বন্দুকযুদ্ধহীন ১০০ দিন
২১ মার্চ ২০২২ ১০:০২
ঢাকা: বছরের প্রথম তিন মাসে দেশে কোনো বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এমনকি দেশের কোনো সংবাদ মাধ্যম অথবা কোনো মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকেও বন্দুকযুদ্ধ ঘটেছে বা বন্দুকযুদ্ধে কেউ মারা গেছে এমন অভিযোগও তোলা হয়নি।
২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। তার পরবর্তী ১০০ দিনে দেশে কোনো বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেনি বলে র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের একাধিক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।
র্যাবের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, সম্প্রতি র্যাবের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের কোনো বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেনি। অতীতে যা হয়েছে তাতেও র্যাবের কোনো হাত নেই। আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করতে গিয়ে সন্ত্রাসীরা গুলি ছুড়লে আত্মরক্ষার্থে অনেক সময় গুলি ছোড়ে র্যাব সদস্যারা। এতে উভয়পক্ষই গুলিবিদ্ধ হয়েছে। অনেক সময় সন্ত্রাসীদের কেউ কেউ মারা গেছে।
মানবাধিকারের বিষয়ে জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, র্যাব সব সময় মানবাধিকার রক্ষা করে চলে। মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে এমন কাজ কখনোই করে না র্যাব। গত তিন মাসে দেখবেন সারাদেশে কি পরিমাণ ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়েছে। কত সংখ্যক পলাতক আসামিকে গ্রেফতার হয়েছে। কতগুলো ধর্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক প্রতারকচক্র থেকে শুরু করে জঙ্গি-সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এসব কাজের মধ্য দিয়ে নিশ্চয়ই মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়নি? বরং মানবাধিকার রক্ষা হয়েছে বলে দাবি র্যাবের।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পর গত ১০০ দিনে দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সন্দেহভাজন অপরাধীদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। স্প্যানিশ বার্তা সংস্থা ইএফই এই তথ্য দিয়েছে। এছাড়া দেশের সংবাদ মাধ্যমেও এই সময়ের মধ্যে এ ধরনের কোনো তথ্য আসেনি।
অবশ্য, এমন খবর অনেকটা স্বস্তিদায়ক হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া জটিল প্রক্রিয়া বলে উল্লেখ করেছেন ঢাকা সফররত মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের রাজনীতি বিষয়ক আন্ডারসেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড।
তিনি বলেন, র্যাবের কর্মকাণ্ড, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ রয়েছে। র্যাব কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি জটিল বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। এই নিষেধাজ্ঞা সহসাই উঠছে না এমন ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে, আরও আলোচনা হবে। নিষেধাজ্ঞা পরবর্তী ৩ মাসে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রমে যে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে সেই অগ্রগতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন (নন-পেপার) যুক্তরাষ্ট্রকে শেয়ার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ নিয়ে আগামী দিনে বিভিন্ন বৈঠকে কথা হবে। তিন মাসের অগ্রগতিতে যুক্তরাষ্ট্র সন্তুষ্ট কি না? এমন প্রশ্নে অবশ্য তিনি নীরব থেকেছেন।
রোববার (২০ মার্চ) বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের অষ্টম অংশীদারি সংলাপ শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন নুল্যান্ড। অংশীদারিত্ব সংলাপে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে কী আলোচনা হয়েছে, জানতে চাইলে ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারি, বিষয়টি জটিল ও সমস্যার। আমরা এ নিয়ে আজ আলোচনা করেছি।’
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালে কক্সবাজারে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডের পর অনেক দিন কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেনি। তবে মাঝেমধ্যেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে এবং কেউ কেউ নিহতও হয়েছে। এ ধরনের ঘটনাকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে তা বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছিল বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের হাতে এমন মৃত্যুকে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করা হয়েছিল মার্কিন নিষেধাজ্ঞায়।
সারাবাংলা/ইউজে/একেএম