স্বাস্থ্যব্যবস্থার পুনর্গঠনে ৬ দফা সুপারিশ সাবেক মন্ত্রীর
২১ মার্চ ২০২২ ০০:৩১
ঢাকা: দেশের জনগণের কল্যাণে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পুনর্গঠন করে জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোর চিকিৎসাব্যবস্থার মান উন্নয়নসহ ছয় দফা সুপারিশ দিয়েছেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও জাতীয় সংসদের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি সদস্য ডা. আ ফ ম রুহুল হক।
রোববার (২০ মার্চ) রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে ‘বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বর্তমান চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পথরেখা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে এ সব সুপারিশ তুলে ধরেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক উপকমিটির সভাপতি, জাতীয় সংসদের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি সদস্য অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক।
তিনি বলেন, আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা রয়েছে। উপজেলা হাসপাতালের বেশিরভাগ পদ খালি থাকে। স্থানীয়ভাবে শূন্য পদগুলোতে সঙ্গে সঙ্গে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব। অনেক দেশেই এ ব্যবস্থা আছে। আমাদের জন্য কোন ব্যবস্থাটি সঠিক, তা নির্ধারণ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিক সুব্যবস্থাপনা দিয়ে দেশ এগিয়ে গেছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেড়েছে। কৃষিতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন, শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তনের সঙ্গে স্বাস্থ্যব্যবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। তা সত্ত্বেও সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে আমাদের স্বাস্থ্যসেবা সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারছে না। তাই স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে জনগণের অভিযোগ থেকেই যাচ্ছে।
এ সময় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পুনর্গঠনে তিনি ছয়টি সুপারিশ তুলে ধরেন। সুপারিশগুলো হলো—
১. স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় পদ তৈরি করা হলেও সে অনুযায়ী জনবল নেই। অব্যবস্থাপনা শুরু হয়েছে এখানেই। জনবলের নিয়োগের কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল সঠিক সময়ে নিয়োগ দেওয়া হয় না। জনবল (চিকিৎসক, নার্স, প্যারামেডিকস, ল্যাব টেকনিশিয়ান) নিয়োগের ব্যবস্থাপনা বিকেন্দ্রীকরণ না করলে এ অব্যবস্থাপনার সমাধান হবে না। বিকেন্দ্রীকরণের ধাপ নিয়ে আলোচনা ও গবেষণা করে নির্ধারণ করতে হবে;
২. চিকিৎসা শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে নবীন চিকিৎসকদের ক্যারিয়ার তৈরি করার জন্য চিকিৎসা শিক্ষাব্যবস্থাকে চার ভাগে বিন্যাস করতে হবে— ক্লিনিশিয়ান, শিক্ষক, প্রশাসন ও রোগ প্রতিরোধক। এই চার ভাগের স্বাস্থ্যব্যবস্থা থেকে একজন নবীন চিকিৎসক ভবিষ্যৎ কার্যপরিধি নির্ধারণ করবেন এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় অংশ নেবেন;
৩. রোগীদের উপজেলা ও জেলাভিত্তিক ইনডোর স্বাস্থ্যসেবা দিতে ডিজিটাল রেফারেল সিস্টেম চালু করতে হবে এবং অপেক্ষাকৃত জটিল রোগের জন্য উপজেলা থেকেই জেলা, বিভাগীয় ও বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে রেফারেল সিস্টেমের মাধ্যমে রোগী পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে;
৪. হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ক্রয় ব্যবস্থাপনা ও মেরামতের জন্য রোগীর সেবা ব্যাহত হয়। এ ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে হলে মেরামতের ব্যবস্থার জন্য অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান ও ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে বিকেন্দ্রীকরণ করে দ্রুত সময়ে সব যন্ত্রপাতি মেরামত করতে হবে এবং এ ব্যবস্থাকে মনিটরিংয়ের আওতায় আনতে হবে। এ জন্য বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগকে শক্তিশালী করতে হবে;
৫. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা হাসপাতালের পরিবেশ উন্নতির জন্য অপরিহার্য। রোগী ও রোগীদের সঙ্গে থাকা স্বজনের কথা চিন্তা করে সে অনুযায়ী টয়লেট ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ ও তদারকির জন্য জনবল জরুরি; এবং
৬. হাসপাতালের সেবা সম্পর্কে তথ্য প্রদানের এবং তত্ত্বাবধায়নের জন্য মানবিক জ্ঞানসম্পন্ন জনবল নিয়োগ দিতে হবে। তারা রোগীদের সঙ্গে ‘পাবলিক রিলেশন’ রক্ষায় ভূমিকা পালন করবেন।
সুপারিশ প্রস্তাবনা তুলে ধরেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের জনগণের জন্য সর্বজনীন চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে এবং একইসঙ্গে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বর্তমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার চিহ্নিত ত্রুটিগুলো বিজ্ঞানসম্মত ও আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। এ লক্ষ্য পূরণে যথাযথ পর্যালোচনার মাধ্যমে আমাদের দেশের জনগণের উপযোগী স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পুনর্গঠনের জন্য একটি কমিটি গঠন করে সবার অংশগ্রহণে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে এগিয়ে নেওয়া জরুরি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও জনগণের কল্যাণে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার পুনর্গঠন জরুরি বলে মন্তব্য করেন। তারা বলছেন, গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যে অবকাঠামো গড়ে উঠেছে তা প্রশংসনীয় হলেও কিছু সমস্যার কারণে স্বাস্থ্যব্যবস্থার ফলাফল মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী, জাতীয় সংসদের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি সদস্য ও কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ডা. জাকিয়া নূর লিপি, সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত মুন্না এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন।
সারাবাংলা/এসবি/টিআর
এ এফ এম রুহুল হক সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা