‘এক পায়ে’ ট্রাক চালিয়ে কেড়ে নিল ৫ প্রাণ
২২ মার্চ ২০২২ ১৮:৫৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় ট্রাকচাপায় প্রাইভেটকারের পাঁচ যাত্রী নিহতের ১৮ ঘণ্টার মধ্যে র্যাব ট্রাক চালককে গ্রেফতার করেছে। র্যাব জানিয়েছে, ১৬ বছর আগে এক সড়ক দুর্ঘটনায় ওই চালকের ডান পা পুরোপুরি অকেজো হয়ে যায়। এক পায়ের শক্তি নিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ট্রাক চালাতে নেমেছিল ওই চালক। ভারী যানবাহন চালানোর কোনো লাইসেন্সও তার ছিল না। কারের সঙ্গে প্রথমে ধাক্কা লাগার পর এক পা দিয়ে ট্রাক নিয়ন্ত্রণে আনতে না পেরে সেটি তুলে দেয় গাড়ির ওপর।
মঙ্গলবার (২২ মার্চ) ভোররাত সাড়ে তিনটার দিকে নগরীর ডবলমুরিং থানার রশিদ বিল্ডিং এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করেন র্যাব সদস্যরা।
গ্রেফতার মোহাম্মদ রিপনের (৩১) বাড়ি ভোলা জেলার লালমোহন উপজেলার মহেশখালী গ্রামে। বাসা চট্টগ্রাম নগরীর নিমতলা এলাকায়।
সোমবার (২১ মার্চ) ভোরে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর এলাকায় মহাসড়কে ট্রাক ও প্রাইভেট কারের সংঘর্ষে পাঁচ জন নিহত হন। নিহতরা হলেন- হারুনর রশিদ হীরণ (২৬), মুহাম্মদ হুমায়ুন (২৫), খোরশেদ আলী সাদ্দাম (৩১), রিজভী শাকিব (২৬) এবং মনছুর আলী (২৩)। প্রায় সময়বয়সী পাঁচ বন্ধু চট্টগ্রাম শহর থেকে কক্সবাজারে বেড়াতে যাচ্ছিলেন।
ট্রাক চালককে গ্রেফতারের পর মঙ্গলবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের চট্টগ্রাম জোনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ জানান, দুর্ঘটনার পর রিপন ঘটনাস্থল থেকেই পালিয়ে চট্টগ্রাম নগরীতে চলে আসে। রাতে সে নগরীর ডবলমুরিং থানার রশিদ বিল্ডিং এলাকায় এক বাসায় আত্মগোপন করে থাকার সংবাদ পায় র্যাব। এর ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
রিপনকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তিনি জানান, রিপন ২০০৪ সালে ভোলা থেকে চট্টগ্রাম নগরীর নিমতলায় এসে হিউম্যান হলারের চালকের সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত সহকারী হিসেবেই ছিল। তবে মাঝে মাঝে গাড়িও চালাত। এভাবে গাড়ি চালাতে গিয়ে ২০০৬ সালে দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হয়। তার ডান পা অকেজো হয়ে যায়। কিন্তু ২০১৫ সালে তাকে হালকা যানবাহন চালানোর জন্য বিআরটিসি থেকে লাইসেন্স পায়। এরপর ভারী যানবাহন চালানোর লাইসেন্সের আবেদন করলে শারীরিক অযোগ্যতা বিবেচনায় দেওয়া হয়নি।
তবে লাইসেন্স ছাড়াই রিপন ভারী যানবাহন চালাতে শুরু করে। সম্প্রতি কক্সবাজার জেলার পেকুয়ায় মেরিন ড্রাইভ ও চারলেনের সড়ক নির্মাণের পাথর পরিবহনের কাজে যুক্ত হয়। ভারী ডাম্পার ট্রাক চালানোর কোনো অভিজ্ঞতা এবং লাইসেন্স না থাকার পরও তাকে এ কাজে যুক্ত করা হয়।
র্যাব কর্মকর্তা এম এ ইউসুফ বলেন, ‘সোমবার মূল চালকের বদলি হিসেবে ডাম্পার ট্রাক নিয়ে পেকুয়ায় গিয়ে পাথর খালাস করে আবার ফিরে আসছিল রিপন। আমরা জানতে পেরেছি, শুরু থেকেই সে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ট্রাক চালাচ্ছিল। লোহাগাড়ায় এসে বিপরীতমুখী প্রাইভেটকারকে সামনে থেকে ধাক্কা দেয়। প্রথম ধাক্কায় প্রাইভেটকারটি থেমে যায়। এসময় রিপন যদি ব্রেক কষে ট্রাক থামাতে পারত, তাহলে প্রাণহানি হত না। কিন্তু ডান পা অকেজো থাকায় সে ব্রেক কষতে পারেনি এবং ট্রাক সম্পূর্ণভাবে কারের ওপর উঠে যায়।’
দুর্ঘটনার সময় ট্রাকে কোনো সহকারী ছিল না এবং রাস্তার বাম পাশ থেকে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ডান পাশে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটায় বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
গ্রেফতার রিপনকে লোহাগাড়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে র্যাবের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম