যাত্রী পরিবহনে প্রস্তুত মিতালী, চলবে সপ্তাহে ২ দিন
২০ মার্চ ২০২২ ১০:২৫ | আপডেট: ২০ মার্চ ২০২২ ১৪:৫৭
ঢাকা: উদ্বোধনের এক বছর পর চালু হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে চলাচলের অপেক্ষায় থাকা ট্রেন ‘মিতালী এক্সপ্রেস’। ঢাকা-নিউ জলপাইগুড়ি রুটে ট্রেনটি চলাচলে ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উদ্বোধনের পরও করোনা মহামারির কারণে গত এক বছরে ট্রেনটি চালু করা যায়নি। বর্তমানে করোনার সংক্রমণ কমে আসায় বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের সিদ্ধান্তেই ট্রেনে যাত্রী পরিবহন শুরু করা হচ্ছে।
সূত্রে জানা যায়, ষাটের দশকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শিলিগুড়ির যাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে এই রুটে ট্রেন চলাচল করত। কিন্তু ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের পর এই রুট বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ৫৬ বছর পর ২০২১ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নিউজলপাইগুড়ি পথে নতুন করে রেল চলাচলের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বাংলাদেশ- ভারতের বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে এই ট্রেনের নাম দেওয়া হয় ‘মিতালী এক্সপ্রেস’। জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এই নাম দিয়েছেন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে ৪৫৬ আসন বিশিষ্ট এই মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনসেবার ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশন থেকে চিলাহাটি- নিউজলপাইগুড়ি রুটে চলবে ‘মিতালী এক্সপ্রেস’। মোট ৫৯৫ কিলোমিটার দূরত্বের এই রেলপথের বাংলাদেশ অংশেই পড়েছে ৫২৬ কিলোমিটার, আর বাকি ৬৯ কিলোমিটার ভারতের অংশে। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে হলদিবাড়ী হয়ে সীমান্ত পার হবে মিতালী। এরপর বাংলাদেশের চিলাহাটি, নীলফামারি, পাবর্তীপুর, হিলি, নাটোর, ঈশ্বরদী এবং টাঙ্গাইল হয়ে ট্রেনটি ঢাকায় পৌঁছাবে।
জানা যায়, এই রুটে ১০ কোচ বিশিষ্ট সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মিতালী এক্সপ্রেস চলবে সপ্তাহে দুইদিন। ঢাকা-ক্যান্টনমেন্ট-চিলাহাটি-নিউ জলপাইগুড়ি রুটে সোম ও বৃহস্পতিবার আর নিউ জলপাইগুড়ি- চিলাহাটি-ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রুটে চলবে রোববার ও বুধবার। ট্রেনটিতে তিন ধরনের সিট রয়েছে। এসি বার্থ, এসি সিট এবং এসি চেয়ার। ভ্রমণ করসহ এসি বার্থের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার ৯০৫ টাকা, এসি সিটে ৩ হাজার ৮০৫ টাকা এবং এসি চেয়ারের ভাড়া ২ হাজার ৭০৫ টাকা। আর পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের ভাড়া হবে মূল ভাড়ার ৫০ শতাংশ।
সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পরিচালিত মিতালী এক্সপ্রেস তৃতীয় যাত্রীবাহী ট্রেন। দুই প্রতিবেশী দেশের জনগণের মধ্যে সংযোগ বাড়াতেই এই ট্রেন চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত বছরের স্বাধীনতা দিবসে ট্রেনটি উদ্বোধন করা হলেও করোনা সংক্রমণের প্রাদুর্ভাবে যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হয়নি। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, করোনার সংক্রমণ বর্তমানে অনেকটাই নিম্মমূখী। যে কারণে দুই দেশের সম্মতিতেই ট্রেনটি চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস থেকে আবারও কার্যক্রম শুরু করার পরামর্শ দিয়েছে। তারিখ নিশ্চিত করতে রোববার (২০ মার্চ) রেলপথ মন্ত্রণালয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করবেন। সেখানেই মিতালী চলাচলের তারিখ চূড়ান্ত হবে।
এদিকে বাংলাদেশ- ভারতের মধ্যে ট্রেন চলাচল শুরু করা হলেও ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশন সড়ক পথে এখনো পর্যটক ভিসা বন্ধ রয়েছে। হাই কমিশনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কবে নাগাদ ভিসা চালু হতে পারে এখনও সেরকম কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বাংলাদেশ এবং ভারত থেকে আনুষ্ঠানিক চিঠি পেলে ভিসা কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।
ঢাকা-নিউ জলপাইগুড়ি রুটে এ ট্রেন চালু হলে কম সময় এবং সাশ্রয়ী খরচে পশ্চিমবঙ্গের পাহাড়ি পর্যটন এলাকা দার্জিলিং, কালিম্পং এবং সিকিম, গ্যাংটকসহ মোহনীয় পর্যটনগুলোতে অনায়াসে বেড়াতে যেতে পারবেন বাংলাদেশি পর্যটকরা। এই পথে যাওয়া যাবে নেপাল-ভুটানেও। নিয়ম অনুযায়ী ভারতীয় হাইকমিশন থেকে ভিসা নিয়ে অন্তত এক মাস আগে ট্রেনের টিকেট নিশ্চিত করে ভ্রমণ করতে পারবেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে চলাচল করা ট্রেনের মধ্যে মিতালী এক্সপ্রেস তৃতীয় ট্রেন। মৈত্রী এক্সপ্রেস ও বন্ধন এক্সপ্রেস নামে আরো দুইটি ট্রেন দুই দেশের মধ্যে চলাচল করছে। এর মধ্যে ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে যাত্রা শুরু করে ‘মৈত্রী এক্সপ্রেস’। ওই যাত্রার উদ্বোধন করেছিলেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী। দীর্ঘ ৪৩ বছর পর দুই দেশের মধ্যে এ ট্রেন যাত্রার সূচনা হয়েছিল। অন্যদিকে ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর খুলনা-কোলকাতা পথে ‘বন্ধন এক্সপ্রেস’ চলাচলের সূচনা হয়। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কোলকাতার মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এই ট্রেন সার্ভিসের উদ্বোধন করেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে এই তিন রুটের ট্রেন পরিসেবাই বন্ধ করে দেওয়া হয়, যা স্বাধীনতা দিবসে আবারও চালু করার কথা রয়েছে।
সারাবাংলা/জেআর/এসএসএ