Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আশ্রয়ণ প্রকল্পে গরু-ছাগলের বাস, ঘর ছেড়েছেন বাসিন্দারা

রিফাত রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৬ মার্চ ২০২২ ০৮:৫৭

ছবি: সারাবাংলা

চুয়াডাঙ্গা: ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য সরকারি খরচে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের আকন্দবাড়ীয়া গ্রামে গড়ে তোলা হয় আশ্রয়ণ প্রকল্প। ২০০৭-৮ অর্থবছরে নির্মিত এসব ঘরের অবস্থা বর্তমানে জরাজীর্ণ। আশ্রয়ণ প্রকল্প অপরিকল্পিত দাবি করে ইতোমধ্যেই ঘর ছেড়েছেন অনেক বাসিন্দা। সেখানে এখন গরু-ছাগল লালন পালন করা হচ্ছে। এতে আশ্রয়ণ প্রকল্পজুড়ে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। আবাসনে নেই বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্যাসিটেশন ব্যবস্থা।

এসব আশ্রয়ণ প্রকল্প সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, বর্তমানে সেখানে বসবাস করছেন শতাধিক পরিবারের তিন শতাধিক সদস্য। এছাড়াও গুচ্ছ গ্রামের ৭০টি ঘরেরও একই দশা। অনেকটা খোলা জায়গাতেই মলমূত্র ত্যাগ করছেন বাসিন্দারা।

বেগমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী হোসেন বলেন, ইউনিয়নে যতগুলো আশ্রয়ণের ঘর আছে তা নির্মাণ এবং দেখভালের দায়িত্ব উপজেলা প্রশাসনের। সেখানে জনপ্রতিনিধিদের কোনো দায়দায়িত্ব নেই। সরকারি বরাদ্দের টাকা খরচ করে গড়ে তোলা ঘরগুলো আজ বসবাসের অনুপোযোগী। আবার একই নামে বিভিন্নজন একাধিক ঘর নিয়ে রেখেছেন। যেখানে গরু-ছাগল পোষা হচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধিকাংশ ঘর জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন এ অবস্থায় থাকার কারণে ঘরগুলো বসবাসের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে বেগমপুর ইউনিয়নের ২৩ নম্বর আকন্দবাড়ীয়া গ্রামের ১ নম্বর খাস খতিয়ানের সরকারি জমিতে রজনীগন্ধা ও পারিজাত আশ্রয়ণ নামে ২৩টি ব্যারাকে সারিবদ্ধভাবে গড়ে তোলা হয় টিনশেড নির্মিত ঘর। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে এ ব্যারাক নির্মাণ করা হয়। সেখানে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয় অসহায় হতদরিদ্র ১৯০টি ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের। একই সারিতে পাশাপাশি অপরিকল্পতি ঘর হওয়ায় এখানে বসবাসের জায়গা পেলেও অনেকেই বসবাস করতে চায়নি এবং তারা অন্যত্র চলে যায়।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের অভিযোগ, তাদের পরিবারকে স্বাবলম্বী করতে নানা ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা থাকলেও সেটি শুধু কাগজ কলমেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। অধিকাংশ ব্যারাকের ছাউনির টিনে মরিচা ধরে বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় ছিদ্র হয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টি এলেই টিনের ছিদ্র দিয়ে ঘরের ভেতরে পানি পড়ে। বৃষ্টির পানিতে ঘরের ভেতরে রাখা জিনিস ও আসবাবপত্র ভিজে যায়। শোবার জায়গাটাও পানিতে ভিজে একাকার হয়ে যায়। ঘরের জিনিসপত্র রক্ষায় টিনের ছিদ্র বরাবর হাঁড়ি পাতিল পেতে রাখতে হয়। পরবর্তীতে ডালিয়া গুচ্ছ গ্রামে ৪০টি এবং উদয়ন নামে ৩০টি একক পরিবারের জন্য গড়ে তোলা হয় ৭০টি একক ঘর। আকন্দবাড়ীয়া গ্রামে ২৬০টি পরিবারের জন্য গড়ে ওঠে ৯৩টি ব্যারাক।

ছবি: সারাবাংলা

ছবি: সারাবাংলা

সরেজমিন দেখা গেছে, পাকা খুঁটির সিমেন্টগুলো খসে পড়ে লোহার রড বের হয়ে গেছে। বৃষ্টির পানি আটকাতে অনেকে আবার টিনের চালের উপর টাঙিয়ে দিয়েছেন পলিথিন। পানির জন্য বসানো টিউবওয়েল এবং স্যানিটারি শৌচাগারের অবস্থাও বেহাল। প্রায় সবগুলো শৌচাগার ভেঙে নষ্ট হয়ে গেছে। সেখান থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। মশা মাছির উৎপাতের মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে আশ্রয়ণের বাসিন্দারা। রাতের আঁধারে খোলা জায়গায়তেই তাদের মলমূত্র ত্যাগ করতে হয়।

আশ্রয়ণে বসবাসকারী জনাব আলী, আলেয়া, রোজিনাসহ অনেকেই জানান, এখানে বসবাসকারী প্রায় সবাই দিনমজুর, কৃষিকাজ, ভ্যান ও অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। অনেকের ঘরে উপার্জনক্ষম লোক না থাকায় বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও সরকারি ত্রাণ তাদের একমাত্র অবলম্বন। এ অবস্থায় ঘূর্ণিঝড় ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমাদের লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয়।

বাসিন্দারা বলেন, সরকারি ঘর পেয়ে আমরা আনন্দিত হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, এই ঘরে থেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে স্বাবলম্বী হব। কিন্তু স্বাবলম্বী হওয়া তো দূরের কথা এখন আর কেউই আমাদের খোঁজ রাখেন না। আশ্রয়ণের ঘরগুলো মেরামতের জন্য বারবার কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও আজও কেউ মেরামতে এগিয়ে আসেননি।

একটি সূত্র জানিয়েছে, এখানে ঘর নিয়ে কেউ অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে আবার কেউ মাদক কারবারে জড়িয়ে আবাসন ছাড়া হয়েছে। ওই ঘর গুলোতে কে কখন কোথা থেকে এসে বসবাস করছে তার সঠিক হিসাব কেউ রাখে না।

বেগমপুর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, সরেজমিনে তদন্ত করে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলো মেরামত করার জন্য সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট। আশা করি অতি তাড়াতাড়ি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম ভূঁইয়া বলেন, ব্যারাক মূলত সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে নির্মাণ করা হয়েছে। এই ব্যারাকের জমি এখনো সরকারি সম্পদ। সেটা ব্যবহারকারীদেরকে দলির করে হস্তান্তর করা হয়নি। সে কারণেই এখানে সমস্যা রয়েছে। তাছাড়া ব্যারাকে একই সঙ্গে একই সারিতে ঘর গুলো নির্মাণের ফলে এখানে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাসের সমস্যা হয়। সে কারণেই অনেকে এখানে বসবাস করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে না।

তিনি আরও বলেন, কিস্তু আশ্রয়ণের একক ঘরগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে। এই ঘরগুলোর সামনে বেশ কিছু জমি রেখে সেটা দলিল করে তা বসবাসকারীকে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে ওই বসবাসকারী তার মত করে ঘরের সমস্ত কিছুই নিজে তদারকি করছে। তবে আশ্রয়ণে বসবাসের অনুপোযোগী ঘরগুলো চিহ্নিত করে তা মেরামতের জন্য ৭৪ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বরাবর চিঠি পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দের টাকা আসলেই মেরামতের কাজ শুরু হবে।

সারাবাংলা/এনএস

আশ্রয়ণ প্রকল্প চুয়াডাঙ্গা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর