খাগড়াছড়িতে ‘হোয়াইট গোল্ডে’ কৃষকের হাসি
২৩ মার্চ ২০২২ ০৮:০৭
খাগড়াছড়ি: ‘হোয়াইট গোল্ড-০১’ জাতের উন্নত মানের তুলার বাম্পার ফলন হওয়ায় হাসি ফুটেছে পাহাড়ের কৃষকের মুখে। স্থানীয় তুলার চেয়ে প্রায় চার গুণ বেশি ফলন হচ্ছে হোয়াইট গোল্ড-০১ তুলায়। দামও ভালো পাওয়ায় নতুন আশার সৃষ্টি হয়েছে কৃষক ও তুলা চাষ সংশ্লিষ্টদের মাঝে।
কৃষকেরা বলছেন, ফলন খুব ভালো এবং দামও ভালো পাচ্ছেন। কৃষিবিদরাও বলছেন, পুরো জেলায় পরিকল্পিতভাবে তুলার চাষ করা গেলে দেশের চাহিদা পূরণে অবদান রাখতে পারবে পাহাড়ের কৃষকেরা।
খাগড়াছড়ি তুলা উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, দেশে তুলার চাহিদা রয়েছে প্রায় ৭০ লাখ বেল, কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ১০ লাখ বেলের মতো। বাকি ৬০ লাখ বেল তুলা আনতে ২৫ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হয়। বিশ্বে তুলা আমদানিতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে আছেন বলেও জানান তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
দেশে তুলার চাহিদা মেটাতে প্রতিবছর নতুন নতুন পরিকল্পনা করে তুলা উন্নয়ন বোর্ড। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত ২০২১ সালে খাগড়াছড়ি জেলার ৯ উপজেলায় প্রায় ৪০০০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের তুলা চাষ করা হয়েছিলো। কিন্তু স্থানীয় তুলার গুণগত মান ও টেকসইত্ব খুব ভালো নয় বিধায় চলতি বছর স্থানীয় তুলার পাশাপাশি পরীক্ষামূলক ৩৮৪ হেক্টর জমিতে উন্নত মানের তুলার তথা হোয়াইট গোল্ড-০১ চাষ করা হয়।
হোয়াইট গোল্ড-০১ তুলা চাষে বাম্পার ফলন পাচ্ছে কৃষকেরা। স্থানীয় তুলা প্রতি হেক্টরে ৭ থেকে ৮ মন উৎপাদন হলেও উন্নত মানের তুলা প্রতি ২৫ থেকে ৩০ মন পর্যন্ত হচ্ছে। স্থানীয় তুলার মন গড়ে ১৫০০-২০০০ টাকা হলেও উন্নত মানের তুলা ৩৮০০-৪০০০ টাকা পাচ্ছেন কৃষকেরা। ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় খুশি কৃষকেরা। উন্নত জাতের তুলা বিক্রয়েও কোনো অসুবিধা নেই, তুলা উন্নয়ন বোর্ডই তুলা কিনে নিচ্ছে বলে সমস্যাও নেই বিক্রিতে। চলতি বছর খাগড়াছড়িতে সব মিলিয়ে ৫/৬ হাজার বেল তুলা উৎপাদিত হবে বলে আশা করছেন তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
হোয়াইট গোল্ড-০১ চাষের আগে, নয় উপজেলা থেকে প্রায় ১০০ কৃষককে উন্নত মানের তুলা চাষের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কৃষকদেরকে বীজ, সার, কীটনাশক দেওয়া হয়েছে বিনামূল্যে। তদারকি করেছেন তুলা উন্নয়ন বোর্ডে কর্মরত কৃষিবিদ কর্মকর্তারা। খাগড়াছড়িতে প্রায় ২০০ কৃষক স্থানীয় বা উন্নতমানের তুলা উদপাদন বাণিজ্যিকভাবে করছে। আরও কিছু কৃষক আছেন, তারা তুলা উৎপাদন করে নিজেদের চাহিদা মেটাচ্ছে।
মহালছড়ি উপজেলার মাইসছড়ি এলাকার কৃষক রুইপ্রু মারমা জানান, তাকে তুলা উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর তিনি এখন তুলার বীজ হতে চারা উৎপাদন এবং তুলার চাষ করছেন। চলতি বছর প্রায় ৪ হেক্টর পাহাড়ি ও সমতল জমিতে তুলা চাষ করেছেন।
তুলা চাষে খুব বেশি খরচ হয় না উল্লেখ করে তিনি জানান, পতিত জমি চাষের আওতায় এনে গড়ে ৪ মাসে আড়াই হতে তিন লাখ টাকা আয় করতে পারবেন। তুলা বিক্রয় করতেও কোনো সমস্য নেই, কারণ তুলা উন্নয়ন বোর্ড তুলা বিক্রয়ের সব সুযোগ করে দেয়।
খাগড়াছড়ি সদরের কুকিছড়া এলাকার তুলা চাষী সুচিত্র চাকমা জানান, তিনি তার পতিত প্রায় ২ হেক্টর জমিতে তুলা চাষ করেছেন। তুলা চাষ করে ৪ মাসে প্রায় দেড় হতে ২ লাখ টাকা আয় করতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন। তার মতো তার এলাকায় আরও ১৫/২০ জন তুলা চাষ করছে এবং সফলতাও পেয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
খাগড়াছড়ির প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘তুলা চাষ নতুন আশার সৃষ্টি করেছে। তারা বিভিন্নভাবে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে, তুলা বীজ, সার, ওষুধ দিয়ে সাহায্য করছেন।’
দিন-দিন তুলাচাষীর সংখ্যা বাড়লেও বাড়ছে না তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা। ফলে কৃষকদের মাঠ পর্যায়ে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘৯ উপজেলা অফিসের বেশিরভাগ চলে ১ জন স্টাফ দিয়ে। পাহাড়ে তুলার খুব ভালো ফলন হচ্ছে। সবাই মিলে চেষ্টা করলে খাগড়াছড়িতে প্রচুর তুলা উৎপাদন করা সম্ভব হবে।’
সারাবাংলা/এমও
খাগড়াছড়ি তুলা তুলা চাষ তুলার বাম্পার ফলন বাম্পার ফলন হোয়াইট গোল্ড