‘বঙ্গবন্ধুর ঐন্দ্রজালিক নেতৃত্ব জাতিকে একসূত্রে গ্রথিত করেছিল’
১৭ মার্চ ২০২২ ০৯:১৩
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতার ঐন্দ্রজালিক নেতৃত্ব এবং সম্মোহনী ব্যক্তিত্ব সমগ্র জাতিকে একসূত্রে গ্রথিত করেছিল। যার ফলে আমরা পেয়েছি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। বিকাশ ঘটেছে বাঙালি জাতিসত্তার।
১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের এই শুভ লগ্নে তিনি দেশের সব শিশুসহ দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। জাতীয় শিশু দিবসে এ বছরের প্রতিপাদ্য— ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের অঙ্গীকার, সকল শিশুর সমান অধিকার’।
বাণীতে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শুধু বাঙালি জাতিরই নয়, তিনি ছিলেন বিশ্বের সব নিপীড়িত-শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায় ও মুক্তির অগ্রনায়ক। তিনি যখন স্বাধীন বাংলাদেশের পুনর্গঠন কাজে আত্মনিয়োগ করেন, তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি তাকে পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যসহ হত্যা করে। এর মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ও উন্নয়নকে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়। অবৈধ সামরিক সরকারগুলো পরবর্তী সময়ে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত এবং স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী ও প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিকে পুনর্বাসন করেছিল। জনগণকে ভাত ও ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ইতিহাসের এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের যেন বিচার না হয় সেজন্য প্রণীত হয় দায়মুক্তির কালাকানুন- ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স। দীর্ঘ ২১ বছর পর জনগণের রায়ে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এই কালাকানুন বাতিল করার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের বিচার কার্যক্রম শুরু করে। এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে সরকার গঠন করে মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য আওয়ামী লীগ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। প্রবৃদ্ধি, শিক্ষার হার বেড়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলমান রয়েছে এবং এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি রায় কার্যকর হয়েছে। জাতীয় চার নেতার বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। জঙ্গিবাদ ও হরতালের অবসান ঘটিয়ে দেশকে স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয়েছে। গ্রামকে শহরে রূপান্তর করা হচ্ছে। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল, ৩৯টি হাইটেক পার্ক, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২, গভীর সমুদ্রবন্দর, পদ্মাসেতু, এলএনজি টার্মিনাল, এক্সপ্রেসওয়ে, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা আজ আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি। স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এবং উন্নয়ন ও গণতন্ত্রবিরোধী শক্তির সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ প্রখ্যাত শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। বাল্যকাল থেকেই তিনি ছিলেন নির্ভীক, দয়ালু ও পরোপকারী। স্কুলে পড়ার সময়েই নেতৃত্বের গুণাবলি ফুটে ওঠে তার মধ্যে। ধীরে ধীরে তিনি হয়ে ওঠেন বাংলার অধিকার আদায়ের শেষ আশ্রয়স্থল। প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এ বিশ্ববরেণ্য নেতার সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের মূল লক্ষ্য ছিল বাঙালি জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করা। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ এ বাঙালি বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেন।
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামমুখর জীবনের বিভিন্ন অধ্যায়ের কথা তুলে ধরেন। এত কিছুর মধ্যেও শিশু-কিশোরদের জন্য বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ে বিশেষ কোমলতার কথাও উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মমতা ছিল অপরিসীম। এজন্য তার জন্মদিনকে শিশুদের জন্য উৎসর্গ করে আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে ১৭ মার্চকে ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। জাতির পিতা বিশ্বাস করতেন, আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, ভবিষ্যতে দেশ গড়ার নেতৃত্ব দিতে হবে আজকের শিশুদেরই। তাই শিশুরা যেন সৃজনশীল-মুক্তমনের মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে- তিনি সব সময় সেটাই চাইতেন।
এসময় শেখ হাসিনা শিশুদের অধিকার রক্ষা ও শিশু কল্যাণের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ ও কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, শিশুদের জন্য জাতির পিতার জীবন ও কর্মভিত্তিক বই প্রকাশ এবং পাঠ্যবইয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরেছি। শিশুদের মনে দেশপ্রেম জাগ্রত করে তাদের ব্যক্তিত্ব গঠন, সৃজনশীলতার বিকাশ এবং আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলতে দলমত নির্বিশেষে আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। তাদের বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির পিতার সংগ্রামী জীবনের প্রকৃত ইতিহাস জানাতে হবে এবং জ্ঞান সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি তাদের দক্ষতা বিকাশের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যৎ ও কল্যাণে আমাদের বর্তমানকে উৎসর্গ করা এবং সবাই মিলে জাতির পিতার অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ২০২০ সাল ছিল জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ। বর্তমান প্রজন্মের শিশুসহ আমাদের সবার সৌভাগ্য হয়েছে জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ উদযাপনের আয়োজন দেখার। জাতির পিতার জন্মশতবর্ষের আয়োজন আরও আনন্দময় হয়ে উঠেছে আমাদের মহান স্বাধীনতা ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর বিভায়। জাতীয় শিশু দিবসে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সঙ্গে সঙ্গে মহান নেতার জীবন ও আদর্শ অনুসরণে এ দেশের শিশুদের যথাযোগ্য সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাই আমাদের সরকারের মুখ্য লক্ষ্য।
মহান আল্লাহর কাছে জাতির পিতার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত এবং আগামী দিনের কর্ণধার শিশু-কিশোরদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকী এবং ‘জাতীয় শিশু দিবস-২০২২’ উপলক্ষে আয়োজিত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন। বাসস।
সারাবাংলা/টিআর
১০২তম জন্মবার্ষিকী জাতির পিতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান