র্যাগিংয়ের নামে নির্যাতন: হল প্রশাসনের তদন্ত কমিটি
১৩ মার্চ ২০২২ ১৭:২৩
ময়মনসিংহ: র্যাগিংয়ের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্নিবীণা হল ও সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী সাগর চন্দ্র দে’কে নির্যাতনের অভিযোগ তদন্ত করতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হল প্রশাসন। কমিটিতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হলের প্রভোস্ট কল্যাণাংশু নাহা।
শনিবার (১২ মার্চ) ওই শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর রোববার (১৩ মার্চ) এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইরফান আজিজকে আহ্বায়ক করে গঠিত তদন্ত কমিটিতে সদস্য সচিব করা হয়েছে হীরক মুশফিককে। কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন মো. আলিম।
এদিকে, সাগরকে নির্যাতনের বিচারের দাবিতে রোববার সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। তারা অভিযুক্ত নির্যাতনকারী চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী সৌমিক জাহানের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানান।
আরও পড়ুন- নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে শিক্ষার্থীকে নির্যাতন, হাসপাতালে ভর্তি
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, দোষীদের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে আমরা আন্দোলন করছি। কারণ সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনায় প্রশাসনের যে বিচার দেখলাম, তা খুবই দুঃখজনক। এজন্য আমরা অভিযুক্তদের স্থায়ী বহিষ্কার চাই, যেন এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর না ঘটে। পাশাপাশি সাগরের চিকিৎসার সব খরচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বহন করতে হবে।
আন্দোলনকারীরা আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সুষ্ঠু বিচার না করা পর্যন্ত আমরা এখানেই অবস্থান করব। আর কোনো ধরনের ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেব না।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ড. তপন কুমার সরকার বলেন, চাইলেই কাউকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা যায় না। আইনি প্রক্রিয়ায় অভিযুক্তকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হয়। সে সুযোগ দিতে হবে। তাছাড়া তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে খুব শিগগিরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
আরও পড়ুন- ‘ক্যাম্পাসে পড়াশোনা করতে পারবি না, আবরারের মতো মরবি’
এর আগে, শনিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্নিবীণা হলের ২০৪ নম্বর রুমে সাগর চন্দ্র দে’কে র্যাগিংয়ের নামে নির্যাতন করা হয়। সাগর জানান, তাকে রোলিং চেয়ারে জোর করে বসানোর পর সেটি ঘোরাতে থাকেন চারুকলা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সৌমিক জাহান। এক পর্যায়ে একপর্যায়ে চেয়ারটি উল্টে গেলে সাগর পড়ে যান। এসময় তিনি মাথায়, নাকে ও মুখে মারাত্মক আঘাত পান। তার সামনের দু’টি দাঁত ভেঙে গিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। তাকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেখানে চিকিৎসাধীন সাগর বলেন, আমাকে অত্যাচার করার পর আমার মোবাইলটি বারবার চাইলেও আমাকে দিতে চায়নি। অনেক চেষ্টার পর মোবাইলটি নিয়ে হাশর ভাইকে মেসেঞ্জারে একটি ছবি পাঠিয়ে সহায়তা চাই। কিছুক্ষণ পর তিনি এসে আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
এর আগে, ছাত্রলীগের রাজনীতি না করায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছিল। ওয়ালিদ নিহাদ নামেও ওই শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনায় চার শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাদের জন্য বরাদ্দ হলের সিটও বাতিল করা হয়েছে। তারা ৪ জনই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।
সারাবাংলা/টিআর