দ্বাদশের মাঠেও ঐক্যবদ্ধ থাকার অঙ্গীকার ১৪ দলের
১৫ মার্চ ২০২২ ২০:২৫
ঢাকা: আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের নেতারা বলেছেন, আগামী নির্বাচনেও ১৪ দল ঐক্যবদ্ধ থাকবে। নির্বাচনের আগে অন্য কোনো দল এলে জোটের পরিসর বাড়তে পারে। না এলে ১৪ দলীয় জোট ঐক্যবদ্ধ থেকেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মাঠে সক্রিয় থাকবে।
মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) গণভবনে সকাল সাড়ে ১১টায় ১৪ দলীয় নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জোটনেত্রী আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রায় টানা ৪ ঘণ্টা এই বৈঠক হয়। সাড়ে ৩ টায় বৈঠক শেষ হয়।
প্রায় তিন বছর পর ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘদিন পর জোটনেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে সামনা-সামনি পেয়ে নিজেদের ক্ষোভ-অভিমান-অভিযোগ ও করণীয় তুলে ধরলেন ক্ষমতাসীন শরিক নেতারা। জোট নেতাদের স্বভাবসুলভ আশ্বাস-আস্থায় বিগত দিনের ঐক্যবদ্ধ পথচলায় আগামী দিনেও আদর্শিক লড়াইয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে নিরাশ করেননি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জোট নেত্রী শেখ হাসিনা।
জোটের একাধিক নেতা জানান, আগামী নির্বাচনও কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় জোট যুগপৎভাবে করবে এমনটাই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছেন। সামনে যেকোনো রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় ১৪ দলীয় জোটের কর্মপন্থা ঠিক করা, জোটকে আরও সক্রিয় করার বিষয়ে বিভিন্ন নির্দেশনা ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া আলোচনায় উঠে আসে সম্প্রদায়িকতা, হেফাজতের তাণ্ডব, সমসাময়িক দ্রব্যমূল্যসহ বিভিন্ন ইস্যু।
১৪ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় সারাবাংলার সঙ্গে। নেতারা জানান, মূল কথা ছিল আমাদের যে আদর্শিক জোট বহাল আছে, সেই জোটকে সামনে আরও সক্রিয় করা। আগামী নির্বাচন ১৪ দলীয় জোট ঐক্যবদ্ধ থাকবে। নির্বাচনের আগে অন্য কোনো দল এলে আসবে। না এলেও ১৪ দলীয় ঐক্যবদ্ধ থেকেই যেকোনো আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে থাকবে।
শরিক জোটের এক নেতা বলেন, ‘আমরা বলেছি ১৪ দলীয় যে জোট সেটি আদর্শিক জোট। দীর্ঘ দিন এই জোট সক্রিয় নেই। জোট থাকলেও কোনো কার্যক্রম নেই। কিছু দিন আগে হেফাজত যে তাণ্ডব চালিয়েছে সেটি প্রতিহত করতে ১৪ দলীয় জোট কোনো ভূমিকা রাখেনি।’
বৈঠকে আরেক নেতা বলেন, ‘আমরা জোটগতভাবে নির্বাচন করলাম। এরপর বিজয়ী হয়ে আমাদের বিরোধী বানিয়ে দিলেন। দূরে ঠেলে দিলেন। আবার বিরোধী হয়েও ৭২ অনুচ্ছেদের কারণে সঠিকভাবে ভূমিকা রাখতে পারছি না।’
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘গত নির্বাচনের পর এক প্রেক্ষাপটে আপনাদের বিরোধীদল হিসেবে শক্তিশালী হতে বলেছিলাম। পরবর্তী সময়ে আমাদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামীতে বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে।’
এক নেতা জানান, স্বাধীনতাবিরোধী জোট বিএনপি-জামায়াতকে মোকাবিলা করার জন্য ১৪ দলীয় জোট সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখবে বলে বৈঠকে সবাই একমত হয়েছেন। এছাড়া আগামী নির্বাচন জোটগতভাবেই হবে বলে সবাই একমত হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ১৪ দলীয় জোট নেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, ফজলে হোসেন বাদশা, জাসদের হাসানুল হক ইনু, শিরিন আকতার, সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া, তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় নেতারা।
উল্লেখ্য, বিএনপি জামায়াতের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যে এবং সাম্প্রদায়িকতা শক্তির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ২৩ দফার ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ১৪ দলীয় জোট। ২০০৮ সাল থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জোটগতভাবে আসন ভাগাভাগি করে নির্বাচনে অংশ নেয় জোটের শরিকরা। নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত সরকারে শরিকদের প্রতিনিধিত্ব থাকলেও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর গঠিত সরকারে প্রতিনিধিত্ব নেই শরিকদের।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম