স্বাধীনতা দিবসের সভায় ছাত্রলীগের মারামারি, আহত ৮
২৬ মার্চ ২০২২ ১৭:২৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রামের সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজে স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভায় ছাত্রলীগের দু’গ্রুপে মারামারি ও সভাস্থলে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার পলাশসহ অন্তত আটজন আহত হয়েছেন। মারামারির সময় পুলিশ গিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সভাস্থল থেকে বের করে দেয়। এর ফলে কিছুক্ষণ বন্ধ থাকার পর আবারও সভা শুরু হয়।
শনিবার (২৬ মার্চ) সকাল সাড়ে পৌনে ১১টার দিকে কলেজের বিজ্ঞান ভবনের দোতলায় হলরুমে এ ঘটনা ঘটেছে। কলেজ শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কাজী নাঈম এবং যুগ্ম আহবায়ক আনোয়ার পলাশ ও মায়মুন উদ্দিনের মামুনের গ্রুপের মধ্যে এ মারামারি হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
মারামারিতে গুরুতর আহত আনোয়ার পলাশকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সম্মান শেষ বর্ষের ছাত্র তাহফিম সোহেলও একই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়া একই গ্রুপের বিএসএস তৃতীয় বর্ষের সাকিবও সামান্য আহত হয়েছেন।
অন্যদিকে আহ্বায়ক কাজী নাঈম, যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান, সম্মান তৃতীয় বর্ষের রবি, এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের মেজবাহ এবং বিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের আরমানও সামান্য আহত হয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস জাহান সারাবাংলাকে জানান, সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিজ্ঞান বিভাগের হলরুমে কলেজের উদ্যোগে স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভা শুরু হয়। শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে আহ্বায়ক কাজী নাঈমের নেতৃত্বে তার অনুসারীরা সাড়ে ১০টার দিকে সভাস্থলে যান। এর ১৫ মিনিট পর আনোয়ার পলাশ ও মায়মুন উদ্দিন মামুনের নেতৃত্বে তাদের অনুসারী নেতাকর্মীরা সভাস্থলে যান।
‘সভাস্থলের সামনে এবং ভেতরে থাকা উভয় গ্রুপ হঠাৎ উচ্ছৃঙ্খল আচরণ শুরু করে। তারা সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য লাগানো বেলুনগুলো ফাটাতে থাকে। এরপর উভয়পক্ষে কথা কাটাকাটি, হাতাহাতি এবং একপর্যায়ে চেয়ার ও কাঠের বেঞ্চ ছোড়াছুড়ি শুরু করে। জানালার কাচও ভাঙচুর করে। সভায় উপস্থিত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে বের হয়ে যেতে থাকেন। তখন আমরা গিয়ে উভয় গ্রুপকে দ্বিতীয় তলা থেকে নিচে নামিয়ে দিই। তারা শহিদ মিনারের সামনে এসে আবারও মারামারিতে জড়ায়। তখন আমরা ধাওয়া দিয়ে তাদের সরিয়ে দিই’- বলেন ওসি
জানতে চাইলে মহসীন কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আলোচনা শুরু করব, এমন সময় এক গ্রুপ স্লোগান দিতে দিতে ভেতরে ঢুকতে থাকে। আরেক গ্রুপ আগে থেকেই ভেতরে ছিল। হঠাৎ তাদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। কলেজের শৃঙ্খলা কমিটি এবং পুলিশ গিয়ে তাদের সভাস্থল থেকে বের করে দেয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কিছুক্ষণের জন্য সভা বন্ধ ছিল। পরে আমরা সুন্দরভাবে সভা শেষ করেছি।’
মারামারির বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মায়মুন উদ্দিন মামুন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সুন্দরভাবে সভাস্থলে ঢুকছিলাম। তখন হঠাৎ আমাদের লক্ষ্য করে চেয়ার ছুড়তে শুরু করে। কোনো ধরনের উসকানি ছাড়াই তারা আমাদের ওপর আক্রমণ করে। এতে আনোয়ার পলাশের মাথায় গুরুতর জখম হয়েছে। বিতর্কিত আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক কাজী নাঈমের নেতৃত্বে বহিরাগতরা হামলা করেছে। যে কোনো জাতীয় দিবসের তারা এ ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে ক্যাম্পাসে একক রাজত্ব করার জন্য তারা বারবার এ ধরনের কর্মকাণ্ড করছে।’
জবাবে আহ্বায়ক কাজী নাঈম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাইরে থেকে মিছিল নিয়ে এসে কাঠের বেঞ্চ উল্টেপাল্টে ছুড়ে মারা, ভাঙচুর এসব শুরু করে। আনোয়ার পলাশ নিজে ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছে। আমি তার সামনে গিয়ে বললাম, এ সব করে লাভ কী, শান্ত হও। সে নিজে আমার গায়ে আঘাত করে। তার কর্মীরা আমাকে মারতে আসে। আমাদের পক্ষের কর্মীদের মারধর শুরু করে। এসব সমস্যা আনোয়ার পলাশ নিজে তৈরি করে রেখেছে। সে নিজেই কর্মীদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি করেছে। অথচ আমরা একসঙ্গে সুন্দরভাবে ক্যাম্পাসে রাজনীতি করতে পারতাম।’
মহসীন কলেজের বিবদমান উভয় গ্রুপ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
এদিকে মারামারির পর ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঠেকাতে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি ফেরদৌস জাহান।
এর আগে, গত ২১ ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবসে মহসীন কলেজের শহিদ মিনারে ফুল দিতে গিয়ে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপ সংঘর্ষে জড়িয়েছিল।
সারাবাংলা/আরডি/একে