মশার উৎপাতে বিব্রত চসিক মেয়র রেজাউল
২৩ মার্চ ২০২২ ১৫:০৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে অসহনীয় মশার উৎপাতে নিজেও বিব্রত বলে জানিয়েছেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এমন পরিস্থিতির জন্য তিনি জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় নগরীর বিভিন্ন খাল-নালায় দেওয়া বাঁধের কারণে পানি আটকে থাকাকে দায়ী করেছেন। খাল-নালা দিয়ে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ সমস্যার সমাধান দেখছেন না মেয়র।
মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের এক বছরে নিজের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানাতে বুধবার (২৩ মার্চ) সকালে সংবাদ সম্মেলনে আসেন রেজাউল করিম চৌধুরী। নগরীর আন্দরকিল্লায় নগর ভবনের কে বি আব্দুস ছাত্তার মিলনায়তনে মেয়র সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।
মশার উৎপাতে নগরবাসী অতীষ্ঠ, সমাধান কোন পথে- জানতে চাইলে মেয়র বলেন, ‘মশার উৎপাতের বিষয় আমি অস্বীকার করি না। মশা নিধনের ওষুধ প্রয়োগের জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল একটি ফর্মূলা দিয়েছেন। সেটা আমরা প্রয়োগ করছি। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ওষুধও প্রয়োগ করছি। কিন্তু মশা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। অবস্থা এমন হয়েছে, দিনেও মশা, রাতেও মশা।’
জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শহরের ৩৬টি খালে বাঁধ দেয়া হয়েছে। এ কারণে খাল-নালায় খণ্ড খণ্ড হয়ে পানি জমাট বেঁধে আছে। পানি যেতে পারছে না। আমি কয়েকদিন আগে ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়েছিলাম। সেখানে মানুষ মশার অত্যাচারের কথা আমাকে বলেছেন, আমি নিজেই বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যাই। দেখি খালের মধ্যে দেয়া বাঁধে পানি আটকে আছে। একটা ঢিল ছুঁড়ে দেখলাম, হাজার-কোটি মশা। অথচ তিনদিন আগে আমাদের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা সেখনে মশার ওষুধ ছিটিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুতরাং পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক না হলে মশার উপদ্রব কমবে না। জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা মশা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। মশা পুরোপুরি নির্মূল হয়ত করা সম্ভব হবে না, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করতেও আমাদের অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’
সিটি করপোরেশনে অস্থায়ীভাবে একজন কীটতত্ত্ববিদ নিয়োগ দেয়া হয়েছে জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘আমরা বিশেষজ্ঞ মতামত নিয়ে ওষুধ প্রয়োগ করে মশা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। কিন্তু এটা খুবই দুরূহ হয়ে গেছে। কারণ জমে থাকা পানিতে কোটি কোটি মশা উৎপন্ন হচ্ছে। অথচ শহরের বাইরে গ্রামে যান, দেখবেন এখানকার মতো এত মশা সেখানে নেই। কারণ সেখানে পানি জমে থাকার সুযোগ কম। এখানে জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ তো আছেই, এরপর ওয়াসাও রাস্তাঘাটে গর্ত করে রেখে দেয়, সেখানে পানি জমে। আর পানি জমলেই মশা। এই মশা নিয়ে আমি খুবই বিড়ম্বনায় আছি।’
খালের বাঁধ তুলে না নিলে সামনের বর্ষায় জলাবদ্ধতা আরও ‘ভয়াবহ’ হবে জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ আমি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি। কয়েকদিন আগেও সমন্বয় সভা করেছি। সব সংস্থা একসঙ্গে বসেছিলাম। কিন্তু একটা বিষয় আমি বারবার বলছি যে, গত বর্ষায় যদি একগলা পানিতে থাকি, এবার পানি মাথার ওপর উঠবে। এপ্রিলের শেষে যদি বাঁধ খুলে দেয়া না হয়, তাহলে আমি জীবন দিয়েও মানুষকে জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা করতে পারব না।’
গত বর্ষায় বেস্টনিবিহীন খাল-নালায় পড়ে চারজনের মৃত্যু হয়। প্রাণহানি ঠেকাতে বেস্টনি দেয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সড়কের পাশে মানুষের চলাচল আছে, এমন এলাকায় উন্মুক্ত খাল-নালার পাড়ে আমরা কোথাও গ্রিল দিয়ে, আর কোথাও দেওয়াল তুলে দিচ্ছি। কিন্তু নগরীতে সিডিএসহ বিভিন্ন সংস্থা উন্নয়ন কাজ করছে। ডিপিপিতে লেখা আছে, যেসব এলাকায় উন্নয়ন কাজ হচ্ছে সেখানে রক্ষাণাবেক্ষণের পুরো দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সংস্থার। সুতরাং সেখানে সিটি করপোরেশনের যাবার সুযোগ নেই।’
আবর্জনা অপসারণ নিয়ে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহরকে ছয়টি জোনে ভাগ করে ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করা হচ্ছে। সকালে ময়লা নেয়ার পর আবার দেখা যায়, দিনের ১০টা-১১টার দিকেও মানুষ ময়লা ফেলছে। বাস্তবতা হচ্ছে, মানুষেরও অভ্যাসের কিছু পরিবর্তন করতে হবে। একটা খাল বা নালা পরিস্কার করা হয়, কিন্তু ১৫ দিন পর দেখা যায় সেখানে আবার ময়লা-আবর্জনা, শুধু পলিথিন আর পলিথিন। এই পলিথিন বন্ধে আমি অভিযান শুরু করেছিলাম। ব্যবসায়ীরা সময় চেয়েছিল। সময় দিয়েছি। আমি বলে দিয়েছি, সময়সীমা শেষ হলে আমি কঠোর হব।’
আগের মেয়রের আমলে করা সৌন্দর্যবর্ধন চুক্তি নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সৌন্দর্যবর্ধনের নামে অনেকে সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে জায়গা বরাদ্দ নিয়েছে, গাছ তিনটা লাগিয়েছে, এরপর দোকান বানিয়ে ভাড়া দিয়েছে। আমি জরিপ করেছি। এ ধরনের অনেক চুক্তি আমি বাতিল করেছি। সময়সীমা শেষ হওয়ার পর অনেকগুলো আর নবায়ন করা হয়নি। যেগুলো আছে সেগুলোর সময় বাড়ানো হবে না।’
ফুটপাতের ওপর দোকান নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘গত এক বছরে আমি ফুটপাতে একটি দোকানও বরাদ্দ দিইনি। আমি যেখানে ফুটপাতের ওপর থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করছি, সেখানে আমি দোকান কেন বরাদ্দ দেব ? আগে যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা দিয়েছেন। চুক্তিগুলো এমনভাবে করেছেন, এখন চাইলেও আমি বাতিল করতে পারছি না।’
বিভিন্ন সড়কে লাগানো এলইডি বাতি চুরি হয়ে যাচ্ছে তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, ‘এলইডি বাতিগুলো প্রায় চুরি হচ্ছে। চোর ধরা হয়েছে, পুরো গ্যাংসহ ধরা হয়েছে। তবুও চুরি হচ্ছে। ফ্লাইওভারের পিলারে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য এলইডি বাতি লাগিয়েছি। এক সপ্তাহও রাখতে পারছি না। চোর চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে।’
বহুল আলোচিত চট্টগ্রাম নগরীর পোর্ট কানেক্টিং সড়কের কাজ ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে জানান মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।
এক বছরের কর্মকাণ্ডে নিজেকে সফল নাকি ব্যর্থ মনে করেন, এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘নিজের সফলতা-ব্যর্থতা নিজে পরিমাপ করা কঠিন। এটা পরিমাপ করবেন আপনারা সাংবাদিকরা। আপনারা ভুল দেখলে লিখবেন। সমালোচনা করবেন। সমালোচনার সাথে সমাধানের পথটুকুও দেখিয়ে দেবেন, দিকনির্দেশনা দেবেন। তবে আমি নিরন্তর নগরবাসীর সেবা করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি একটি সুন্দর, পরিবেশবান্ধব, স্বাস্থ্যসম্মত, নান্দনিক শহর হিসেবে চট্টগ্রামকে গড়ে তুলতে চাই।
এর আগে, সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী এক বছরের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের তথ্য তুলে ধরেন। এক বছর প্রধান সাফল্য হিসেবে মেয়র উল্লেখ করেছেন, নগরীর ৭৬৯ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন, ২২টি কালভার্ট, ১০টি গোলচত্বর, ১৪টি ব্রিজ, ৩৮টি ফুটওভার ব্রিজ এবং একটি ওভারপাস নির্মাণের জন্য দুই হাজার ৪৯১ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে অনুমোদন।
সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র গিয়াস উদ্দিন, আব্দুস সবুর লিটন ও আফরোজা কালাম এবং সচিব খালেদ মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/আরডি/এএম