নিপাহ ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা যাচাইয়ে শুরু হচ্ছে গবেষণা
১৫ মার্চ ২০২২ ২২:৫৪
ঢাকা: বিশ্বব্যাপী এখন পর্যন্ত নিপাহ ভাইরাস প্রতিরোধী কোনো অনুমোদিত ভ্যাকসিন নেই। এ প্রেক্ষাপটে নিপাহ ভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা যাচাইয়ে গবেষণা শুরু করতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)।
গবেষণায় নিপাহ সংক্রমণ থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের অংশগ্রহণে ভাইরাসের বিরুদ্ধে মানুষের শরীরের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা হবে। একইসঙ্গে গবেষণাটি প্রয়োজনীয় কিছু টুলস তৈরিতে সাহায্য করবে, যা ভবিষ্যতে সেপি অনুমোদিত এবং অন্যান্য নিপাহ ভ্যাকসিনের ক্লিনিকাল ট্রায়াল ও পর্যালোচনার সহায়ক হবে।
মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) আইসিডিডিআর,বি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এই গবেষণায় অর্থায়ন করবে দ্য কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনস (সেপি)।
আইসিডিডিআর,বি কর্তৃপক্ষ বলছে, যেকোনো ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা যাচাইয়ে ধাপে ধাপে গবেষণা করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে অ্যান্টিবডির মাত্রাও যাচাই করা হয়ে থাকে। সেই অ্যান্টিবডি পরিমাপের জন্য একটি মাত্রা থাকে, যা সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন হতে পারে। গবেষণায় সেই তথ্যগুলো পর্যালোচনা করা হবে। এক্ষেত্রে দেশে নিপাহ সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা ৫০ জনেরও বেশি রোগীর তথ্য পর্যালোচনা করা হবে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া বায়োলজিক্যাল উপাদানগুলো নিপাহ ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা যাচাইয়ে সাহায্য করবে। এসব তথ্য ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু হতে যাওয়া নিপাহ ভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্লিনিকাল ট্রায়ালের জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণার টুলস ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মানদণ্ড উন্নয়নে সহায়ক হবে।
আইসিডিডিআর,বি’র নির্বাহী পরিচালক ডা. তাহমিদ আহমেদ বলেন, ভ্যাকসিন গবেষণায় আমাদের অভিজ্ঞতা পাঁচ দশকেরও বেশি। কলেরা, টাইফয়েড, রোটাভাইরাস, হাম, পোলিও, নিউমোনিয়া ডেঙ্গু, এইচপিভিসহ অনেক ভ্যাকসিনের উন্নয়ন ও লাইসেন্স অর্জনে আইসিডিডিআর,বি বিশেষ অবদান রেখেছে। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বে আমরা প্রাণী থেকে মানুষে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণের প্রাথমিক পর্যায় শনাক্তকরণ, রোগের কারণ-অনুসন্ধান সংক্রমণ গতিশীলতা, এবং সংক্রমণ প্রতিরোধের উপায় খুঁজে বের করতে বিশ্বের দীর্ঘতম নিপাহ ভাইরাস সার্ভিল্যান্স পরিচালনা করছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা নতুন জ্ঞান ও প্রমাণ সংগ্রহের এই মহান উদ্যোগের অংশ হতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত, যা সম্ভাব্য বৈশ্বিক মহামারি অবস্থা তৈরির ক্ষমতাসম্পন্ন নিপাহ রোগের বিরুদ্ধে একটি ভ্যাকসিন উন্নয়নে সহায়তা করবে এবং অসংখ্য মানুষের জীবন বাঁচাবে।
সেপি’র গবেষণা ও উন্নয়ন শাখার নির্বাহী পরিচালক ডা. মেলানি স্যাভিল বলেন, আইসিডিডিআর,বি’র সঙ্গে এই নতুন গবেষণাটি নিপাহ ভ্যাকসিনের উন্নয়নে অগ্রসর হওয়ার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। মহামারি প্রস্তুতির অগ্রগতি এবং এই অত্যন্ত মারাত্মক হুমকির ঝুঁকিতে থাকা অঞ্চলগুলোকে রক্ষার জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ গবেষণায় অংশ নেওয়া নিপাহ থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের আমরা ধন্যবাদ জানাই।
গবেষণা বিষয়ে ইউকে মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথ কেয়ার প্রোডাক্ট রেগুলেটরি এজেন্সির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মার্ক বেইলি বলেন, এই উদ্যোগটি নিপাহ ভ্যাকসিন উন্নয়নের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা ঝুঁকিপূর্ণ জনসংখ্যাকে রক্ষা করবে এবং আমরা এই মূল প্রকল্পে আইসিডিডিআর,বি’র সঙ্গে কাজ করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি।
আইসিডিডিআর,বি বলছে, বাংলাদেশে প্রায় প্রতিবছরই নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে। নিপাহ ভাইরাস মানুষকে সংক্রমিত করার জন্য সবচেয়ে মারাত্মক প্যাথোজেনগুলোর মধ্যে একটি। প্যারামিক্সোভাইরাস পরিবারের একজন সদস্য, টেরোপাস বাদুড়ের (ফ্লায়িং ফক্সসেস) মাধ্যমে এই ভাইরাস মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও সংক্রমিত শূকর, সংক্রমিত মানুষ বা বাদুড়ের কামড়ানো ফল বা খেজুরের রসের মতো দূষিত খাবারের মাধ্যমেও তা ছড়িয়ে পড়ে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের শ্বসনতন্ত্র ও কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র এই ভাইরাসের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়। এর ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার ৪০ থেকে ৭৫ শতাংশ বলে অনুমান করা হয়।
১৯৯৮ ও ১৯৯৯ সালে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে শনাক্ত হওয়ার পর নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে বাংলাদেশ, ভারত ও ফিলিপাইনে। আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া এবং ওশেনিয়া অঞ্চলজুড়েও টেরোপাস বাদুড় পাওয়া গেছে, যেখানে দুইশ কোটিরও বেশি মানুষের বাসস্থান। ভবিষ্যতে এই ভাইরাস আরও এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
সারাবাংলা/এসবি/টিআর
আইসিডিডিআরবি নিপাহ ভাইরাস নিপাহ ভ্যাকসিন নিপাহ ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা