Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পানি দূষণের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান বর্জনের আহ্বান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২১ মার্চ ২০২২ ২৩:৩৩

ঢাকা: নদীসহ অন্যান্য জলাশয় দূষণে জড়িত প্রতিষ্ঠানের পণ্য বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। দেশে বহুল প্রচলিত দুইটি কোম্পানির বিরুদ্ধে পানি দূষণের অভিযোগ থাকার পরেও তারা সেটি সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি। এভাবে অনেক প্রতিষ্ঠানই সরাসরি নদী-খাল দখল ও দূষণের সঙ্গে জড়িত জানিয়ে দূষণ ঠেকাতে এসব প্রতিষ্ঠানকে বর্জনের তাগিদ দেন তিনি।

সোমবার (২১ মার্চ) বিশ্ব পানি দিবস ২০২২ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকার সিদ্বেশ্বরীর স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। রিভার অ্যান্ড সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট বাংলাদেশ (আরএসডিবি) আয়োজিত অনুষ্ঠানে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও ‘ভূগর্ভস্থ পানির অদৃশ্য সমস্যা ও সম্ভাবনাকে দৃশ্যমান করা’ শীর্ষক নাগরিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে রিজওয়ানা হাসান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রামের বড় একটি অংশ পানির নিচে চলে যাবে, যা লবণাক্ত পানি। ফলে আমাদের ভূগর্ভস্থ পানির ওপরই নির্ভর করতে হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সেটিও দূষণের শিকার। কারণ আমরা ভূ-উপরিস্থ পানি দূষণ করছি। দূষণের কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নামতে নামতে এরই মধ্যে ৮ থেকে ৩০ মিটারের নিচে নেমে এসেছে, যা অশনি সংকেত। ভূমিদস্যুরা মাটির ওপরের জলাশয় ভরাট করে ফেলছে, আবার ওপরের দূষণ নিচে পৌঁছে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সুপেয় বা ব্যবহারযোগ্য পানিই থাকবে না।

বাংলাদেশে ভূগর্ভস্থ পানির সংকটের চিত্র তুলে ধরেন রিজওয়ানা হাসান। বলেন, বাংলাদেশের সব জায়গার মানুষ কমবেশি পানির কষ্ট ভোগ করেন। নগরের মানুষ যেমন করে, তেমনি  গ্রামের মানুষও করে। ঢাকায় সাতটি নদী থাকার পরও আমাদের পানি আনতে হয় মেঘনা থেকে। এর কারণ আমরা ঢাকার নদীগুলোকে দূষিত করে ফেলেছি। উন্নয়নের নামে দূষণ করছি, যাকে আমরা স্বাভাবিক হিসেবে প্রচার করছি। কিন্তু এই ধারণা থেকে আমাদের বের হতে হবে যে চাইলে দূষণ না করে বা দূষণ নিয়ন্ত্রণ করেও উন্নয়ন করা যায়।

এসময় তিনি আরও বলেন, পানির দাবি জীবনের দাবি। দেশটা কি আমরা নদী আর ভূমি দখলকারীদের কাছে ইজারা দিয়ে দিয়েছি? উন্নয়নের নামে আমাদের ভূগর্ভস্থ পানি আর ভূ-উপরিস্থ পানি নষ্ট করা যাবে না। তা না হলে ভবিষ্যতে আর পানি পাওয়া যাবে না। ব্যাংক ভর্তি টাকা দিয়েও পানি পাওয়া যাবে না।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্টের নির্বাহী পরিচালক এস এম মঞ্জুরুল হান্নান খান বলেন, সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বর্জ্যগুলো আমরা যথাযথ নিয়মে সরিয়ে নিচ্ছি না। এতে আমাদের পানি ও পরিবেশের দূষণ বেড়েই চলেছে। আগামীর প্রজন্মকে সুন্দর বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার জন্য এখনই সচেতন হতে হবে এবং সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই এটা সম্ভব হবে।

এস এম মঞ্জুরুল হান্নান খান আরও বলেন, উন্নয়নের দোহাই দিয়ে পরিবেশ ও পানিকে আমরা নষ্ট হতে দিতে পারি না। প্রকৃতিকে আমরা যত বেশি আঘাত করব ততোই আমরা বিভিন্ন ভাইরাস বা মহামারিতে আক্রান্ত হব। আজ আমাদের এই ছোট্ট সোনামনিদের সুন্দর ভবিষ্যৎ গঠনের জন্য অবশ্যই পানি ও পরিবেশকে নিরাপদ রাখতে হবে।

রিভার অ্যান্ড সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট বাংলাদেশের সিনিয়র সহসভাপতি মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার। তিনি বলেন, দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আজ শিশুরা পানির যে ছবি এঁকেছে, সেটিকেই হয়তো তারা একমাত্র পানি হিসেবে চিনতে শিখবে। পশ্চিমা ভোগবাদী নীতির কারণে আজ জ্বালানির জন্য দেশে দেশে যুদ্ধ। এর ফলেই আমরা পলিথিন ছাড়া কিছু বুঝি না। অথচ চাইলেই প্লাস্টিকমুক্ত জীবন গড়া যায়।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই আগত অতিথি ও অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন রিভার অ্যান্ড সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল গাজী। বিকেল ৩টায় শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে বিকেল ৪টায় শেষ হয়। এসময় শিশুরা তাদের বিভিন্ন চিত্রকর্মের মাধ্যমে পানি দূষণ ও এর প্রতিকারের উপায় তুলে ধরেছে। এরপরই জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় নাগরিক সংলাপ।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ মো. মনির হোসেন চৌধুরী, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড.মাহমুদা পারভিন, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ প্রথম শ্রেণি খাদ্য কর্মকর্তা সমিতির নিরাপদ খাদ্য, পানি ও পুষ্টি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মু মোহসীন আলী, আরপিএম ডিভিশন ড্রপের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর আমির খসরু, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক গুলশান আরা লতিফা ও ন্যাপ মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূইয়া।

নাগরিক সংলাপে অতিথি বক্তারা বলেন, সুস্থ ও সুন্দর জীবনের জন্য নিরাপদ পানি অপরিহার্য। বাংলাদেশে নিরাপদ পানি সংকট সবচেয়ে বড় সংকট। এর সমাধান খুব সহসাই সম্ভব নয়। তবে সবাই আন্তরিক হলে খুব বেশি সময় লাগার কথা নয়। জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদেরই এ বিষয়ে বেশি আন্তরিকতা দরকার। তবে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাই হতে পারে এর সমাধানের একমাত্র উপায়।

মো. মঞ্জুরুল হোসাইন এশার সঞ্চালনায় অতিথিদের ক্রেস্ট প্রদান ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী শিশুদের পুরস্কার বিতরণের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

সারাবাংলা/আরএফ/টিআর

টপ নিউজ বিশ্ব পানি দিবস সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর