আস্থা ফেরান, কাজে নিরপেক্ষতার প্রমাণ দিন— ইসিকে বিশিষ্টজনরা
২২ মার্চ ২০২২ ১৮:৪৬
ঢাকা: অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সাহসী হতে তাগাদা দিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনেরা। তারা নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি আস্থা ফেরানো, ইভিএমে ব্যবহার না করা, দলীয় সরকারের সময় প্রভাবমুক্ত নির্বাচন করাসহ নানা পরামর্শ দিয়েছে। সেইসঙ্গে দায়িত্ব পালনে প্রতিবন্ধতা পেলে বর্তমান কমিশনকে প্রয়োজনে পদত্যাগেরও পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার (২২ মার্চ) নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে দ্বিতীয় ধাপের এ সংলাপে অংশ নিয়ে বিশিষ্টজনেরা এসব কথা বলেন।
সংলাপে অংশ নিয়ে সিপিডির ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘ইভিএমের ব্যবহার অত্যন্ত বিতর্কিত বিষয়। এটা থেকে দূরে থাকা ভালো। ইভিএম নিয়ে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও জটিল করতে দিতে পারে। ইভিএম ঝুঁকি নিয়ে ব্যবহার করা উচিত নয়।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন ব্যবস্থাপনার উপর আস্থা ফিরিয়ে আনাই চ্যালেঞ্জ। নির্বাচনকালীন আইন-বিধির যথাযথ প্রয়োগ করতে পারেন কি না তা দেখা যাবে। অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন করবেন। সাহসিতার সঙ্গে কাজ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন, প্রতিবন্ধকতা এলে পদত্যাগের সাহস রাখবেন।’
সিপিডির মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ইভিএম ব্যবহার করলেই প্রশ্নবিদ্ধ হবেন। একটি ভালো ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন দেবেন।’
লেখক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ যন্ত্রে যে ম্যানুপুলেট করা যায় না, তা নিশ্চিত না করে ব্যবহার করা যাবে না।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাস উদ্দিন বলেন, ‘ইভিএম সব সময় বিতর্কিত। এটার সমাধান না করে ব্যবহার করা ঠিক নয়। জোরের সঙ্গে বলব, ইভিএম ব্যবহার না করার জন্য।’
ফরাস উদ্দিন বলেন, ‘ভোটের-আগে পরে ছয় মাস নির্বাচনকালীন কর্তৃত্ব কমিশনের কাছে থাকা উচিত। ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে একাদশ সংসদের অধিবেশন থাকবে না। এ জন্যে ভোটের আগে চার মাস, ভোটের পরে দুই মাস- এ ছয় মাসের জন্য ক্ষমতা ইসির হাতে থাকতে পারে। আস্থা অর্জন করতে পারলে সবাইকে নিয়ে শান্তিপূর্ণ ভোট করা সম্ভব।’
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ইভিএম’র বিরোধিতা করে বলেন, ‘বিনা টেন্ডারে কীভাবে ইভিএম এলো। ইভিএম নিয়ে এক জনের এত উৎসাহ কেন, তা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে। কোনোভাবে বড় পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না। চাইলে ৫-১০ কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করতে পারে, তবে এটা না হওয়াই ভালো। দুয়েকজন ইভিএমের পক্ষে মত দিলেও ইভিএমের ভোটে পোলিং এজেন্ট না রাখার প্রস্তাব করেন।’
তিনি বলেন, ‘সার্চ কমিটির কারণে বর্তমান কমিশন কিছুটা আস্থা সংকটে পড়েছে। সবার নাম প্রকাশ করেনি কমিটি। এছাড়া নূরুল হুদা কমিশনের সাবেক সচিব ও আরেক সাবেক সচিবের শ্বশুর আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ায় নতুন ইসির দুই সদস্য নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।’ এ সময় জোনায়েদ সাকি ও মাহমুদুর রহমান মান্নার দলের নিবন্ধন দেওয়ারও অনুরোধ করেন তিনি।
লিডারশিপ স্টাডিজ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. সিনহা এম এ সাঈদ, বলেন, ‘ইসির এত সংলাপ করার মানে হচ্ছে এখানে সংকট রয়েছে। আপনার কাজ দিয়ে প্রমাণ করুন, আস্থা অর্জন করুন সবার। নির্বাচনের সময় কতটুকু নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারেন সংশয় রয়েছে। আমি আশাবাদী মানুষ।’
অন্যদিকে টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্যে আইনে কোনো পরিবর্তন করা যায় কি না তা চিহ্নিত করেন আপনারা।’ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দেন তিনি। সরকারের অনুগত না থেকে রাষ্ট্রের জন্য কাজ করে যাওয়ার পরার্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে ইস্তফা দেবেন। সব অংশীজন, ভোটার, আমরা আপনাদের পক্ষে আছি।’
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘ভোটাররা নির্বাচনবিমুখ হয়ে পড়েছে। ইসি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অতীতের ভুলভান্তি স্বীকার করে কাজ এগিয়ে নিতে হবে।’ তিনি জানান, ক্ষমতায় থেকে নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব নয়। গত দুটি নির্বাচনে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করার বিষয়টি সরকার প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম