Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যেমন গেল ফ্রিল্যান্স আর্টিস্টদের বইমেলা

আসাদ জামান
১৫ মার্চ ২০২২ ০০:০৬

অমর একুশে বইমেলার সঙ্গে দমকা হাওয়া ও ঝড়বৃষ্টি একটা নিবিড় সম্পর্ক আছে বৈকি! বিগত দশ বছরের রেকর্ড ঘাটলে দেখা যাবে- ফেব্রুয়ারির ১ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত এক বা একাধিকবার দমকা হাওয়া ও ঝড়বৃষ্টির কবলে পড়েছে বইমেলা, ভেঙে গেছে স্টল, ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে প্যাভিলিয়ন, ভিজে গেছে বই।

একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলা সম্প্রসারণ করার পরের বছর হাজার হাজার বই নষ্ট হয়েছিল ঝড়-বৃষ্টির কবলে পড়ে। আর গত বছর ১৮ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বইমেলাকে বেশ কয়েকবার আলিঙ্গন করে গেছে কালবৈশাখী। ওই সময় আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়ে মেলা কর্তৃপক্ষের কাছে ‘কোটি টাকা’ ক্ষতিপূরণও দাবি করেছেন প্রকাশকেরা।

বিজ্ঞাপন

হঠাৎ কেন দমকা হাওয়া বা ঝড়বৃষ্টির প্রসঙ্গ এলো?- প্রসঙ্গটা এলো এ জন্যই যে, ঈদ, সংসদ নির্বাচন ও শারদীয় দুর্গোৎসবরে পর আমাদের জাতীয় জীবনে সবচেয়ে কর্মযজ্ঞ অমর একুশে বইমেলা। এটাকে সফল করতে যতগুলো সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হয়, যতগুলো অনুষঙ্গ এর সঙ্গে যুক্ত হয়, তা কেবল ঈদ-নির্বাচন-পূজা ছাড়া অন্য কোথাও দেখা যায় না।

এই যেমন ধরুন- এবারের বইমেলাতেও ‘মূল মঞ্চ’, ‘ভাষা শহিদ উন্মুক্ত মঞ্চ’ মোড়ক উন্মোচন মঞ্চ, ‘লেখক বলছি মঞ্চ’, একাধিক তথ্যকেন্দ্র ও মিডিয়া সেন্টার নির্মাণ। মেলায় গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি-ইন্টারনেট-ওয়াইফাই সংযোগ, গেট ও তোরণ নির্মাণ, ডিসপ্লে বোর্ড ও ডিজিটাল বিলবোর্ড তৈরি, অস্থায়ী মসজিদ নির্মাণ, ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার তৈরি, একাধিক আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি- সর্বোপরি মেলার চারদিকে নিরাপত্তা প্রচাীর নির্মাণের মতো ব্যয়, সময় ও শ্রমসাপেক্ষ কাজ সাফল্যের সঙ্গেই সম্পন্ন করেছে মেলা কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু ঝড়বৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে সবকিছু যখন তছনছ হয়ে যায়, তখন সমালোচনা ছাড়া কপালে আর কিছু জোটে না মেলা কর্তৃপক্ষের। সেসব দিক বিবেচনায় রেখেই এবারের বইমেলার স্থাপনাগুলো শক্ত কাঠামোর ওপর দাঁড়া করানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছে তারা। যেমন- মেলার সোহরায়ার্দী উদ্যানে মোড়ক উন্মোচন মঞ্চ রীতিমতো স্টিলের কাঠামোর ওপর দাঁড় করানো হয়েছে। ছোট-খাটে ঝড়ুহাওয়া এই স্থাপনাকে তেমন কিছু করতে পারবে বলে মনে হয় না।

পুরো মেলায় এ রকম অসংখ্য ‘ভলো কাজ’ চোখে পড়েছে এবার। এই ‘ভালো’র মিছিলে যোগ হয়েছিল ফ্রিল্যান্স আর্টিস্টদের জন্য চমৎকার একটা লোকেশন নির্দিষ্ট করে দেওয়া।

মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানাংশে শিল্পকলা একাডেমির যে উন্মুক্ত মঞ্চ তার পাশেই ফ্রিল্যান্স আর্টিস্ট মো. নিয়াজ, মো. রতন মৃধা, মো. ওবায়দুল ইসলাম, বিশ্বনাথ ধর, রাজু সাহা, আজিজুর রহমান লিয়ন, এম এ আজিজ, তরুণ কান্তি সরকার, মিজানুর রহমান, শাহ আলম ও পার্থ রায়ের জন্য জায়গা নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল মেলা কর্তৃপক্ষ। এই ১১ জন আর্টিস্ট মেলার পুরো সময়টাতে আগ্রহী দর্শকদের পোর্ট্রেট বা স্কেচ করে দিয়েছেন পারিশ্রমিকের বিনিময়ে।

অবশ্য এই শিল্পীরা তাদের শিল্পকে পারিশ্রমিকের নিক্তিতে মাপতে চান না। বরং শিল্পী সত্ত্বাকে বাাঁচিয়ে রাখতে নিয়মিত চার্চার অংশ হিসেবে পেন্সিল, রং, তুলি, ছুড়ি-কাঁচি নিয়ে বসে যান মেলায়। পরম যত্নে এঁকে দেন আগ্রহীদের স্কেচ বা পোর্ট্রেট।

কিন্তু এই বসে যাওয়াটাকেও একটা নিয়মের মধ্যে আনতে মেলা কর্তৃপক্ষ একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে আসার নির্দেশ দেন তাদের। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১৮ সাল থেকে লিখিত আবেদনের মধ্য দিয়ে বসার জায়গা পেয়ে থাকেন ফ্রিল্যান্স আর্টিস্টরা। ফলে যে কেউ এসে মেলায় ছবি আঁকার জন্য বসে পড়তে পারেন না। একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয় সবাইকে।

এবার কেমন গেল মেলা? এই প্রশ্নটা করা হয়েছিল ফ্রিল্যান্স আর্টিস্ট এম এ আজিজ, বিশ্বনাথ ধর ও মিজানুর রহমানকে। তিন জনেরই সরল উত্তর- গত দু’বারের চেয়ে ভালো গেছে। করোনার কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে তেমন কিছুই করতে পারেননি তারা। এবার মোটামুটি ভালো গেছে তাদের।

আর্টিস্ট মিজানুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘মানুষ যত শিক্ষিত হবে, রুচিবোধ সম্পন্ন হবে, নন্দনপিয়াসী হবে ততই এ শিল্পের প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়বে। ডিজিটাল যুগে এসে ছবি তোলা, সংরক্ষণ করা সহজলভ্য হলেও দিন দিন স্কেচের প্রতি মানুষে আগ্রহ বাড়ছে। দশ বছর আগেও আমরা মানুষের মধ্যে এই আগ্রহটা দেখিনি।’

 

ফ্রিল্যান্স আর্টিস্টদের সঙ্গে কিছু সময় খোশ-গল্পে কাটানোর পর যথারীতি মেলার মূলমঞ্চের দিকে যাত্রা। সেখানে ছিল ‘ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্: বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের আলোকবর্তিকা এবং ড. মুহম্মদ এনামুল হক: জীবন ও সৃজন’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। হাকিম আরিফ এবং সৌরভ সিকদারের প্রবন্ধের ওপর আনোয়ারুল হক, ললিতা রানী বর্মন এবং মাসুদ রহমানের আলোচনা বেশ ভালোই লাগল। সভাপতির ব্ক্তব্যে সৈয়দ আজিজুল হকের নাতিদীর্ঘ আলোচনায় বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের দুই দিকপাল ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও ড. মুহম্মদ এনামুল হককে নতুন করে চেনার সুযোগ করে দিল।

সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ আজিজুল হক বলেন, ‘ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ এবং ড. মুহম্মদ এনামুল হক জ্ঞানসাধনা ও চর্চায় একনিষ্ঠ ছিলেন সারাটি জীবন। বাংলা ভাষা গবেষণা ও উন্নয়নে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। জাতিকে যথাযথ শিক্ষায় শিক্ষিত করা এবং সংস্কৃতি বিনির্মাণে তাদের ভূমিকা প্রাতঃস্মরণীয় হয়ে থাকবে।’

লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজের বই নিয়ে আলোচনা করেন অনিকেত শামীম এবং রেজাউদ্দিন স্টালিন। কবিতা পাঠ করেন কবি রুহুল মাহবুব, সাঈদ তপু, সাবেদ আল সাদ এবং লুৎফর চৌধুরী। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী তারেক আলী, মাহফুজা আক্তার মিরা, আফরোজা কণা এবং শাহীন।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘প্রাকৃতজন’, অমিত হিমেলের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সমস্বর’ এবং আবদুল্লাহ বিপ্লবের পরিচালনায় ‘ঘাসফুল’র পরিবেশনা। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন জয় প্রসাদ সিংহ রায় (তবলা), মো. মামুনুর রশিদ (বাঁশি)।

মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) অমর একুশে বইমেলার ২৯তম দিন। মেলা চলবে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘ভাষাসংগ্রামী অজিত কুমার গুহ: জীবন ও কর্ম শীর্ষক’ আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন হাসান ইমাম মজুমদার। আলোচনায় অংশ নেবেন মোহাম্মদ জয়নুদ্দীন এবং রাজীব সরকার। সভাপতিত্ব করবেন বেগম আকতার কামাল।

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

টপ নিউজ ফ্রিল্যান্স আর্টিস্ট বইমেলা ২০২২

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ভারত থেকে ফিরলেন ৯ বাংলাদেশি তরুণী
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:২৩

আজ জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেবেন ড. ইউনূস
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:০৪

সবজি-মুরগির বাজার চড়া, অধরা ইলিশ
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:১০

সম্পর্কিত খবর