Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পুলিশের নির্যাতনে মায়ের মৃত্যু, ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের অভিযোগ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৩ মার্চ ২০২২ ২০:৪৯

ঢাকা: রাজধানীর পল্লবী ১১ নম্বর সেকশনের মিল্লাত ক্যাম্পের বাসিন্দা পৃথিবী আক্তার। মা, ভাই ডলার এবং বোন দীপা ও রিপা আক্তারকে নিয়ে টানাটানির সংসার। ওই এলাকায় পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিত তারেক নামে এক ব্যক্তি দীপাকে বিয়ে করতে চান। রাজি না হলে হুমকি দেওয়া হয় তার পরিবারকে। এক পর্যায়ে চাঁদাও দাবি করেন তিনি। দারিদ্র্যের কারণে চাঁদা দেওয়ার সামর্থ্য নেই জানালে পরে পল্লবী থাকার কয়েকজন পুলিশ এসে ডলারকে থানায় নিয়ে যেতে চান। এসময় মা বাধা দিলে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন পুলিশ সদস্যরা। এসময় জ্ঞান হারান তিনি। ওই রাতেই তার মৃত্যু হয়। পরে পুলিশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই তার মরদেহ দাফন করতে বাধ্য করে পৃথিবী আক্তার ও তার পরিবারের সদস্যদের।

এখানেই শেষ নয়, পরিবার থেকে এ সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে মামলা করতে গেলে তাদের ওপর আবার নির্যাতন চালানো হয়। এক পর্যায়ে ডলার, দীপা ও রিপাকে ধরে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মাদক কারবারের অভিযোগ এনে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়।

রোববার (১৩ মার্চ) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে পৃথিবী আক্তার ও তার পরিবারের সদস্যরা এসব অভিযোগ করেন। এসময় তারা এসব নির্যাতন-নিপীড়নের বিচার দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত পৃথিবী আক্তার বলেন, পল্লবীর ১১ নম্বর সেকশনের মিল্লাত ক্যাম্পে থাকি আমরা। আমরা কয়েকজনই সেলাই মেশিন চালিয়ে অত্যন্ত কষ্টে সংসার চালাই। আমরা পরিবারের সবাই উপার্জন করে ছোট বোন দীপাকে পড়ালেখা করাই। পড়ালেখা শেষ করে চাকরি করবে, আমাদের জীবনমান উন্নত হবে— আমাদের প্রত্যাশা ছিল এটুকুই। কিন্তু এলাকার তারেক নামে একজন পুলিশের সোর্স কিছু দিন ধরেই দীপাকে বিরক্ত করছিল। স্ত্রী-সন্তান থাকলেও সে দীপাকে বিয়ে করতে চায়। তার প্রস্তাবে রাজি না হলে সে হুমকি দেয়।

পৃথিবী আক্তার বলেন, আমার মা হার্টের রোগী ছিলেন। গত ১০ ফেব্রুয়ারি বাসায় এসে তারেক পুলিশের হয়ে চাঁদা দাবি করে। আমরা দরিদ্র জানালে সে বেরিয়ে যায়। এরপর ওই রাতেই পল্লবী থানার এএসআই হরিদাস, এএসআই হুমায়ুন কবির হাওলাদারসহ কয়েকজন পুলিশ আমার ভাই ডলারের ওপর আক্রমণ করে তাকে নিয়ে যেতে চায়। এসময় আমার মা আটকাতে গেলে পুলিশ সদস্যরা মাকে ধাক্কা দেয়। এতে তিনি জ্ঞান হারান। এরপর ভাইকে রেখে পুলিশ সদস্যরা চলে যায়। ওই রাতে ৩টার দিকে আমার মা মারা যান। পুলিশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই মাকে দাফন করার জন্য চাপ দিতে থাকে। ফলে বাধ্য হয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মাকে কবর দেই।

পৃথিবী আক্তার সংবাদ সম্মেলনে জানান, থানায় বিচার না পেয়ে পরে তারা আদালতে মামলা করার প্রস্তুতি নেন। কিন্তু পুলিশ টের পেয়ে গত ২ মার্চ ফের তাদের বাসায় হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেন তিনি।

পৃথিবী বলেন, ওই সময় দীপা ফেসবুক লাইভে যায়। তখন এসআই আনোয়ার, এএসআই হুমায়ুন কবির হাওলাদার, এএসআই হরিদাস আমার বোনকে হেনস্তা করে। অনাহিতা খানম ফেসবুক আইডিতে সেই ঘটনা লাইভে ছিল। পুলিশ তখন মোবাইল কেড়ে নিয়ে ভিডিও ডিলিট করে দেয়। ওই দিন কোনো নারী পুলিশ ছাড়াই আমার বোন রিপা আক্তার, দীপা আক্তার ও ভাই ডলারকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।

পৃথিবী আক্তারের অভিযোগ, থানায় নিয়ে যাওয়ার পথে রাস্তাতে এবং থানায় নিয়ে যাওয়ার পর আমার তিন ভাই-বোনকে ব্যাপক নির্যাতন করে পুলিশ। এরপর তিন জনের নামে ইয়াবা ও হেরোইন কারবারের মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠায়। রিপার ছয় মাসের একটি দুগ্ধপোষ্য শিশু রয়েছে। মাকে না পেয়ে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে নির্যাতনের মাত্রা বেশি হওয়ায় ভাই ডলারকে কারাগারে নেওয়ার পরও চিকিৎসায় রাখা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি।

সংবাদ সম্মেলনে বোন পৃথিবী আক্তার আরও বলেন, পরে সোর্স তারেক আমাদের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেছিল। বলেছিল, টাকা দিলে তাদের (তিন ভাই বোন) নামে মামলা দেওয়া হবে না। টাকা না পেয়েই প্রতিহিংসার বশে আমার তিন ভাই-বোনকে মাদক মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়েছে। আর আমাদের পলাতক আসামি দেখিয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে পৃথিবী আক্তার বলেন, আমাদের পুরো পরিবারে কেউ কোনো দিন মাদক কারবারে জড়িত ছিল না, এখনো কেউ করেন না। সব গোয়েন্দা বাহিনী দিয়ে তদন্ত করে দেখুক, আসলে কোনটি সত্য। এলাকায় মাদক ব্যবসা করলে কেউ না কেউ জানত। থানায় কোনো না কোনো সময় জিডি বা মামলা থাকত আমাদের নামে। এই প্রথম ওসি পারভেজ ইসলাম (পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) আমাদের নামে মাদক মামলা দিলেন।

পৃথিবী আক্তার বলেন, আমাদের ওপর যে নির্যাতন চালানো হয়েছে, আমরা এর বিচার চাই। আমরা সুষ্ঠু বিচার চাই। এই ঘটনায় পুলিশের ওই সোর্সসহ যেসব পুলিশ সদস্য জড়িত, তাদের সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ ইসলামের সরকারি মোবাইল নম্বরে বারবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর অঞ্চলের উপকমিশনার (ডিসি) মাহাতাব উদ্দিনকে ফোন করা হলে তিনিও কল রিসিভ করেননি।

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

টপ নিউজ পল্লবী থানা পুলিশের নির্যাতন পুলিশের নির্যাতনের অভিযোগ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর