দেশের যেটায় মঙ্গল, সেটাই আমরা করব: প্রধানমন্ত্রী
১৪ মার্চ ২০২২ ২২:৩৮
ঢাকা: দেশের উন্নয়নের স্বার্থে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার পরামর্শ এড়িয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি সরকারে আসার পর ওই সমস্ত পরামর্শ শুনি নাই। শুধু একটা কথা বলেছি, দেশ আমাদের, আমরা এই দেশ স্বাধীন করেছি। এদেশের মানুষ আমাদের। মানুষের মঙ্গল কিসে হবে সেটা আমরাই সব থেকে ভালো জানি। কোনো একটা সংস্থার একজন অফিসার এসে কী বলবে, তারা আমাদের দেশের কতটুকু চেনে? কাজেই দেশের যেটায় মঙ্গল, সেটাই করব।
সোমবার (১৪ মার্চ) সন্ধ্যায় স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের মূল উদ্দীপক ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা উপলক্ষে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) আয়োজিত ‘জয় বাংলা’ শীর্ষক উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি হোটেল শেরাটন প্রান্তে যুক্ত ছিলেন।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান (সালমান এফ রহমান) অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
১৯৭৫’র ১৫ আগস্টের পর তার দেশে ফেরা ও পরবর্তী সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ফিরে এসেও কত কথা শুনতে হয়েছে। ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে যেয়ে আমাদের নেতাকর্মীরা জীবন দিয়েছেন। ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ ছিল। বাজানো যাবে না। এই ৭ মার্চের ভাষণ বাজাতে গিয়েও কিন্তু আমাদের অনেক নেতাকর্মী জীবন দিয়েছেন। আর আজকে ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কো স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্য প্রামাণ্য দলিলে।
সরকারের মেয়াদে প্রতিটি খাত বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে তিনি আরও বলেন, এই ব্যাংক-বীমা যখন আমি ব্যাপকভাবে করতে শুরু করলাম তখন অনেক বাধা এসেছে। অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা বলেছে বাংলাদেশে এত বেসরকারি ব্যাংক দিয়ে কী হবে? ব্যাংক তো লাভজনক হয় না বরং সরকারি ব্যাংকের শাখা বন্ধ করে দেওয়া হবে। এধরনের পরামর্শও কিন্তু বাংলাদেশে দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে খাদ্য উৎপাদন বা খাদ্যে গবেষণা করা বা বীজ উৎপাদন, সেখানেও বাধা দেওয়া হয়েছে। এমনকি সরকারি বাস চলাচল করবে, সেখানেও বাধা। সেখানেও বন্ধ করা।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর চাপের মুখে বিগত সরকারগুলোর দুর্বলতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখন যারা সরকারে ছিল, তারা এতোই দুর্বল ছিল; ওই আন্তর্জাতিক সংস্থা যাই পরামর্শ দিত, তাই তারা মেনে চলত। নিজেদের যে একটা উদ্যোগ থাকবে, চিন্তাচেতনা থাকবে। একটা পরিকল্পনা থাকবে, সেটা কিন্তু ছিল না।
তার সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে ব্যাংক, বীমা থেকে শুরু করে বেসরকারি প্লেন, টেলিভিশন, রেডিও, মোবাইল ফোন সবার হাতে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। যা এখন আপনাদের ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা যারা ব্যবসা বাণিজ্য করেন। যারা শিল্প-কলকারখানা করেন। তাদেরকে সবসময় একথাটা বলেছি, আপনার উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে হবে। কতটুকু আমরা বিদেশে রফতানি করতে পারব। আমার নিজের দেশে বাজার সৃষ্টি করতে হবে। আর বাজার সৃষ্টি করতে হলে আমার দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়াতে হবে। সেই ক্রয়ক্ষমতাটা আমি তখনই বাড়াতে পারব, যখন এদেশের মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা আসবে। এদেশের মানুষের ক্রয় করার মতো একটা সুযোগ সৃষ্টি হবে। তার সেই অর্থনৈতিক শক্তিটা সে অর্জন করতে পারবে, তখনই তো আমার নিজ দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবে। আমরা এখানে ব্যবসা করতে আসিনি। তাদের সেই সুযোগটা সৃষ্টি করে দিতে হবে, যেন আমার দেশের মানুষ লাভবান হয়। মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়ে।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের মেয়াদে দেশের মানুষের আর্থসামাজিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে নানামুখী পদক্ষেপের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এই মর্যাদা পাওয়ায় আপনাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ করার সুবিধা হচ্ছে, একটু সুযোগ হচ্ছে।
সারাবাংলা/এনআর/এএম
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার পরামর্শ