‘মজুত তেলের কোথাও হোল্ডিং হচ্ছে কি না?’
১৫ মার্চ ২০২২ ২০:৫৯
ঢাকা: ভোজ্যতেলের দাম নিয়ে মন্ত্রিপরিষদে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে ১৪ দলের কেন্দ্রীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’তেল নিয়ে যে সমস্যা; সেটা নিয়ে কালকেও ভার্চুয়াল মিটিং করেছি। সেখানে বলে দিয়েছি, একটা টাস্কফোর্স করা হবে। মজুত তেলের কোথাও হোল্ডিং হচ্ছে কি না— তা দেখা হচ্ছে।’
মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) গণভবনে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের ফোরামে তিনি এই সরকারি পদক্ষেপের ব্যাপারে জানান।
তিনি আরও বলেন, ‘ভোজ্যতেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে খুব বেড়ে গেছে, আমাদের যেমন সয়াবিন তেলটা বেশিরভাগই আসে ব্রাজিল থেকে আর পামওয়েলটা আসে মালয়েশিয়া থেকে। তো এই যুদ্ধের কারণে যাতায়াত খরচ, অতিরিক্ত কার্গো ভাড়া, পরিবহনে সমস্যা রয়েছে। কিন্তু, মজুত যেটুকু আছে বা এখন যা হচ্ছে তার ব্যাপারে আমরা খোঁজ নিচ্ছি। কেউ ‘অন্যরকম’ কিছু করছে কি না, তা দেখা হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটাই হয়, দাম বাড়তে দেখলে সবাই মজুত করে, সে বিষয়ে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে খুব বেশি কিছু করার থাকে না। কিছু কমপ্রোমাইজ করতে হয়। রোজার সময় যেন অন্তত দ্রব্যমূল্য সহনীয় থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে।’
ভোজ্যতেলে বাংলাদেশ এখনও ৯০ ভাগ পরনির্ভরশীল জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘রিসার্স ইনস্টিটিউট বারি থেকে অবশ্য কয়েকটা বিজ আবিষ্কার করেছে। খুব ভালো উৎপাদন হবে। ভবিষ্যতে আরও কীভাবে বাড়ানো যায়, সে ব্যাপারে কাজ করতে হবে।’— বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটা জিনিস যেন নিজেরা উৎপাদন করতে পারি, নিজেদের চাহিদা নিজেরা মেটাতে পারি সেরকম অবস্থানে থাকতে হবে। কারও মুখাপেক্ষী হয়ে যেন থাকতে না হয়, সে চেষ্টাটাই করে যাচ্ছি।’
কয়েক বছরের মধ্যে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে পেঁয়াজ রফতানির আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষিবিজ্ঞানীরা খুব ভালো কাজ করেন। সমস্যা শুরুর সঙ্গেসঙ্গেই রিসার্স করে এখন আমরা পেঁয়াজের বিজ উৎপাদন করতে পারছি। সেভাবেই কৃষকদের সবরকম সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।’
বিদেশি বিনিয়োগের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘অন্যান্য খাতেও কিন্তু বিনিয়োগ ভালো। ১০০টা অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি, সেগুলো ভালো সাড়া পাচ্ছে। এখন তো বাংলাদেশে বিনিয়োগ করা নিয়ে অনেকটা ‘কম্পিটিশন’ এসে গেছে। তার জন্য আলাদাভাবে রোড শো করে বিভিন্ন দেশের মানুষকে আকৃষ্ট করে দেশে বিনিয়োগে আহ্বান করা হচ্ছে। ভবিষ্যৎটা যেন ভালো চলে সেই ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।’
তৈরি পোশাক শিল্পেও বাংলাদেশ আগের চেয়ে বেশি অর্ডার পাচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গার্মেন্ট অর্ডার এখন অনেক বেশি আসছে।’
‘আরেকটা সুখবর হলো, মার্চ মাসে আমি পায়রাতে যাবো। ওখানকার বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধনের সঙ্গেসঙ্গে দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দেওয়া হবে। যেসব জায়গায় গ্রিড লাইন দেওয়া যায়নি সেসব জায়গায় সোলার প্যানেল দেওয়া হয়েছে। খুঁটে খুঁটে বের করছি, বিদ্যুতবিহীন কোনো জায়গায়ই নেই। সর্বশেষ পেলাম, গঙ্গাচড়াতে ৭০টা পরিবারের ঘরে বিদ্যুৎ নেই, সেখানে সোলার প্যানেল করে দিয়েছি।’— বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, ‘শতভাগ বিদ্যুৎ আমাদের টার্গেট ছিল, কিছুকিছু দ্বীপ অঞ্চলে সাবমেরিন কেবল দিয়ে লাইন নিয়ে গেছি। যেমন: সন্দ্বীপে নিয়ে গেছি, ভোলার কিছু অঞ্চল, আর তাছাড়া বেশির ভাগ অঞ্চলে তো সোলার প্যানেল দিচ্ছিই। আরও গ্রিড লাইন তৈরি হচ্ছে।’
জ্বালানি গ্যাস নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা সময় বলা হতো, গ্যাসে ভাসে বাংলাদেশ। এখন আর তা না। এখন লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করতে হচ্ছে। যুদ্ধের কারণে সেখানেও একটু সমস্যা হচ্ছে। তারপরও প্রচেষ্টা থাকছে দাম কিছুটা বাড়লেও উন্নয়ন যেন অব্যাহত থাকে।’
বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, ফজলে হোসেন বাদশা, জাসদের হাসানুল হক ইনু, শিরিন আকতার, জেপির আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, শেখ শহিদুল ইসলাম, সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া, তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় ১৪ দলের নেতারা।
সারাবাংলা/এনআর/একেএম