বিড়ি শিল্প রক্ষায় কুষ্টিয়ায় শ্রমিক সমাবেশ
২০ মার্চ ২০২২ ১৭:৩৬
ঢাকা: বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানির আগ্রাসন থেকে বিড়ি শিল্প রক্ষায় কুষ্টিয়ায় বিড়ি শ্রমিক সমাবেশ করেছেন খাতটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
সমাবেশে আগামী বাজেটে বিড়িতে শুল্ক কমানো, বিড়ির ওপর অর্পিত অগ্রিম ১০ শতাংশ আয়কর প্রত্যাহার, বিড়ি শ্রমিকদের সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সরেজমিনে পরিদর্শন ছাড়া বিড়ি কারখানার লাইসেন্স প্রদান বন্ধ করা এবং কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে নকলবাজদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান শ্রমিকরা।
রোববার (২০ মার্চ) কুষ্টিয়া পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে কুষ্টিয়া বিড়ি শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের আয়োজনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্সের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি দেন শ্রমিক নেতারা।
এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক হারিক হোসনের সঞ্চালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের সহসভাপতি নাজিম উদ্দিন। প্রধান অতিথি ছিলেন কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আজগর আলী। প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান।
সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, কুষ্টিয়া জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি আনারুল হক, কুষ্টিয়া শহর শ্রমিক লীগের সভাপতি ইব্রাহীম স্বপন, বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি আমিন উদ্দিন (বিএসসি)। বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল গফুর, প্রচার সম্পাদক শামীম ইসলাম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাসনাত লাবলু, কার্যকরী সদস্য আনোয়ার হোসানে, বিড়ি শ্রমিক নেতা ছাদ আলীসহ অন্যরা সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, দেশের প্রাচীন শ্রমঘন বিড়ি শিল্পে সমাজের অসহায়, সুবিধাবঞ্চিত, হতদরিদ্র, শারীরিক বিকলঙ্গ, বিধবাসহ লাখ লাখ শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। অথচ বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানির ষড়যন্ত্রে দেশের প্রাচীন শ্রমঘন এ শিল্পটি ধ্বংস করা হচ্ছে। তারা এ দেশের মানুষের ফুসফুস পুড়িয়ে বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করছে। একইসঙ্গে ব্রিটিশ বেনিয়াদের দোসর ও নব্য মীরজাফর আত্মা ও প্রজ্ঞা বিড়ি শিল্প ও শ্রমিক ধ্বংস করতে অপপ্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি বিড়ি শ্রমিকদের নিয়ে গবেষণার নামে তারা বহুজাতিক কোম্পানির সাজানো নাটকের মঞ্চায়ন করে মনগড়া ফলপ্রকাশের মাধ্যমে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তাদের এই ষড়যন্ত্র বন্ধ না হলে আমরা শ্রমিকদের নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব।
বক্তারা আরও বলেন, বিদেশি সিগারেট কোম্পানিগুলোকে একচেটিয়া ব্যবসার সুযোগ করে দিতে কতিপয় অসাধু আমলা বিড়ির ওপর ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মাত্রাতিরিক্ত করের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। বিড়ি মালিকরা এই মাত্রাতিরিক্ত করের বোঝা সহ্য করতে না পেরে কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে বিড়ি কারখানায় নিয়োজিত শ্রমিকরা কর্ম হারিয়ে বেকার জীবনযাপন করছেন।
তারা বলেন, কর্মসংস্থান না থাকাই পরিবার নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন শ্রমিকরা। শুল্ক বেড়ে যাওয়ায় অসাধু ব্যবসায়ীরা শুল্ক ফাঁকি দিতে জাল ব্যান্ডরোল ও ব্যান্ডরোলবিহীন নকল বিড়ি তৈরি করে বাজারজাত করছে। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়াও বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানির যোগসাজশে কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা সরেজমিনে পরিদর্শন ছাড়াই অস্তিত্বহীন বিড়ি কারখানার লাইসেন্স দিয়ে যাচ্ছে। ফলে নকল বিড়ি উৎপাদন বাড়ছে।
এ ধরনের কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয় সমাবেশে। একইসঙ্গে সরকারের কাছে বিড়ি শ্রমিকদের কল্যাণে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প চালুর দাবি জানান বক্তারা।
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর