‘দলের বেইমানদের ষড়যন্ত্রে জাতির পিতাকে হারাই’
২৪ মার্চ ২০২২ ১৩:১৬
ঢাকা: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পেছনে দলের কিছু নেতার ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দুর্ভাগ্যের বিষয় সামরিক বাহিনীর কিছু বিপথগামী লোক এবং খন্দকার মোশতাকসহ দলের কিছু বেইমানদের ষড়যন্ত্রেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হারাই।
বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২২ প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
জাতির পিতার স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন ঘুণে ধরা সমাজ ব্যবস্থা ভেঙে একটা নতুন সমাজ গড়তে। উপনিবেশিক শাসকদের তৈরি করা প্রশাসনিক কাঠামো এবং শাসন প্রক্রিয়া, শোষণ, বঞ্চনার হাত থেকে দেশকে মুক্তি দিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে মানুষের ক্ষমতায়ন। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করাই ছিল তার লক্ষ্য। স্বাধীনতার পর মাত্র ৯ মাসের মধ্যে তিনি যে সংবিধান দিয়েছিলেন, সেই সংবিধানে গণমানুষের প্রতিটি মৌলিক চাহিদার কথা উল্লেখ রয়েছে। একটি সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন তিনি। সব থেকে বড় লক্ষ্য ছিল ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ। দেশে যতগুলো মহকুমা ছিল প্রত্যেকটাকে জেলায় উন্নীত করেন তিনি।
উপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন করে গণমানুষের শাসন ব্যবস্থা তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছাতে পদক্ষেপ নেন তিনি। এর বাস্তবায়ন দুর্ভাগ্যবশত তিনি করে যেতে পারেননি। তিনি যে সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন যে এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। ঘাতকের নির্মম বুলেট শুধু জাতির পিতাকে হত্যা করেছে তা নয় দেশের ভবিষ্যৎ যে আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছিল তাকেও অন্ধকারে ঠেলে দেয়, বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, সেদিন শুধু জাতির পিতাকেই হারায়নি, এরপর সামরিক বাহিনীতে প্রায় ১৯-২০টির মতো সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে। প্রতিটি ক্যুর পর হাজার হাজার সৈনিক এবং অফিসারদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বিমান বাহিনী এবং সেনাবাহিনী সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেই সময়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে, পরিবর্তন শুরু করে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান ছিল স্বাধীনতা। সেই ইতিহাস মুছে ফেলা হয়েছিল। ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কোনো জায়গায় তার নাম থাকবে না, তার নাম থাকলে মুছে ফেলা হয়, কোথাও ছবি থাকবে না, সেই ছবি সরিয়ে ফেলা হয়। জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ। যে স্লোগান দিয়ে এ দেশের মুক্তিযোদ্ধারা শত্রু মোকাবিলা করেছে নিজের জীবন দিয়ে গেছে। সেই স্লোগান নিষিদ্ধ অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের অর্জন মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ সেসব কিছুই কিন্তু একে একে ধ্বংস করে দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, প্রজন্মের সামনে যদি ইতিহাস তুলে ধরা না হয়, জাতি সামনে এগিয়ে যাবে কীভাবে? তাদের ভেতর আত্মবিশ্বাস আসবে কীভাবে? তারা ভবিষ্যতে উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখবে কীভাবে? আমরা যে বিজয়ী জাতি সেই কথাটাই ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এটাই ছিল সেই একুশ বছরের অন্ধকারের যুগ।
তিনি আরও বলেন, এখানে আসতে অনেক ঝড়-ঝঞ্চা পার হয়ে আসতে হয়েছে। আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন। কাজ একটাই দেশের মানুষকে সেবা করা। মানুষকে একটা সুন্দর ভবিষ্যত দিয়ে যাওয়া।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা শুধু আমাদের না, সারাবিশ্বের সমস্যা। তারপরও প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত আছে। প্রবৃদ্ধি অর্জন করছি। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকে মনে করে এটা খুব অস্বাভাবিক ব্যাপার, আসলে তা নয়। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে যদি প্রতিটি প্রকল্প প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে যেকোনো অর্জন করা সম্ভব বলে আমি বিশ্বাস করি। সেভাবেই কাজ করেছি।
বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশকে আর কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। উন্নত মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে বলে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা।
সারাবাংলা/এনআর/একেএম