Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে নিত্যপণ্যের দাম বেশি: সিপিডি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২০ মার্চ ২০২২ ১৯:২১

ঢাকা: সারাবিশ্বের প্রায় সব দেশেই চাল, ডাল, আটা, মাছ, মাংসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু বাংলাদেশে এসব পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি বলে জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

সংস্থাটি বলেছে, দেশে বাজার ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলার অভাব, চাহিদা-জোগান সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকাসহ কয়েকটি কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। জনগণের কষ্ট লাঘবে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম এ মুহূর্তে না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে সিপিডি বলছে, এসব পণ্যের দাম বাড়ালে অর্থনীতিতে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হবে। এই চাপ সামলানো সরকারের জন্য কঠিন হবে।

রোববার (২০ মার্চ) দুপুরে ধানমন্ডির সিপিডি কার্যালয়ে ‘পরিবর্তিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতি কোন পথে’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সংস্থাটির পক্ষ থেকে এসব কথা বলা হয়।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. ম তামীম, সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক ড. তৌফিকুল ইসলাম ও সৈয়দ ইউসুফ।

সিপিডির প্রতিবেদনে বলা হয়, গুঁড়ো দুধের মূল্য ইউরোপের তুলনায় বাংলাদেশে বেশি। অথচ তাদের তুলনায় আমাদের মাসিক আয় অনেক কম। অন্যদিকে, ডিমের ডজন ১১০ টাকা হলেও আমেরিকায় ১০৩ ও মালয়েশিয়ায় মাত্র ৮৫ টাকা। কিন্তু ক্ষতিকারক সিগারেটের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় প্রায় ৮ গুণ কম বাংলাদেশে। ২০ শলাকার নির্দিষ্ট একটি ব্র্যান্ডের এক প্যাকেট সিগারেটের মূল্য অস্ট্রেলিয়ার পার্থে দুই হাজার ৫১৬ টাকা, নিউজিল্যান্ডে দুই হাজার ১০৩ টাকা, ইংল্যান্ডে এক হাজার ৪৮৮ টাকা হলেও বাংলাদেশে মাত্র ৩০১ টাকা।

সিপিডি’র মতে, করোনা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ছে। ফলে সারাবিশ্বেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ঊর্ধ্বগতিতে অবস্থানে রয়েছে।

সিপিডি মনে করে, মানুষের আয় বেড়েছে। কিন্তু যে হারে আয় বেড়েছে, তার তুলনায় জিনিসপত্রের দাম অনেক বেড়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেছে। চলতি অর্থবছরে আমদানি-রফতানি বাড়লেও চলতি লেনদেনের ভারসাম্যে বড় ঘাটতি আছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ আগের চেয়ে কমে যাওয়ার কারণে এমনটি হয়েছে।

নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার পেছনে সিন্ডিকেটের প্রভাব রয়েছে বলেও মনে করছে সিপিডি। সংস্থাটি বলছে, কারা এসব অপকর্ম করছে, সে বিষয়ে সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য থাকলেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু আমদানি-রফতানির আড়ালে আন্ডার ও ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে দেশ থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। এই পাচার রোধ করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের যৌথভাবে নীতি তৈরি করতে হবে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, আমরা বলছি সারাবিশ্বে পণ্যের দাম বাড়ছে। একই কারণে বাংলাদেশেও দাম বাড়ছে। চাল, তেল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম একবছর ধরে বাড়ছে। অথচ এসব পণ্যের দাম বিশ্ববাজারের চেয়েও তুলনামূলকভাবে আমাদের দেশে অনেক বেশি।

তিনি বলেন, থাইল্যান্ড-ভিয়েতনামের তুলনায় বাংলাদেশে চালের দাম বেশি। অথচ তাদের তুলনায় বাংলাদেশে চাল বেশি উৎপাদন হয়। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে ময়দা, তেল, চিনি, পেঁয়াজ, গরুর মাংসের দামও অনেক বেশি। এই দামের তফাৎ অনেক দেশের তুলনায় অনেক বেশি। এই দাম ইউরোপ, আমেরিকার বাজারের তুলনায়ও আমাদের দেশে কয়েকগুণ বেশি।

তিনি বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যখন আকাশচুম্বী, তখন সরকারি তথ্যে মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল। এটি একটি বিপরীতমুখী চিত্র। মূল্য যখন বেশি, তখন মূল্যস্ফীতি কীভাবে স্থিতিশীল থাকে তা আশ্চর্যের বিষয়। পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে আমরা কিন্তু স্থিতিশীল মূল্যস্ফীতি লক্ষ করছি না। এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়, মূল্যস্ফীতি পরিমাপ করার জন্য যে স্ট্যান্ডার্ড ধরা হয়, সেটি গত কয়েক বছর ধরে একই আছে।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, সরকার যদি তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম না বাড়ায়, তাহলে অর্থনীতিতে চাপ আসবে না। কারণ এই চাপ সামলানোর মতো সক্ষমতা আছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এখন পর্যন্ত যে ঘাটতি আছে, তা সহনীয়। এ ছাড়া সরকারের কাছে পর্যাপ্ত তারল্য আছে। কাজেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা কঠিন হবে না।

তিনি বলেন, এই মুহূর্তে তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বাড়ালে অর্থনীতিতে যে চাপ তৈরি হবে, তা সামাল দেওয়া সরকারের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। সুতরাং এসব পণ্যের দাম বাড়ানো সঠিক হবে না।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের রফতানির পরিমাণ বাড়ছে। কিন্তু সে অনুযায়ী মূল্য পাচ্ছি না। আবার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় আমদানি ব্যয় বেশি হচ্ছে। ফলে বাণিজ্যব্যবস্থা ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। এটি আমাদের জন্য বর্তমানে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ম তামিম বলেন, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দিলে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাবে। জিডিপি কমে যাবে। অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধস নামবে। সরকারের এ পদক্ষেপ নেওয়া ঠিক হবে না।

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

টপ নিউজ দ্রব্যমূণল্য মূল্যস্ফীতি সিপিডি সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর