Thursday 06 Feb 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দেশের ৭৩ শতাংশ জমিতে সেচ দেওয়া হয় ভূগর্ভস্থ পানিতে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২২ মার্চ ২০২২ ১০:৫২ | আপডেট: ২২ মার্চ ২০২২ ১০:৫৩

মোট চাষকৃত জমির প্রায় ৭৩.৪৪ শতাংশ ভূগর্ভস্থ পানি এবং বাকি ২৬.৫৬ শতাংশ ভূউপরিস্থ পানির দ্বারা সেচ করা হয়। অতিমাত্রায় ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে, নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর, বাড়ছে ঝুঁকি।

সোমবার (২১ মার্চ) ‘ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার ও জলবায়ু পরিবর্তনে করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা এসব তথ্য উঠে আসে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), বাংলাদেশ নিরাপদ পানি আন্দোলন (বানিপা) ও মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে এই সভার আয়োজন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

২২ মার্চ বিশ্ব পানি দিবস। ১৯৯৩ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হচ্ছে। দিবসটি উদযাপনের মূল লক্ষ্য- বিশ্বব্যাপী পানি সংকট সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ৬ এ বর্ণিত ২০৩০ সাল নাগাদ সকলের জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ কার্যক্রমকে বেগবান করা। এ বছরের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘ভূগর্ভস্থ জল: অদৃশ্যকে দৃশ্যমান করা’।

সভায় জানানো হয়, বাংলাদেশ বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক পানিতে তলিয়ে যাওয়া এবং শুষ্ক মৌসুমে পানি ঘাটতির অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। শুষ্ক মৌসুমে কৃষি কাজে ভূউপরিস্থ পানি মাধ্যমে পরিচালিত সেচ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। ফলে বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্য চাহিদা পূরণে সেচ কাজে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে। ১৯৮০-৮১ সালে ২০,৯০০টি অগভীর নলকূপ এবং ২০১৭-১৮ সালে ১৩,৫৫,৮৫২টি অগভীর নলকূপ, ৩৭,৫৩৮টি গভীর নলকূপ এবং ১,৮১,৪৬৯টি অগভীর পাম্পের মাধ্যমে সেচ কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে বানিপার সাধারণ সম্পাদক এম এ ওয়াহেদের সঞ্চালনায় উক্ত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌ. মো. আবদুস সোবহান, বানিপার সভাপতি প্রকৌ. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্রের মহাসচিব মাহবুল হক, পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি আমির হাসান মাসুদ, পবার সদস্য ইঞ্জি. তোফায়েল আহমদ, দেবীদাস ঘাট সমাজ কল্যাণ সংসদের সভাপতি মো. মুসা, মৃত্তিকার সমন্বয়ক খাদিজা খানম, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রোজেক্ট অফিসার পদ্মা সাহা, নাসফ এর কেন্দ্রীয় কমিটি আইন বিষয়ক সম্পাদক মো. ওমর ফারুক, কবি লেখক কামরুজ্জামান ভূইয়া, বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাসিবুল হক পুনম ও জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটি সহ-দফতর সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. হারুনুর রশিদ সুমন প্রমুখ।

বিজ্ঞাপন

সভায় বক্তারা বলেন, ‘পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং খাবার পানি সরবরাহ, নৌ চলাচল, কৃষি ও শিল্প উৎপাদনে নদীর গুরুত্ব অপরিসীম। এদেশে রয়েছে ছোট বড় ৪০৫টি নদী। মানুষের অত্যাচারে নদীগুলো আজ মৃতপ্রায়। দখল, ভরাট ও বর্জ্যে নদীগুলো এখন নিস্তব্ধ। দূষণের ভারে পানি ব্যবহারের অযোগ্য এবং জীববৈচিত্র্য শূন্য হয়ে পড়ছে। ফলে পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীবন-জীবিকা আজ মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন।’

তারা বলেন, ‘তিস্তার পানি প্রবাহ ব্যাপকহারে কমে গেছে। পদ্মা, তিস্তা এখন মৃতপ্রায়, যমুনায় পড়েছে চর। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা দখল, ভরাট ও দূষণের ভারে বিষাক্ত নিঃশ্বাস ফেলছে। যে পানির অপর নাম ছিল জীবন আজ সেই বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যার পানির ওপর নাম বিষ হিসাবে পরিলক্ষিত হয়। যেখানে এখন জলজ ও প্রাণী বসবাসের অনুপযোগী হয়ে গেছে।’

বক্তাদের আলোচনায় উঠে আসে, বছরে ১.২- ২.৪ বিলিয়ন টন পলি নদীবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এতে নদীগুলোর তলদেশ ক্রমান্বয়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও নদীগুলো দখল, ভরাট ও দূষণের শিকার। ফলে নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে, নৌ চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে এবং নদীর পানি ব্যবহারের অনুপযোগী পড়ছে। ভাটির দেশ হিসাবে অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা না পাওয়ায় আমাদের দেশে পানি সংকট আরও ঘনিভূত হচ্ছে এবং নৌ চলাচল, সেচ ব্যবস্থা ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে।

নদীতে পানি কমে যাওয়া বা না থাকায় ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীলতা ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানি কমে যাওয়া এবং নদী হারিয়ে যাওয়ার কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিনিয়ত নিচে নেমে যাচ্ছে। প্রকৃতি নির্ভর ধান চাষের পরিবর্তে খরা মৌসুমে সেচ ও রাসায়নিক সার নির্ভর ধান চাষের ফলে ভূউপরিস্থ ও ভূগর্ভস্থ পানি সংকট তীব্রতর হচ্ছে।

আলোচনা সভায় বেশকিছু সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। সুপারিশগুলো হলো-
১. ভূপৃষ্টের পানি ব্যবহার ব্যবহারের বিষয়টি নগর পরিকল্পনা, বসতবাড়ী পরিকল্পনা বাধ্যতামূলকভাবে যুক্ত করা। ঢাকা ওয়াসা সহ সকল নগরীতে ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে নদী বা জলাশয়ের পানি ব্যবহারের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে স্বল্প মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদী মাস্টার প্লান প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
২. প্রকৃতি ও পরিবেশবান্ধব পানি ব্যবস্থাপনায় চাষাবাদ পদ্ধতির প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা। কৃষি, শিল্পে ও ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরতা কমিয়ে ভূউপরিস্থ পানি ব্যবহার জন্য বিভিন্ন মেয়াদী মহাপরিকল্পনা মাফিক অগ্রসর হওয়া জরুরী।
৩. বৃষ্টির পানি সোককুপ এর মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানির উন্নয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৪. পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় আবাসিক/অনাবাসিক এলাকায় সেফটিক ট্যাংক ও সোককুপ স্থাপনের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
৫. জলাধার রক্ষায় পানি আইনের কঠোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।
৬. পানি সরবরাহ কর্তৃপক্ষকে আগামী ২ বছরের মধ্যে ভূপৃষ্টের পানি ৯০ % ব্যবহারের জন্য বাধ্য করা।
৭. নাগরিকদের মাঝে পানির গুরুত্ব অনুধাবনের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা।
৮. ড্রেজিং করে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি করা এবং অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা প্রাপ্তির লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৯. খরা মৌসুমে সেচ ও রাসায়নিক সার নির্ভর ধান চাষের পরিবর্তে প্রকৃতি নির্ভর ধান চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করা।
১০. অপরিশোধিত শিল্পকারখানায় বর্জ্য ও পয়:বর্জ্য, নৌযানের বর্জ্য, কঠিন বর্জ্য নদীতে ফেলা বন্ধ করা।
১১. ঢাকার আশেপাশের নদীসহ অন্যান্য সকল নদী ও জলাশয় দখল, ভরাট ও দূষণ রোধকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
১২. নদী দূষণমুক্ত করা। নদীর পানি কৃষিও শিল্পে এবং পরিশোধন করে খাবার পানি হিসাবে ব্যবহার করা।
১৩. নদীর প্রবাহ ও নাব্যতা যথাযথ রাখার লক্ষ্যে নদীতে পিলারসমৃদ্ধ ব্রীজের পরিবর্তে ঝুলন্ত  ব্রিজ বা টানেল নির্মাণ করা

সারাবাংলা/আরএফ/এএম

ভূগর্ভস্থ পানি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর