ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক সংগ্রহ করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য উপহার
১৭ মার্চ ২০২২ ২১:২৭
ঢাকা: সহজলভ্য আর দামে সস্তা হওয়ায় দিন দিন প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়লেও নেই প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে কোনো সচেতনতা। প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর পাশাপাশি কীভাবে পুনঃব্যবহার, রিসাইকেল করে পরিবেশের ক্ষতি কমানো যায় সেই সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছে অরিত্রী ফাউন্ডেশন। ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক সংগ্রহ করে পুনঃব্যবহারের মাধ্যমে ফুলের টব তৈরি করে ২৬ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে উপহার দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সংগঠনটি।
১৮ মার্চ ‘গ্লোবাল রিসাইকেল ডে’কে সামনে রেখে ‘প্রকৃতির স্বাধীনতা’ নামে এই আয়োজন শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর থেকে। ৮ স্বেচ্ছাসেবীর অংশগ্রহণে দুই ভাগে ভাগ হয়ে প্লাস্টিক সংগ্রহ চলে। সংগ্রহ করা প্লাস্টিক নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) নিয়ে ২৬টি ফুলের টব বানানো হয়।
পরে, সেগুলোতে চারা রোপন করে স্বাধীনতা দিবসে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উপহার হিসেবে দেওয়া হবে।
এদিকে, অরিত্রী ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবীরা সবাই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থী। ২০২০ সালে প্রকৃতিকে রক্ষার আকুতি নিয়ে এই সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়।
ফাউন্ডেশনের ফিল্ড ক্যাম্পেইন টিমের টিম লিডার সাদনান সিহাব আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এর ব্যবহার বাড়লেও পুনঃব্যবহার ও রিসাইকেল নিয়ে তেমন সচেতনতা নেই। তাই তারা এই উদ্যোগ নিয়েছেন। এগুলো পুনঃব্যবহারের মাধ্যমে প্লাস্টিকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতেই এই কর্মসূচি। তারা প্লাস্টিকের বোতলের পাশাপাশি কাপ, গ্লাস, পলিব্যাগ, প্যাকেট সংগ্রহ করছেন।
আরেক স্বেচ্ছাসেবী ফাতেমা খাতুন রাত্রী বলেন, প্লাস্টিক বোতল থেকে পানি খেয়েই ফেলে দিচ্ছি আমরা। এভাবে যদি ৫০০ মানুষ প্রতিদিন একটি করেও পানির বোতল কেনেন তাহলে পাঁচশ প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হচ্ছে। এর বদলে আমরা যদি একটি অ্যালুমিনিয়ামের পানির বোতলে পানি নিয়ে বাসা থেকে বের হই সেক্ষেত্রে এটি অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর ও পরিবেশবান্ধব। আবার খরচও কমবে- তারা সবাইকে এসব নিয়েই সচেতন করেছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ফাতেমা বলেন, কাজ করতে গিয়ে দেখছেন প্লাস্টিকের ব্যবহার সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষই সচেতন নয়। তবে, প্লাস্টিক সংগ্রহের সময় ক্ষতিকর দিকগুলো বুঝিয়ে বলায় অনেকেই প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর আগ্রহ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, আমরা না জেনে বা না বুঝে প্লাস্টিক ব্যবহার করি। যার অনেকাংশই একবার ব্যবহৃত হয়। এসব প্লাস্টিক পণ্য নির্দিষ্ট জায়গায় না ফেলে অনেকেই রাস্তাঘাট বা অন্যান্য জায়গায় ফেলেন। এতে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ বাড়ছে। আবার অনেক প্লাস্টিক পণ্যই পানিতে চলে যাচ্ছে যা নদী সাগরের জলজ প্রাণী খেয়ে ফেলছে। এতে তাদের শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিকের কণা ঢুকছে যা আবার মানুষের শরীরে চলে আসছে। এতে ক্যানসারসহ নানারকম মারণরোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এছাড়াও প্লাস্টিকের মাটিতে মিশে যেতে ৪০০-৫০০ বছর সময় লাগে। এতে পরিবেশের স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে ভয়াবহ ক্ষতি হচ্ছে ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির মুখে পড়ছে পুরো বিশ্ব।
অরিত্রী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট সারা জাবীন জানালেন, ২০১৫ সালে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে বেড়াতে গিয়ে সাগরে প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতা দেখে প্রথমবারের মত ধাক্কা খান তিনি। এরপর থেকেই মূলত প্লাস্টিক দূষণ কমানো নিয়ে কিছু একটা করার পরিকল্পনা ছিল। ব্যক্তিগতভাবে যতটা সম্ভব কম প্লাস্টিক ব্যবহার করলেও এটি নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে এমনটা ভাবেবননি আগে।
অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী হলেও দেশে ঘুরতে এসে প্লাস্টিকের ব্যবহার ও বর্জ্য বৃদ্ধির বিষয়টি দেখেছিলেন তিনি। সেই থেকেই অরিত্রী ফাউন্ডেশনের সূচনা। তিনি বলেন, সবাই চাইলেই প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো যায় বা ব্যবহৃত প্লাস্টিক পুনঃব্যবহার ও রিসাইকেল করা যায় সে বিষয়ে সচেতন করতেই এই উদ্যোগ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে করোনা মহামারিজনিত লকডাউন থাকায় মূলত অনলাইনেই কার্যক্রম চলছিল, এবারই প্রথম সশরীরে সচেতনতামূলক কাজ করছেন তারা, বলেন অরিত্রী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা।
তিনি আরও বলেন, শিশুদের শেখালে তারা সারাজীবন মনে রাখে। তাই পৃথিবী বাঁচাতে সবশ্রেণির মানুষকে নিয়ে কাজ করলেও শিশুদের অধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। এছাড়া বাংলাদেশে যেসব পাহাড়ি জনগোষ্ঠির মানুষ আছেন তারা তুলনামূলক পরিবেশবান্ধব জীবনযাপন করেন। এসব জীবনধারাও সামনে আনার চেষ্টা চলছে।
সারাবাংলা/আরএফ/একেএম