Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিপিসির লোকসান দৈনিক ৮০ কোটি টাকা

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৫ মার্চ ২০২২ ১০:১৫

ঢাকা: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে ব্যারেল প্রতি ১৩৯ ডলারে গিয়ে ঠেকেছিল। যা গত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। টানা দুই সপ্তাহ দাম বাড়তে বাড়তে সোমবার (১৪ মার্চ) হঠাৎ বড় দরপতনের মধ্য দিয়ে ক্রুড অয়েল বা অপরিশোধিত তেলের দাম ১০০ ডলারের কাছাকাছি নেমে এসেছে। এই খবর কিছুটা স্বস্তির হলেও বাড়তি দামের যে প্রভাব বাংলাদেশের ওপরে পড়েছে, তা বহন করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে সরকারের পক্ষে।

বিজ্ঞাপন

দেশের তেল সরবরাহকারী একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসির) লোকসান এই কয়েকদিনে দৈনিক ১৫ কোটি টাকা থেকে ৮০ কোটিতে পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতিতে জ্বালানিতে সরকারের ভুর্তুকি বাড়ানোর বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, দেশে বছরে প্রায় ৬০ লাখ টন জ্বালানির চাহিদা রয়েছে। যার পুরোটাই আমদানি করতে হয়। এরমধ্যে ১৫ লাখ টন অপরিশোধিত তেল কিনে এনে দেশে পরিশোধন করা হয়। আর ডিজেল, অকটেন, পেট্রোলসহ বাকি ৪৫ লাখ টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়। কুয়েত, মালয়েশিয়া, চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিশ্বের ৮টি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বিপিসিকে তেল সরবরাহ করে থাকে।

সূত্রে জানা যায়, সাধারণত আন্তজার্তিক বাজারে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ৯২ ডলারের বেশি উঠে গেলে বিপিসিকে লোকসান গুনতে হয়। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে ওই ৯২ ডলারের গণ্ডি দুই সপ্তাহ আগেই পেরিয়েছে। যে কারণে আগে থেকে লোকসানে থাকা বিপিসির লোকসানের বোঝা আরও বেড়েছে। জানা যায়, আগে দৈনিক ১৫ কোটি টাকা জ্বালানি সরবরাহে লোকসান দিতে হতো বিপিসিকে। যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ কোটিতে।

এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সোমবার (১৪ মার্চ) এক মিট দ্যা প্রেসে সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি বলেন, গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্ববাজারে তেলের দাম ওঠানামা করছে। তবে রাশিয়ার ইউক্রেন হামলাকে কেন্দ্র করে তেলের বাজার যে অস্থির হয়েছে, তার প্রভাব বেশ খারাপভাবে পড়েছে বাংলাদেশে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৬৫ ভাগ হয় তেল থেকে। বিপিসি এখন দৈনিক লোকসান গুনছে ৮০ কোটি টাকা। সেই হিসেবে মাসে লোকসান প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। এই বিশাল অংক লোকসান যদি একটা প্রতিষ্ঠানই দিতে থাকে তাহলে কিভাবে সম্ভব। এদিকে জ্বালানির দাম বাড়াতে বাংলাদেশ রেগুলেটরি কমিশন- বিইআরসিতে সুপারিশ জমা দিয়ে রেখেছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। যার শুনানি ২৫ মার্চ।

এ প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, শুনানি হলেই তো দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। আমরা চাই যতদিন সম্ভব দাম না বাড়িয়ে ভর্তুকির পরিমান বাড়ানো। আমরা গত বছর যে পরিকল্পনা করেছিলাম তার থেকে জ্বালানি খাতে অনেক বেশি অর্থের প্রয়োজন হবে। এখন গোটা বিষয়টা সরকারের ওপর নির্ভর করছে।

জানা যায়, জ্বালানি তেল উৎপাদনে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের পর তৃতীয় বৃহত্তম দেশ হলো রাশিয়া। দেশটি প্রতিদিন প্রায় ৫০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল রফতানি করে। এই তেলের অর্ধেকের বেশি বিক্রি হয় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে।

আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের তথ্যমতে, ইউক্রেনে হামলার পর থেকেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল তেলের দাম। টানা দুই সপ্তাহ তেলের দাম বাড়তে বাড়তে অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১৩৯ ডলারে পৌঁছায়। তবে ১৪ মার্চ হঠাৎ দাম কমে ব্যারেল প্রতি ১০২ ডলারে নেমে আসে।

বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, ডিজেলে প্রতি লিটারে ১৩ থেকে ১৫ টাকা এবং অকটেনে লিটার প্রতি ৬ থেকে ১০ টাকা করে লোকসান দিতে হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির সরবরাহ সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, মূলত বিশ্ববাজারে ডিজেলের দামের সঙ্গে আমদানি কর, বন্দর ব্যয়, কোম্পানি কমিশন, পরিবহন ব্যয়, অপারেশন ও হ্যান্ডলিং লসসহ অন্যান্য লোকসান মিলিয়ে ডিজেলের বিক্রয়মূল্য হিসাব করা হয়। তিনি বলেন, বিপিসি এমনিতেই লোকসানে। আন্তজার্তিক বাজারে গত একবছর ধরে জ্বালানির দাম ওঠানামার কারণে বিপিসির লোকসান দৈনিক ১৫ কোটি টাকায় ঠেকেছিল। কিন্তু গত বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার কারণে তা অনেক বেশি বেড়ে গেছে।

বিশ্ববাজারে যখন জ্বালানি তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৮৫ ডলার ছিল তখন অর্থাৎ ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর দেশের বাজারে কেরোসিন ও ডিজেলে লিটার প্রতি ১৫ টানা দাম বাড়িয়ে দেয় সরকার। তখন আন্তজার্তিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে দাম বাড়ানো হয়েছিল। যার প্রেক্ষিতে দেশের সকল পর্যায়ের গণপরিবহনের ভাড়া সমন্বয় করতে হয়েছে। প্রভাব পড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজারে।

বিপিসির তথ্যমতে, বাজারে বর্তমানে ডিজেল ৮০ টাকা, কেরোসিন ৮০ টাকা, অকটেন ৮৯ টাকা, পেট্রোল ৮৬ টাকা বিক্রি করছে সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম ও যমুনা অয়েল কোম্পানি। এ প্রসঙ্গে বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামের ঊর্ধ্বগতিতে উদ্বেগ জানিয়া বলেন, আমরা বিশ্ব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি এবং সরকারকে এর অগ্রগতি তুলে ধরছি। জ্বালানি তেলের সরবরাহ যাতে কোনোভাবেই ব্যাহত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। তবে খুচরা পর্যায়ে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে এখনো চিন্তা করা হয়নি।

সারাবাংলা/জেআর/এএম

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

কানপুরে প্রথম দিনে বৃষ্টির দাপট
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৩৫

সম্পর্কিত খবর