শতভাগ বিদ্যুতায়নের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ, ঘোষণা ২১ মার্চ
১৪ মার্চ ২০২২ ২০:১০
ঢাকা: লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতার পঞ্চাশে দাঁড়িয়ে দেশের সকল মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হবে। একজন মানুষও থাকবে না অন্ধকারে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীকে সামনে রেখে এই লক্ষ্যই পূরণ করতে চলেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ২১ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ১৪৮টি। মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াট। গত বছরের ২৭ এপ্রিল সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ৭২৯ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা দেখিয়েছে। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে বিদ্যুতের উৎপাদন ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। আর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গত ১৩ বছরে উৎপাদন বেড়েছে ১৯ হাজার ৬২৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। শতাংশের হিসাবে ৯৯.৮৫ ভাগ। এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি।
নসরুল হামিদ জানান, বর্তমানে ১৩ হাজার ২১৯ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন। এছাড়া ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদুৎ আমদানি করা হচ্ছে। শীত এবং অফ পিক মৌসুমে বিদ্যুৎ রফতানির পরিকল্পনাও রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের। যদিও সেরকম কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।
সূত্র মতে, গত ১৩ বছরে সরকার বিদ্যুৎ খাতে যেসব উন্নয়ন করেছে তার মধ্যে রয়েছে- ৫ হাজার ২১৩ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ। এছাড়া মোট ৩ লাখ ৬১ হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে নতুন গ্রাহকের সংযোগ সাড়ে তিন কোটি। বিদ্যুত সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৪৭ ভাগ থেকে ৯৯ শতাংশে পৌঁছেছে। মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ২২০ কিলোওয়াট থেকে প্রায় ৫৬০ কিলোওয়াটে গিয়ে ঠেকেছে। পাশাপাশি সিস্টেম লস ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে পেরেছে। এর বাইরে ৪৬ লাখ ৭৭ হাজার প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া আরও এক কোটি প্রিপেইড মিটার প্রস্তুত। সেচ মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। অন্যদিকে, সোলার হোম স্থাপন করা হয়েছে ৬০ লাখ।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৬৫ শতাংশ জ্বালানির ব্যবহার হয়ে থাকে। যার বেশিরভাগ আমদানি করা হয়। বর্তমানে এসব জ্বালানির দাম বাড়তি। ফলে গ্রীষ্মকালে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য চ্যালেঞ্জ। সবকিছুর মধ্যেও পুরো দেশে মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে পেরেছে সরকার।
তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য ছিল, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশের সব পর্যায়ের মানুষের ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বালাব। আমরা প্রতিশ্রুতি রাখতে পেরেছি। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ এখন বিদ্যুতের আলো পাচ্ছে। আগামী ২১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দেবেন। ওই দিন তিনি পটুয়াখালীতে নির্মাণ করা দেশের সবচেয়ে বড় ‘পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র’ সশরীরে উপস্থিত থেকে উদ্বোধন করবেন। এবং সেখান থেকেই শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দেবেন তিনি।”
এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ভৌগলিক অবস্থান, যাতায়াত সব কিছু মিলিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ও অজপাড়া-গাঁয়ে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর কাজটা সহজ ছিল না। তাছাড়া বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থান থেকেও ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি চিন্তা করা কঠিন। সেখানে সরকার সেই দুসাধ্য সাধন করতে পেরেছে। পুরো দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন করতে পেরেছে। যা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতও পারেনি।’
তিনি বলেন, ‘সন্দীপ, হাতিয়া, মনপুরা কিংবা রাঙ্গাবালির মতো জায়গা যেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক নেই, রাস্তা নেই, সেতু নেই, সেখানেও মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি ছিল স্বপ্নাতীত। বিচ্ছিন্ন হাতিয়া ও নিঝুম দ্বীপে ১৫ মেগাওয়াট কেন্দ্র নির্মাণ করে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওইসব এলাকার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। মানুষ বিদ্যুতের সুবিধা পেতে শুরু করেছে।’
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম