Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নদী রক্ষায় কমিশনকে নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়ার আহ্বান

স্টাফ করেস্পন্ডেন্ট
১৪ মার্চ ২০২২ ২৩:২২

ঢাকা: দেশের ৩৫ হাজার কিলোমিটারের নদীপথের এখন মাত্র ১ হাজার ৮০০ কিলোমিটার অবশিষ্ট রয়েছে। এখনই যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে এই অবশিষ্ট পথও বিলীন হয়ে যাবে। দেশে নদী রক্ষার অনেক আইন আছে, কিন্তু তা বাস্তবায়নের ঘাটতি রয়েছে। তাই নদী রক্ষায় কমিশনকে নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার।

সোমবার (১৪ মার্চ) আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস (International Day of Action for Rivers)-২০২২ উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। নদী দিবস উপলক্ষে বুড়িগঙ্গা ব্রিজের নিচে (বছিলা পুরাতন বিদ্যালয় মাঠে) ‘নদীকে নদীর মতো রাখার দাবিতে’ প্রতীকী কাগজের নৌকা ও কলার ভেলা ভাসানো কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রায় ৩০টি নদী ও পরিবেশ প্রেমী সংগঠন অংশ নেয়। ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার প্রতীকী কাগজের নৌকা ও কলার ভেলা ভাসানো কর্মসূচি উদ্বোধন করেন।

বিজ্ঞাপন

বাপা’র সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিলের সভাপতিত্বে এবং সঞ্চালনায় আয়োজনটিতে অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত থেকে সংহতি জানান বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনের সমন্বয়ক মিহির বিশ্বাস, গ্রিন ভয়েজের মুখ্য সমন্বয়ক আলমগীর কবির, নিরাপদ ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা, ক্লিন রিভার বাংলাদেশ’র প্রধান নির্বাহী সোহাগ মহাজন, নদী অধিকার মঞ্চ’র নির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন, বারোগ্রাম উন্নয়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসাইন, বছিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, নিরাপদ চিকিৎসা চাই’র মহাসিচব উম্মে সালমা, শিশুদের মুক্ত বায়ু সেবন সংস্থার সহ-সম্পাদক সেলিম হোসেন এবং বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের কোষাধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন আহমেদসহ অংশগ্রহণকারী সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা।

বিজ্ঞাপন

ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘আমরা শিল্পায়ন চাই, কিন্তু শিল্পায়ন করতে গিয়ে দেশের নদ-নদী ও পরিবেশকে ধ্বংস করা হবে এ ধরনের শিল্পায়ন কখনই চাই না। গুটি কয়েক লোকের স্বার্থে দেশের নদী ও পরিবেশ আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এই ধরণের জঘন্য কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের ক্রিমিনাল অ্যাক্টের আওতায় এনে শাস্তির বিধান চালুর দাবি করতে হবে। ক্রাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে অসমাপ্ত উচ্ছেদ কর্মকাণ্ড ফের চালু, পানি আইন দ্রুত বাস্তবায়ন এবং সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে সৎ ও যোগ্য জনবল নিয়োগ দিয়ে নির্বিগ্নে কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।’

নদী দখলকারী ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আজ আপনি বড় ব্যবসায়ী আছেন, কাল নাও থাকতে পারেন। আজ আপনি নদী দখল করছেন, কাল হয়তো আপনি থাকবেন না। কিন্তু আপনার পরবর্তী প্রজন্ম থেকে যাবে, যারা এই নদীর কাছ থেকে মাছ পাবে, অক্সিজেন পাবে, নদীর বায়ো ডাইভার্সিটির মাধ্যমে প্রাপ্ত সম্পদ আহরণ করবে। নদীর পাশে কারখানা করার তো দরকার নেই। নদী থেকে একটু সরে যেয়ে করলেও তো হয়।’

তিনি বলেন, ‘শুধু নদী নয়, খালও উদ্ধার করতে হবে। নদীর পাশাপাশি খালকেও দখলের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। প্রয়োজনে তারকাটা দিতে হবে। একটি নদীর পানি আছে কি নাই, সেটি দখলে চলে গেছে কি না তা দেখার দায়িত্ব জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে ডিজিএলআর, ল্যান্ড মিনিস্ট্রি, ওয়াটার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড ও পানিসম্পদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের। জেলা প্রশাসক নদীর ভূমির মালিকানা দেখলেও পানিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব এতে পানি আছে কি নাই, কেন নাই সেটা পর্যবেক্ষণ করা ও সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া। অনেকেই আছে যারা সততার সঙ্গে কাজ করতে চায়। সেসব কর্মকর্তাদের এসব জায়গায় নিয়োগ দিতে হবে।’

এ সময় তিনি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের আইন পাসের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘এতে নদী দূষণের শিকার হলে যেকোনো মানুষ মামলা করতে পারবেন।‘

সভাপতির বক্তব্যে শরীফ জামিল বলেন, ‘নদীমাতৃক এই দেশে টিকে থাকা ও অগ্রগতির অন্যতম পূর্বশর্ত নদীর সংরক্ষণ ও উন্নয়ন। অথচ আজ একটি ব-দ্বীপ অঞ্চলের নদী, খাল, প্লাবন অঞ্চল ও অন্যান্য জলাশয় সম্পূর্ণরুপে বিলীন হতে চলেছে। সঠিকভাবে নদীর সীমানা চিহ্নিত না করে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করার মাধ্যমে দখলদারদের বৈধতা দেওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরী নদী ও নদীসমূহের সাথে সম্পৃক্ত খাল, প্লাবন অঞ্চল ও জলাশয়সমূহ বেপরোয়াভাবে ভরাট করে আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠেছে। পানিতে শীতকালে কোনো দ্রবীভূত অক্সিজেন থাকে না। তাই কোন প্রাণের অস্তিত্বও পাওয়া যায় না।’ এসময় তিনি নদী রক্ষায় আইনসম্মত, সমন্বিত ও স্বচ্ছ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।

মিহির বিশ্বাস সংহতি বক্তব্যে বলেন, ‘নদীকে মেরে নগরায়ন চাই না। যারা নদীগুলোকে দখল ও দূষণের মাধ্যমে গ্রাস করছে তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে।’ আলমগীর কবির নদীগুলোকে দখল ও দূষণমুক্ত করে প্রবাহমান করার দাবি জানান। ইবনুল সাঈদ রানা বলেন, ‘ঢাকার চারটি নদী কেন আজ ওয়েস্ট ডিস্পোজালে পরিণত হয়েছে সেটি খুঁজে বের করতে হবে। এর পেছনে যারা জড়িত তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘দেশের নদী ও পরিবেশ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য দেশের স্কুল পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। প্রয়োজনে তাদের এসংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে হবে।’

এছাড়াও দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) আঞ্চলিক শাখার উদ্যোগে এদিন বগুড়া, নওগাঁ, জয়পুরহাট, রাজশাহী, চাটমোহর, পাবনা, ডিমলা, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ ভালুকা, যশোর, নড়াইল, খুলনা, বরিশাল, কক্সবাজার, মোংলা ও মহেশখালীতে ভিন্ন ভিন্ন ইস্যুতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়।

সারাবাংলা/আরএফ/পিটিএম

নদী-রক্ষা বাপা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর