প্রধানমন্ত্রীর অপেক্ষায় পায়রা, আসছে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা
১৯ মার্চ ২০২২ ২৩:৪৪
ঢাকা: পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কম সময়ে নির্মিত দেশের সবচেয়ে বড় এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উদ্বোধনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালুর মধ্য দিয়েই পুরো বাংলাদেশে বিদ্যুতায়ন পরিপূর্ণতা পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। আগামী সোমবার (২১ মার্চ) এর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি তিনি দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নেরও ঘোষণা দেবেন বলে জানা গেছে। এ উপলক্ষে শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকাই নয়, গোটা কলাপাড়ায় সাজ সাজ রব।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী ও প্রিয় নেত্রীকে এক নজর দেখার জন্য অধীর অপেক্ষায় সেখানকার জনগণ। কারণ বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করে কলাপাড়ায় একটি জনসভায় বক্তৃতা করার কথা রয়েছে তার। মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে দুই বছর পর এই প্রথম কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকার বাইরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে তার এই সফর বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেশের বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটাতে ২০১৪ সালে দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নিশানবাড়িয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। ওই বছর চীন সফরে গিয়ে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন পায়রায় তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে চুক্তি করে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নর্থওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি) এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে চুক্তিবদ্ধ হয়। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন করেন। কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চীন ও বাংলাদেশ যৌথভাবে নির্মাণ করেছে। কেন্দ্র নির্মাণে অর্থায়ন করছে চীনের এক্সিম ব্যাংক। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে সিএমসির ৫০ শতাংশ মালিকানা রয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, সবচেয়ে কম সময়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্মাণ করা হয়েছে পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে আধুনিক আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি। যা এই কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে অপেক্ষাকৃত কম জ্বালানি দরকার হবে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সময় কোনো ধোঁয়া বের হবে না। আমদানি করা কয়লা জাহাজে এনে কনভেয়ার বেল্টের মাধ্যমে তা কোল ডোম হয়ে পৌঁছে যাবে একেবারে বয়লার ভেতরে। ফলে পরিবেশ দূষণের কোনো পথই থাকছে না।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বেইজলোড এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ক্ষতিকর কার্বনডাই অক্সাইড, সালফার ডাই, অক্সাইড-সক্স ও নাইট্রোজেন, অক্সাইড-নক্স প্রতিরোধে ব্যবহার করা হয়ছে সর্বাধুনিক পদ্ধতি। আর এগুলো সব সময় মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুরোদমে চালাতে প্রতিদিন অন্তত ১৩ হাজার মেট্রিক টন কয়লা পোড়াতে হয় পায়রায়।
জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৬৬০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার প্রথম ইউনিট উৎপাদন শুরু করে। আর ওই বছরের ২৬ আগস্ট শুরু হয় দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদন। উৎপাদনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত থাকা পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০২১ সালের ৩০ মার্চ উদ্বোধনের কথা থাকলেও করোনার কারণে তা পিছিয়ে যায়। যা এবার ২১ মার্চ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এ উপলক্ষে দেশের প্রথম ও সবচেয়ে বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে চলছে প্রস্তুতি।
এ প্রসঙ্গে নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকৌশলী এ এম খোরশেদুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘সবচেয়ে কম সময়ে নির্মাণ করা পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি আমরা দুই বছর আগেই উৎপাদনক্ষম করতে পেরেছি। মাঝে করোনার কারণে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন পিছিয়ে যায়। এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এর উদ্বোধন করবেন। এটি আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া।’ তিনি জানান, উদ্বোধনের সকল প্রস্তুতি প্রায় শেষ।
এদিকে, প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ‘বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুরোপুরি উৎপাদন শুরু করলেও এর সঞ্চালন লাইন এখনো নির্মাণ শেষ হয়নি। ফলে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ এখনই জাতীয় গ্রিডে যোগ করা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎকেন্দ্রের দু’টি উৎপাদনে সক্ষম কিন্তু সঞ্চালন লাইনের অভাবে আপাতত এক তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে দেওয়া হচ্ছে দক্ষিণের বেশ কয়েকটি জেলায়। যদিও পায়রার এই সফল উৎপাদনকে নতুন ইতিহাস হিসেবেই দেখছে সরকার।
এদিকে, পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরকে ঘিরে বিশেষ সর্তকতা নেওয়া হচ্ছে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায়। জানা গেছে, ইতোমধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিশেষ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যেহেতু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এখনো নির্মূল হয়নি সে কারণে জনসমাগম এড়িয়ে অনুষ্ঠান করার বিষয়টি মাথায় রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
প্রধানমন্ত্রীর দফতর সুত্রে জানা গেছে, পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে কলাপাড়া সফরের সকল প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যেহেতু এখনো পুরোপুরি কমেনি, সেহেতু বিষয়টি মাথায় রেখে অনুষ্ঠান সূচি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র। সম্পূর্ণ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সরকারের মেগাপ্রকল্পের তালিকায় থাকা প্রথম ১০টির একটি। যা সবার আগে বাস্তবায়ন করে নজির স্থাপন করেছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের আগে উদ্যোগ নেওয়া রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র এখনো উৎপাদনে আসতে পারেনি।
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম
ঘোষণা পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রধানমন্ত্রী শতভাগ বিদ্যুতায়ন শেখ হাসিনা