বাবুল আক্তারের হাতের লেখার নমুনা সংগ্রহ
২২ মার্চ ২০২২ ১৪:৩১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: মাহমুদা খানম মিতু খুনের মামলায় আসামি তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের হাতের লেখার নমুনা আদালতের নির্দেশে সংগ্রহ করেছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। কথিত বান্ধবীর কাছ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া বইয়ে থাকা কিছু হাতের লেখা বাবুল আক্তারের লেখার সঙ্গে মেলে কি না, সেটা জানতেই তদন্তকারী কর্মকর্তা এ পদক্ষেপ নিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২২ মার্চ) দুপুরে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আব্দুল হালিমের উপস্থিতিতে তাঁর খাস কামরায় বাবুল আক্তার নিজের হাতের লেখার নমুনা দেন। এসময় তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগরের পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক সেখানে উপস্থিত থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন।
এর আগে মঙ্গলবার সকালে বাবুল আক্তারের হাতের লেখার নমুনা নেয়ার জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের সামনেই নমুনা সংগ্রহের নির্দেশ দেন।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) কামরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে বাবুল আক্তার হাতের লেখার নমুনা দিয়েছেন। এখন সেটা তদন্তকারী কর্মকর্তা হাতের লেখা বিশারদের কাছে উপস্থাপন করবেন। ল্যাবের এক্সপার্টদের কাছেও নিয়ে যেতে পারবেন। তখন উনারা মতামত দেবেন যে, বইয়ের লেখার সঙ্গে সেটা মিলে কি না।’
মিতু খুনের মামলায় জব্দ করা আলামতের মধ্যে একটি বই আছে। ওই বই বাবুল আক্তার তার কথিত বান্ধবীর কাছ থেকে উপহার পেয়েছেন বলে তথ্য আছে তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে।
পিবিআই পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘বইয়ের তৃতীয় পাতায় কিছু হাতের লেখা আছে। ২৭৬ পৃষ্ঠায়ও কিছু লেখা আছে। এখানে বাবুলের হাতের লেখা আছে কি না, তা পরীক্ষার জন্য নমুনা নিতে আদালতে আবেদন করা হয়েছিল।’
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রীকে খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদসহ নানা নাটকীয়তার পর ওই বছরের আগস্টে বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
হত্যাকাণ্ডের পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন প্রথম এই খুনে বাবুলের জড়িত থাকার সন্দেহ প্রকাশ করেন। নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাত ঘুরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলার তদন্তভার পড়ে পিবিআইয়ের ওপর। এরপর আস্তে আস্তে জট খুলতে থাকে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টিকারী চাঞ্চল্যকর এই মামলার।
২০২১ সালের ১১ মে বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। তদন্তে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের লক্ষ্যে ১২ মে ওই মামলার ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয় পিবিআই।
একইদিন (১২ মে) দুপুরে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার বাকি সাত আসামি হলেন- মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু, মো. সাইদুল ইসলাম সিকদার সাক্কু এবং শাহজাহান মিয়া। ওই মামলায় বাবুলকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
মামলায় মোশাররফ হোসেন অভিযোগ করেন, বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত এক নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের জেরে বাবুল আক্তার তার স্ত্রীকে হত্যা করে।
তবে মোশাররফ হোসেনের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে সেটি নিষ্পত্তি করেছে পিবিআই। আদালতের নির্দেশে এখন শুধুমাত্র বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলাটির অধিকতর তদন্ত চলছে। ওই মামলায় বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
সারাবাংলা/আরডি/এসএসএ