১৫ দিন আগেই সুন্দরবনে মধু আহরণের ঘোষণা, পাস নিচ্ছে না মৌয়ালরা
১৫ মার্চ ২০২২ ০৮:৩৩
বাগেরহাট: প্রতিবছর ১ এপ্রিল থেকে মধু আহরণ মৌসুম শুরু হলেও এ বছর তার ব্যতিক্রম করেছে সুন্দরবন বিভাগ। এ বছর ১৫ মার্চ থেকে মধু সংগ্রহের জন্য পাস পারমিট (অনুমতিপত্র) দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সুন্দরবন বিভাগ। তবে বন বিভাগ মধু আহরণের আগাম সিদ্ধান্ত নিলেও তাতে আগ্রহ নেই পূর্ব সুন্দরবন অঞ্চলের মৌয়ালদের।
তবে আগাম সিদ্ধান্তে দ্বিমত পোষণ করে অভিজ্ঞ মৌয়াল ও মধু ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, সবেমাত্র বনে ফুল আসতে শুরু করেছে। মৌমাছিরা বাসা তৈরিতে ব্যস্ত। পূর্ণাঙ্গ মৌচাক তৈরি হয়নি এখনও। এই মুহূর্তে চাকে আঘাত লাগলে বা মধু সংগ্রহের জন্য মশাল জ্বালিয়ে ধোঁয়া দিলে মৌমাছিরা অন্যত্র চলে যাবে। এতে বাসা তৈরি ও মধু সংরক্ষণে ক্ষতি হবে মৌমাছির।
এদিকে মৌয়ালদের এই যুক্তির সঙ্গে একমত প্রকাশ করে বন বিভাগ জানায়, সুন্দরবনের শরণখোলা ও চাঁদপাই এলাকা নিয়ে পূর্ব বন বিভাগ এবং খুলনা ও সাতক্ষীরা নিয়ে পশ্চিম বন বিভাগ গঠিত। এই দুই বিভাগের বনাঞ্চলের ভৌগলিক অনেক পার্থক্য রয়েছে। দুই অঞ্চলে গাছপালাও একই রকম জন্মায় না।
সুন্দরবনে যে কয়টি প্রজাতির ফুলের মধু পাওয়া যায়, তার মধ্যে খলসি ও গরান ফুলের মধু উন্নতমানের। এই দুইয়ের মধ্যে আগাম ফুল আসা খলসি প্রজাতির গাছ পশ্চিম বিভাগের সাতক্ষীরা অঞ্চলে বেশি। সে তুলনায় পূর্ব বিভাগের শরণখোলা ও চাঁদপাইতে খুবই কম এই খলসি গাছ। আবার গরান গাছ বেশি পূর্ব বিভাগে। এই গরানের ফুল আসা শুরু হয় মার্চের শেষ দিকে, থাকে এপ্রিলজুড়ে। এ কারণে পূর্ব বিভাগের মৌয়ালরা গরান ফুলের ওপর বেশি নির্ভর করে। খলসি মধু সংগ্রহের জন্যই মূলত আগাম সিদ্ধান্ত নেওয়া।
মৌয়ালরা জানান, আগাম পাসে লাভবান হবে পশ্চিম বিভাগের মৌয়ালরা। এসময় বনে গেলে পূর্ব বিভাগের মৌয়ালদের পুরো একটি গোন (১৫ দিনে এক গোন) লোকসান গুনতে হবে।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পূর্ব-সুন্দরবন বিভাগের মৌয়ালদের প্রথম গোনে পাস নেওয়ার আগ্রহ কম, না গেলেও সমস্যা হবে না। পরে যখন যাবেন তখন তারা মধু আহরণ করতে পারবেন।’
বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. বেলায়েত হোসেন জানান, আজ মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) থেকে মধু আহরণ মৌসুম শুরু হয়েছে। ৩ মাস ধরে সুন্দরবনে চলবে মধু সংগ্রহ। চলতি মৌসুমে এ বিভাগ থেকে ১০৫০ কুইন্টাল মধু ও ৩৫০ কুইন্টাল মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সুন্দরবন বন বিভাগের পক্ষ থেকে এ বছর মৌয়ালদের নিরাপত্তাসহ সব ধরণের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।
সারাবাংলা/এমও