র্যাবের কার্যক্রমে সন্তুষ্ট আমেরিকা, তবে নিষেধাজ্ঞা উঠছে না
২০ মার্চ ২০২২ ১৭:৫৫
ঢাকা: শেষ তিন মাসে র্যাবের কার্যক্রম সন্তোষজনক বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে বাহিনীটির কয়েকজন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার উপর দেশটি যে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে, সেটি প্রত্যাহার করা জটিল বলে মনে করছেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড।
রোববার (২০ মার্চ) বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অষ্টম অংশীদারিত্ব সংলাপে র্যাবের প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থানের কথা জানান তিনি। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সংলাপ শেষে সাংবাদিকদেরও সঙ্গেও আলাপ করেন নুল্যান্ড।
বেলা সোয়া ১১টা থেকে চলা এই সংলাপে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। আর মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড।
সংলাপ শেষে ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড বলেন, ‘র্যাবের কার্যক্রমের ওপর নজর রাখছে যুক্তরাষ্ট্র। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ রয়েছে। বিগত তিন মাসের কর্মকাণ্ডে আমরা তাদের উন্নয়ন দেখছি। তবে র্যাব সদস্যদের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি জটিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার র্যাবের কার্যক্রমের বিষয়টি উত্থাপন করেছে। এতে গত তিন মাসে বাহিনীটির কার্যক্রমে ইতিবাচক দিক উঠে এসেছে। আগামী দিনগুলোতে আমরা এই বিষয় নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখব।’
সংলাপে র্যাবের বিষয় বাদেও আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করেছে দুই দেশ। এর মধ্যে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ নিয়েও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে সংলাপে। এই যুদ্ধে মার্কিনিরা বাংলাদেশকে ইউক্রেনের সহযোগী হিসেবে চেয়েছে।
সংলাপে ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড বাংলাদেশকে বলেছেন, বৈশ্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশকে নিয়ে একযোগে কাজ করতে চায় যুক্তরাষ্ট। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে বৈশ্বিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে গেছে। আন্তর্জাতিক আইনগুলোকেও হুমকিতে ফেলে দিয়েছে এই আগ্রাসন। এই হুমকি মোকাবিলা করতে হলে বাংলাদেশকে অবশ্যই ইউক্রেনের পাশে দাঁড়াতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনের জনগণের ওপর একটি অন্যায় যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়া যুদ্ধাপরাধ করছে ইউক্রেনের জনগণের পাশে দাঁড়ানো নৈতিক দায়িত্ব।’ এ সময় বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের প্রধান।
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের এই অর্থনৈতিক অগ্রগতির সহযোগী হতে যুক্তরাষ্ট্রের আরও অনেক কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। তবে বিনিয়োগের পরিবেশ ভালো করতে বাংলাদেশের আরও অনেক কিছু করা দরকার।’
এর আগে শনিবার (১৯ মার্চ) বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ডকে বহনকারী একটি বিশেষ বিমান ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এ সময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান।
ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড ১৯ থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কা সফর করবেন। এই সফরে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অংশীদারদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি ও সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে।
সফরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের রাজনীতিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যান্ড একটি প্রতিনিধিদলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। প্রতিনিধিদলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু ও প্রতিরক্ষা দফতরের নীতিবিষয়ক ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি আমান্ডা ডরিও রয়েছেন। শুক্রবার (১৮ মার্চ) যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের ওয়েবসাইটে এসব তথ্য জানানো হয়।
এই সফরে আন্ডার সেক্রেটারি ও তার সঙ্গে থাকা প্রতিনিধিদল ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি, সমৃদ্ধি এবং নিরাপত্তার জন্য অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করতে এবং সম্পর্ককে আরও গভীর করতে সুশীল সমাজ ও ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ওয়াশিংটনে প্রথম অংশীদারি সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। তারপর থেকে প্রতিবছর একবার ঢাকা, পরের বার ওয়াশিংটনে এই সংলাপের আয়োজন করা হয়। তবে করোনার কারণে গত দুই বছর এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়নি। সবশেষ ২০১৯ সালের জুন মাসে ঢাকায় অংশীদারিত্ব সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
সারাবাংলা/টিএস/পিটিএম