বাড়ছে তাপমাত্রা, এপ্রিলে আসছে তাপদাহ
১২ মার্চ ২০২২ ২১:৪৭
ঢাকা: এবার একটু দেরি করেই বিদায় নিয়েছে কুয়াশায় মোড়ানো শীতের সকাল। প্রায় ফাল্গুনের শেষে শীতকে বিদায় জানিয়ে প্রকৃতি যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। এদিকে, বসন্ত না ফুরোতেই চোখ রাঙাচ্ছে গ্রীষ্ম। প্রতিদিনই একটু একটু করে বাড়ছে তাপমাত্রার পারদ। আর সেই বাড়তি তাপমাত্রা রূপ নিতে যাচ্ছে মৃদু তাপপ্রবাহে। এমনই আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ১ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তি রয়েছে। আগামী এপ্রিলে তা বেড়ে অতীতের রেকর্ড ভাঙতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেই এবার অতিরিক্ত শীত, অতিবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, তাপপ্রবাহের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।
ষড়ঋতুর শেষ ঋতু বসন্ত। বাংলায় ফাল্গুন ও চৈত্র দুই মাস বসন্তকাল। শীত চলে যাওয়ার পর আসে বসন্ত, এরপর গ্রীষ্ম। এবার বাংলাদেশের মানুষকে বসন্ত মৌসুমেও শীতের চাদরে মুড়িয়ে থাকতে যেমন হয়েছে, তেমনি এই বসন্তেই গ্রীষ্মের তাপমাত্রা দিতে শুরু করেছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের সর্বশেষ রেকর্ড অনুযায়ী, শনিবার (১২ মার্চ) সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৫ দশমিক ০৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে ৫ ডিগ্রি বেশি। আর এই সময় রাজধানী ঢাকাতে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৩ দশমিক ০৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখানেও স্বাভাবিকের চেয়ে ১ ডিগ্রি বেশি রেকর্ড করা হয়েছে। শুক্রবার (১১ মার্চ) ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া সারাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সিলেটে ৩৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পাশাপাশি রাঙামাটিতে ৩৫ ডিগ্রি ও সন্দীপে ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করে।
এ প্রসঙ্গে আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল মল্লিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাধারণত বাংলাদেশ অংশে এপ্রিল ও মে এই দুই মাস প্রচণ্ড গরম অনুভূত হয়। আমরা গত কয়েক বছরের রেকর্ড যদি দেখি তাহলে বলতে পারি, ধীরে ধীরে এই সময়গুলোতে বেশ পরিবর্তন এসেছে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর ধরনও বদলেছে। প্রতি বছরই বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বাড়ছে।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বে অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণের কারণে আবহাওয়ায় পরিবতর্ন হচ্ছে। প্রতিনিয়ত তাপমাত্রা বাড়ছেই। যে কারণে বৃষ্টিপাত, তাপদাহ, শৈত্যপ্রবাহ, ঘুর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর অস্বাভাবিক চরিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর আমাদের শীত মৌসুম বেশি সময় স্থায়ী ছিল এবং দেশের কোথাও কোথাও মৃদু শৈত্যপ্রবাহ লাগাতার অব্যাহত থাকে। এটা ঋতুর স্বাভাবিক চরিত্র নয়। বর্তমানে যে তাপমাত্রা দেখা যাচ্ছে, সেটাও কোথাও বেশি, আবার কোথাও কম।’
আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ হিমালয়ের পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ এবং এর কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছে। আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকলেও আগামী তিন দিনের হিসাবে তাপমাত্রা বাড়বে।
উল্লেখ্য, গত বছরের তাপমাত্রা এর আগের ৩০ বছরের রেকর্ড অতিক্রম করেছিল। ৪০ দশমিক ০৫ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠেছিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এবারও এপ্রিল-মে মাসে তাপমাত্রা বাড়ার আভাস দেওয়া হলো।
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম