‘বিএনপির সন্দেহের কারণে গণহত্যার স্বীকৃতি পাওয়া যাচ্ছে না’
২৫ মার্চ ২০২২ ১৭:২৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহিদ নিয়ে বিএনপি প্রশ্ন তোলায় গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি সহজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
শুক্রবার (২৫ মার্চ) সকালে নগরীর এলজিইডি মিলনায়তনে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভায় মন্ত্রী এ কথা জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী একাত্তরে অপারেশন সার্চলাইটের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের নির্মম গণহত্যার আন্তর্জাতিকভাবে মর্যাদা পাওয়ার দাবি জানিয়েছি। সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এ গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি যৌক্তিক। কিন্তু যখন একটি দলের প্রধানমন্ত্রী যখন বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে আসলে ৩০ লাখ লোক মারা যায়নি, তখন আন্তর্জাতিক মহল স্বীকৃতির বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করতেই পারেন। বিএনপি ৩০ লাখ শহিদ নিয়ে সন্দেহ পোষণ করায় গণহত্যার স্বীকৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। না হলে আমরা গণহত্যার স্বীকৃতি সহজেই পেতাম।’
হাজার বছরের ঘুমন্ত বাঙালিকে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা সংগ্রামে উজ্জীবিত করেছিলেন মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ‘বাঙালির পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাসে বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে স্বাধীনতার চেষ্টা করেছিলেন। তিতুমীর বাঁশের কেল্লা তৈরি করে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন, কিন্তু স্বাধীনতা আসেনি। মাস্টাদা সূর্য সেন ১৯৩০ সালে চট্টগ্রামের অস্ত্রগার লুণ্ঠন করে স্বাধীনতার প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। চট্টগ্রাম অঞ্চল ১১ দিন স্বাধীন ছিল, কিন্তু স্বাধীনতা আসেনি। ১৯৪৪ সালে নেতাজী সুভাষ বসু ইন্ডিয়ান লিবারেশন আর্মির সামনে বক্তব্যে বলেছিলেন, তোরা রক্ত দে আমি স্বাধীনতার দেবো। কিন্তু স্বাধীনতা আসেনি।’
‘বঙ্গবন্ধু বাঙালিকে বলেছিলেন— বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো। তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা। তুমি কে, আমি কে, বাঙালি, বাঙালি। বঙ্গবন্ধু বাঙালিকে আন্দোলিত করে স্বাধীনতা যুদ্ধে অবতীর্ণ করেছিলেন। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একটি জাতিরাষ্ট্র। কিন্তু যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের তিন কোটি মানুষকে পুনর্বাসিত করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে যদি হত্যা করা না হতো, স্বাধীনতার ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ হতো একটি উন্নত রাষ্ট্র।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তথ্যমন্ত্রী।
সাম্প্রতিক সময়ে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা পৃথিবীতে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। ইউরোপের প্রধান খাবার রুটির মূল্য ৮০ শতাংশ বেড়েছে। আমাদের দেশেও আমদানিনির্ভর দ্রব্যের দাম বেড়েছে। কিন্তু দেশের মানুষের যেন কোনো কষ্ট না হয়, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী এক কোটি পরিবারকে স্বল্পমূল্যে পণ্য কেনার কার্ড দিয়েছেন। কমদামে পণ্য কিনতে পেরে দেশের মানুষের মনে স্বস্তি ফিরেছে। কিন্তু বিএনপি এবং কিছু কিছু বুদ্ধিজীবী নামধারীর মনে অস্বস্তি বেড়ে গেছে।’
আমেরিকা, ভারত, ইউরোপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করলেও বিএনপি-জামায়াত আর কিছু কিছু বুদ্ধিজীবীই শুধু সেটি স্বীকার করেন না বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালামের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন রাঙ্গুনিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান স্বজন কুমার তালুকদার, শাহজাহান সিকদার, আবুল কালাম আজদ, এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম, আলতাফ উদ্দিন চৌধুরী, জাহাঙ্গীর আলম তালুকদার আবুল কাশেম, বেদারুল আলম বেদার ও তানভীর হোসেন চৌধুরী।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর