ঘরে-বাইরে সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়াচ্ছেন শেখ হাসিনা
১৪ মার্চ ২০২২ ২২:৫০
ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সংগঠনকে শক্তিশালী ও গতিশীল করার লক্ষ্যে তৃণমূল থেকে সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এর ধারাবাহিকতায় এবার গণভবনে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সরাসরি সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মাঠ পর্যায়ের কর্মসূচিতে অংশ নিতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি দলের নেতা ও এমপিদের সঙ্গে বসে নানামুখী যোগাযোগ ও কর্মকৌশল গ্রহণ করবেন তিনি। তার এই কর্মতৎপরতা মার্চ থেকেই শুরু হবে বলে জানা গেছে। করোনার সীমিত পরিসরের বিধিনিষেধ উঠিয়ে দিয়ে দলীয় ও সাংগঠনিক তৎপরতা দৃশ্যমান করাই এখন দলীয় প্রধানের লক্ষ্য।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে তৃণমূলে সংগঠন গোছাতে তৎপরতা বাড়াচ্ছে আওয়ামী লীগ। দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী জুনের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-মহানগর, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দলকে ঐক্যবদ্ধ করাই এখন দলটির অন্যতম লক্ষ্য।
এদিকে, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হার কমতে শুরু করেছে। ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচিও এগিয়ে নিচ্ছে ক্ষমতাসীন সরকার। মহামারির প্রথম বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করেছিল সরকার। ইতোমধ্যে প্রায় তিন চতুর্থাংশ মানুষকে অন্তত এক ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এছাড়া অর্ধেকেরও বেশি মানুষ দুই ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছেন। একইসঙ্গে বুস্টার ডোজ কর্মসূচিও জোরেশোরে চলমান রয়েছে। মহামারির প্রথম বছর বাংলাদেশে দক্ষিণ আফ্রিকা ও যুক্তরাজ্যের দু’টি ভ্যারিয়েন্ট দাপিয়ে বেড়ালেও ২০২১ এর মাঝামাঝি থেকে প্রাণঘাতী ‘ডেল্টা এবং পরের দিকে আসা ‘ওমিক্রন’ ভ্যারিয়েন্টের আগ্রাসন নতুন করে ভাবিয়ে তোলে। তবে বর্তমানে করোনা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। আসছে দিনগুলোতে করোনার নতুন কোনো শঙ্কা দেখা না দিলে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎ বা বৈঠকের বিষয়টি সীমিত পরিসর থেকে ধীরে ধীরে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলীয় সভাপতি।
এ বিষেয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক সারাবাংলাকে বলেন, ‘মেয়াদোত্তীর্ণ হলেই সংগঠনের সম্মেলন হওয়া স্বাভাবিক। না হওয়াটাই অস্বাভাবিক। তবে গত দুই বছর দেশের পরিস্থিতি ছিল অস্বাভাবিক। বাংলাদেশসহ পুরোবিশ্ব করোনার ছোবলে তছনছ হয়ে গেছে। এখন দেশের করোনা পরিস্থিতি বলতে গেছে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সেজন্য আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করে আমাদের মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সম্মেলনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।’
আগামী নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন হবে কি না, বা এই কমিটিই দায়িত্ব পালন করবে কি না— তা নিয়ে বিভিন্ন গুঞ্জন রয়েছে। এ বিষেয় নানক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কিন্তু সম্মেলনের ব্যাপারে কোনো কম্প্রোমাইজ করে না। এখন সারাদেশের জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের সম্মেলন করা হচ্ছে। কারণ, সংগঠনই হলো আমাদের মূল শক্তি। আমার সেই জায়গাকে গুরুত্ব দিই। আর গুরুত্ব দিই বলেই জাতীয় নির্বাচনের আগে সংগঠনকে ঢেলে সাজানো ও মজবুত করাই আমাদের লক্ষ্য। এ ব্যপারে মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মেনেই সবাই কাজ করছেন। তিনি চলতি মাস থেকেই দলীয় নেতাদের সঙ্গে সরাসারি এবং মাঠ পর্যায়ে আরও যোগাযোগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে পারেন।’
দলীয় সূত্র মতে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি নির্বাচনের আগে যেকোনো মূল্যে রাজনৈতিক কর্মপরিধি বাড়াতে চান আওয়ামী লীগ সভাপতি। তাই এবার রাজনীতির মাঠের কর্মকৌশল নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নিতে ১৪ দলের সভা ডেকেছেন। ১৫ মার্চ সকাল সাড়ে ১১টায় জোটনেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠেয় গুরুত্বপূর্ণ এ বৈঠকে ১৪ দলীয় জোটের শরিক নেতারা ছাড়াও আওয়ামী লীগের কয়েক জন নেতা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।
করোনা বিধিনিষেধের কারণে গণভবনে নির্দিষ্ট কয়েকজন ছাড়া অন্যান্য কর্মকর্তাদের যাতায়াতে বিধিনিষেধ ছিল। সেই বিধিনিষেধও গত ১৩ মার্চ থেকে শিথিল হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তাসহ অন্যান্য অনেকেই চলতি মার্চ থেকে গণভবনে নিয়মিত যাতায়াত করবেন বলে জানা গেছে। মূলত ভার্চুয়াল থেকে সরাসরি বা ফেস টু ফেস যোগাযোগ বৃদ্ধি করে সরকারের পাশাপাশি দলীয় কর্মকাণ্ডকে আরও জোরদার করার লক্ষ্যেই এমন পদক্ষেপ নিচ্ছেন শেখ হাসিনা।
এছাড়া মুজিববর্ষে ঢাকার বাইরে এবারই প্রথম জনসমাগমে সরাসরি কোনো কর্মসূচিতে অংশ নিতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির ব্যবস্থাপনায় ‘টুঙ্গিপাড়া: হৃদয়ে পিতৃভূমি’ কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। জাতির পিতার স্মৃতি বিজড়িত গোলাপগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় এ কর্মসূচি পালন করা হবে। এছাড়া মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত টুঙ্গিপাড়ায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাত দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করবে।
অন্যদিকে, সরকারি কর্মসূচির মধ্যে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী এলাকায় নির্মিত এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি আগামী ২১ মার্চ সরাসরি উদ্বোধন করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব হলো সংগঠনকে গোছানো এবং গতিশীল করা। আমাকে যে বিভাগে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেই বিভাগে সমস্ত জেলা এবং উপজেলার সম্মেলন শেষ করব আগে। যা বর্তমানে চলমান। এরপর প্রতিটি নির্বাচনি এলাকায় তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে দলকে ঐক্যবদ্ধ এবং গতিশীল করব। আমাদের টিমের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে মতবিনিময় করব।’ বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে করোনাকালেও যোগাযোগ অব্যাহত ছিল এবং এখনো আছে বলে জানান তিনি।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম