জন্মদিবসে চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধায় স্মরণ
১৭ মার্চ ২০২২ ১৫:৩৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: বাঙালি জাতির জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের আপামর মানুষ। মুক্তিযুদ্ধের গান, সভা-সমাবেশ-শোভাযাত্রা, ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতাসহ নানা আয়োজনে স্মরণ করা হচ্ছে ক্ষণজন্মা এই মানবকে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও সরকারিভাবে ঘোষিত শিশু দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) সকালে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সরকারি অফিসে, রাজনৈতিক-সামাজিক বিভিন্ন সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। গতককাল বুধবার (১৬ মার্চ) সন্ধ্যা থেকে চট্টগ্রামের সরকারি অফিস-আদালত, বিভিন্ন ভবনে আলোকায়ন করা হয়েছে।
সকালে চট্টগ্রামের শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার শ্যামল কুমার নাথ, বিভাগীয় কমিশনার আশরাফ উদ্দিন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান, পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হকসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিভাগীয় কমিশনার আশরাফ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র, একটি পতাকা, একটি মানচিত্র দিয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা চাই, এদেশের প্রতিটি মানুষ তার অধিকার নিয়ে বাঁচুক। সবাই দারিদ্র্যমুক্ত হোক। আমাদের সন্তানরা যেন শিক্ষিত হয়ে দেশ ও জাতি গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে।’
বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা প্রচারের স্থান কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রকে বিশ্বমানের জাদুঘর হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করেছে। প্রস্তাব পাশ হয়ে গেলে দ্রুততার সঙ্গে কাজ শুরু হবে। অচিরেই আমরা এই স্থানে একটি বিশ্বমানের জাদুঘর দেখতে পাব।’
এদিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ছয়দিনব্যাপী মুক্তির উৎসব ও সুবর্ণজয়ন্তী মেলার আয়োজন করেছে। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটায় সার্কিট হাউজ থেকে শোভাযাত্রা নিয়ে এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়াম মাঠে গিয়ে মেলা উদ্বোধন করবেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। ১৮ মার্চ থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত জিমনেসিয়াম মাঠে শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতা এবং ‘বঙ্গবন্ধু, মুক্তির সংগ্রাম ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে।
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে এক আলোচনা সভায় এম এ সালাম ছাড়াও পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাব্বির ইকবাল ও সচিব দিদারুল আলম বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিট কমান্ড শিল্পকলা একাডেমিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। পরে তাদের দলীয় কার্যালয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংসদের ইউনিট কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদের সভাপতিত্বে ও সহকারী কমান্ডার সাধন চন্দ্র বিশ্বাসের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ডেপুটি কমান্ডার শহীদুল হক চৌধুরী সৈয়দ, যুদ্ধাহত সহকারী কমান্ডার খোরশেদ আলম এবং অঞ্জন কুমার সেন।
সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগরের উদ্যোগে নগরীর লালদীঘি চত্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের জেলা সভাপতি নুরুল আলম মন্টুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকীর পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের মহানগর সভাপতি সরফরাজ খান চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক বেদারুল আলম চৌধুরী বেদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহিদ হোসেন শরীফ, নারীনেত্রী দিলোয়ারা ইউসুফ, বীর মুক্তিযোদ্ধা বাদশা মিয়া, সাহেদ মুরাদ সাকু, সাইফুন নাহার খুশী, পলাশ বড়ুয়া।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও নানা আয়োজনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড প্রাঙ্গনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান কর্মকর্তারা। শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক বিপ্লব গাঙ্গুলির সভাপতিত্বে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল আলীম ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ এতে বক্তব্য রাখেন।
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিভাসু) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসের কর্মসূচির উদ্বোধন করেন উপাচার্য গৌতম বুদ্ধ দাশ। এরপর শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রা শেষে ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এছাড়া ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ বিষয়ক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, ‘বঙ্গবন্ধুর কৃষি ভাবনা’ শীর্ষক রচনা প্রতিযোগিতা, পথশিশুদের মাঝে খাবার বিতরণ ও আলোচনা সভা হয়েছে।
চট্টগ্রামের বেসরকারি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উদযাপন করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কলেজ, সিটি করপোরেশন পরিচালিত স্কুল-কলেজগুলোতেও বঙ্গবন্ধুকে যথাযোগ্য মর্যাদায় স্মরণ করা হয়েছে। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার হাসিনা জামাল কলেজে জাতীয় সঙ্গীত, আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন নিয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনায় অংশ নেন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য আবু ফয়সল, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ইউসুফ নারী, অধ্যাপক রেখা দাশ ও শীলা দাশগুপ্তা।
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিবসে মোস্তফা-হাকিম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন ১২ গুণীজনকে সংবর্ধনা দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী হিসেবে সংবর্ধিতরা হলেন, সুলতান আহাম্মদ চৌধুরী, সফিউল আলম চৌধুরী, এম এ জাফর, আনোয়ারুল কবির চৌধুরী, আবুল কালাম শামসুদ্দিন চৌধুরী, এবাদুর রহমান, আলী মিয়া, মসিউদ্দৌলা চৌধুরী, আলী আজগর চৌধুরী, আব্দুল মাবুদ চৌধুরী, সুলতান মাহমুদ চৌধুরী ও বীরেন্দ্র লাল দে। নগরীর উত্তর কাট্টলী মোস্তফা হাকিম ডিগ্রি কলেজে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী এবং মোস্তফা-হাকিম গ্রুপ ও মোস্তফা হাকিম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল আলম।
সারাবাংলা/আরডি/এনএস