উত্তরা লেক উন্নয়ন প্রকল্পে খরচ বাড়ছে
২১ মার্চ ২০২২ ০৯:১১
ঢাকা: খরচ বাড়ছে উত্তরা লেক উন্নয়ন প্রকল্পে। এক্ষেত্রে, মূল ব্যয় বাড়ছে ৫৩ দশমিক ৪১ শতাংশ। সেই সঙ্গে বাস্তবায়ন মেয়াদও বাড়ছে পাঁচ বছর। প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।
এদিকে, ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের আওতায় ব্যয় হয়েছে ২৯ কোটি ৩৪ লাখ ৫৭ কোটি টাকা। যা অনুমোদিত ব্যয়ের ৩২ শতাংশ। বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৩৩ দশমিক ৫০ শতাংশ।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর ২০২১ সালের ৩১ মে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়। ওই সভার সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।
এ বিষয়ে প্রকল্পটি দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মামুন-আল-রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, মূল ডিপিপি প্রণয়নকালে প্রকল্পের কোন মাস্টারপ্ল্যান বা স্টাডি রিপোর্ট ছিল না। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের পর প্রণীত মাস্টারপ্ল্যান, জরিপ এবং বাস্তব প্রয়োজনে লেকের পানি পরিচ্ছন্ন করা, ওয়াকওয়ে নির্মাণ, মাটি ভরাট, তীর সংরক্ষণ, বর্জ্য অপসারণ, অফিস ইক্যুইপমেন্ট, ইন্সপেকশন পিট, পরিবেশগত সমীক্ষা ব্যবস্থাপনা ব্যয়, পরামর্শক ব্যয় ও অন্যান্য স্থাপনা মেরামতের কারণে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে উত্তরা লেক দখল হওয়া থেকে রক্ষা করে লেকের চারপাশে হাঁটার সুবিধা এবং ডাইভারশন ড্রেনেজের মাধ্যমে দূষণ প্রতিরোধকরণ ও পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে মহানগরীরর নান্দনিক সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি ও চিত্তবিনোদন সুবিধার উন্নয়ন হবে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, রাজউক ১৯৬৫-৬৬, ১৯৭৮-৮৮ ও ২০০০ সালে উত্তরা আবাসিক আদর্শ শহর প্রকল্পের আওতায় পর্যায়ক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্ব নেয়। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্ব বাস্তবায়নের ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকার পানি ভূ-উপরিস্থত ধারণ ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায় এবং পানির গুণগত মানেরও অবনতি ঘটে। উত্তরা আবাসিক মডেল টাউনের ৯৫ শতাংশ এলাকাতেই এখন অবকাঠামো গড়ে উঠেছে। বর্তমানে এখানে প্রায় ৫ থেকে ৭ লাখ লোকের বাস। কিন্তু, উত্তরা লেক ছাড়া এখানে আর কোন জলাধার এখানে নেই। আশেপাশের নদীর সঙ্গে লেকটির সংযোগও যথেষ্ট সচল নয়। ফলে বৃষ্টি হলেই এখানে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তাছাড়া লেকটির চারধারে সৌন্দর্য উপভোগ করার মতো কোনো অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা নেই। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রকল্পটি ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত ৩৭ কোটি ৩২ লাখ ৯৭ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৪ সালের ২১ মে একনেক সভায় অনুমোদিত হয়।
পরবর্তীতে দুই দফায় বাস্তবায়ন মেয়াদ বৃদ্ধি করে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য বাস্তবায়ন মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে, নতুন অঙ্গ সংযোজনঃ বাস্তব প্রয়োজনের কারণে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, ক্যাচ পিট এবং ওয়েস্ট বিন স্থাপন অন্তভুক্ত করা হয়েছে। বিদ্যমান অঙ্গ বিয়োজনঃ সেতু নির্মাণ, বক্স কালভার্ট, আরবরিকালচার, যানবাহন ক্রয় , বিদ্যমান কালভার্ট পুনবার্সন এবং ডিওয়াটারিং অঙ্গ বাদ দেয়া হয়েছে। অনুমোদিত ডিপিপিতে বক্স কালভার্ট নির্মাণ ও সেতু নির্মাণ খাতের ব্যয় বাস্তসম্মত না হওয়ায় হালনাগাদ রেট সিডিউল অনুযায়ী ব্যয় প্রাক্কলনে দেখা যায় এ খাতে ব্যয় অনেক বৃদ্ধি পায়।
এর আগে, ২০১৯ সালের ২৯ এপ্রিল গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রির সভাপতিত্বে সংশোধিত ডিপিপির উপর অনুষ্ঠিত পর্যালোচনা সভায় সেতু নির্মাণ, বক্স কালভার্ট এবং প্রবেশ গেইটসহ সীমানা দেওয়াল অঙ্গেও ব্যয় বাদ দিয়ে লেক খনন, স্লোপ প্রোটেকশন কাজ ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ অন্তভুক্ত করা যেতে পারে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়। তাই এ খাত দুটি বাদ দেওয়া হয়। পরামর্শক ডিজাইন ও সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় এই কাজের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে ভিন্ন ডিপিপি প্রণয়ন করে নতুন প্রকল্পের আওতায় তা বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে, ভুমি অধিগ্রগণ ও স্থাপনাপর ক্ষতি পূরণ, ওয়াকওয়ে, মাটি ভরাট, তীর সংরক্ষণ, অপসারন, বিদ্যুতায়ন, ৩০০ এম এম পাইপ স্থাপন, ৬০০ এমএম পাইপ স্থাপন, ৯০০ এম এমআরসিসি পাইপ, ইন্সপেকশন পিট, ক্যাচ পিট, গ্রাস টার্ফি, ওয়েস্ট বিন স্থাপন এবং রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করা হবে।
সারাবাংলা/জেজে/একেএম