ জাতীয় পার্টির সঙ্গে থাকবে। দেশের মানুষ দুর্নীতি ও দুঃশাসন থেকে মুক্তি চায়। একটি চক্র সিন্ডিকেট করে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বি করেছে। সরকারের যেন কিছুই করার নেই। বিএনপি আর আওয়ামী লীগ মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। মানুষ দুটি দলকে আর চায় না।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেছেন, ‘আল্লাহ্ ছাড়া আর কাউকে ভয় করি না। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ-এর সৈনিকরা জেল, জুলুম ও অত্যাচার ভয় পায় না। আমরা মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে পিছপা হব না।’
কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি বলেছেন, ‘গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত হচ্ছে, মানুষের কথা বলার অধিকার নিশ্চিত করা। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে আমরা এগিয়ে যাবো। অন্যায়ের কাছে আমরা মাথা নত করবো না।’
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও জাতীয় পার্টি মহানগর দক্ষিণ এর সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি বলেছেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ-এর জাতীয় পার্টি মানুষের কষ্টে ঘরে বসে থাকতে পারে না। জাতীয় পার্টি গণমানুষের পাশে ছিল, আমরা মানুষের পাশে থাকব।’
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপির সভাপতিত্বে এবং মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক ও মাননীয় চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা জহিরুল আলম রুবেল- এর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, কো- চেয়ারম্যান- এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশিদ এমপি- প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, অ্যাডভোকেট শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, এস এম ফয়সাল চিশতী, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, এমরান হোসেন মিয়া, জহিরুল ইসলাম জহির, মাননীয় চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা শেরীফা কাদের এমপি, ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক এ. আদেল, যুগ্মসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, ফখরুল আহসান শাহজাদা, সুজন দে ও মাহবুবুর রহমান খসরু এর সঞ্চালনায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হাজী ফারুক, মো. শাহজাহান, জুবের আলম খান রবিন, শরফুদ্দিন শিপু, আক্তার হোসেন দেওয়ান, এস এম সোবহান। সম্মেলনে সৈয়দ আবু হোসেন বাবরাকে সভাপতি ও জহির হোসেন রুবেলকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে