‘দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের পদক্ষেপ অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে’
১৪ মার্চ ২০২২ ২১:০২
ঢাকা: দারিদ্র্য বিমোচনসহ সামাজিক নিরাপত্তা অর্জনে জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কারণে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ এখন সারাবিশ্বে রোল মডেল হিসেবে পরিচিত বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সোমবার (১৪ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে আয়োজিত ‘ন্যাশনাল কনফারেন্স অন ডিজাস্টার, ক্লাইমেট অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি’ বিষয়ক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী।
এ বিষয়ে এনামুর রহমান বলেন, ‘ভৌগলিক অবস্থান, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব, ঘনবসতি ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশকে প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো প্রাকৃতিক ও মানব সৃষ্ট দুর্যোগের মোকাবিলা করতে হয়। তাছাড়া ২০১৯ সালে ঘূর্ণিঝড় ফণি ও বুলবুল এবং ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবিলা করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। এসব ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সরকারের পূর্বপ্রস্তুতি থাকায় জানমালের ক্ষয়ক্ষতি অনেক কম হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচনসহ সামাজিক নিরাপত্তা অর্জনে জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে।’
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গৃহহীন ‘সবার জন্য বাসস্থান’ স্লোগান অনুযায়ী দেশব্যাপী দুর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণ কার্যক্রমের আওতায় এ পর্যন্ত ৯৪ হাজার ৩৩৮টি বাসগৃহ নির্মাণ করা হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে আরও ৪৪ হাজার ৯০৯টি দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণের কাজ চলমান। ২০১৮-২০২২ মেয়াদে ৪২৩টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। দুর্যোগে দ্রুত ত্রাণ সামগ্রী সরবরাহের লক্ষ্যে জেলা পর্যায়ে পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী মজুদ ও বিতরণের লক্ষ্যে দেশের ৬৪টি জেলায় ৬৬টি জেলা ত্রাণ গুদাম কাম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্যকেন্দ্র নির্মাণ কার্যক্রম চলমান।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ঝুঁকিগ্রস্ত মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে উপকূলীয় অঞ্চলে ৩২০টি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। আরও ২২০ টি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। বন্যা প্রবণ ও নদী ভাঙন এলাকায় ২৩০টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে এবং ৪২৩টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া আরও ৬০০টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বন্যা ও অন্যান্য দুর্যোগ কবলিত মানুষকে উদ্ধার করতে ৬০টি বিশেষ মাল্টিপারপাস রেস্কিউ বোট তৈরি ও হস্তান্তর কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। জলবায়ুর ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য দুর্যোগ ঝুকি-হ্রাস বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে সরকার ১০০ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ প্রণয়ন করেছে। ২১০০ সাল নাগাদ স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাসমূহের সমন্বয়ে যোগসুত্র সৃষ্টি করবে এ ডেল্টা প্ল্যান । এভাবে দুর্যোগে ঝুঁকি হ্রাসে জীবন ও সম্পদের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে দুর্যোগ সহনীয়, টেকসই ও নিরাপদ দেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকার পরিকল্পিতভাবে কাঠামোগত ও অবকাঠামোগত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। যা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উচ্চ আয়ের উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সহায়ক হবে।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ বিভাগের পরিচালক ড. দিলারা জাহিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরিন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব এনভারমেন্ট সাইন্সের ডিন অধ্যাপক ড.জিল্লুর রহমান।
সারাবাংলা/জেআর/এনএস