Wednesday 11 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সরকারকে যুদ্ধে অর্থায়ন বন্ধের দাবি জার্মান তরুণদের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৬ মার্চ ২০২২ ২২:৩২

ইউক্রেন যুদ্ধে অর্থায়নের অভিযোগ এনে অবিলম্বে তা বন্ধের দাবি করেছে কয়েক হাজার জার্মান তরুণ। শুক্রবার (২৫ মার্চ) জার্মানির রাজধানী বার্লিনসহ বেশ কয়েকটি শহরে ‘ফ্রাইডেজ ফর ফিউচার’ আন্দোলনে সামিল হয়ে তারা এই দাবি করেছে। তারা বলছেন, ‘রাশিয়ার তরল গ্যাসের উপর জার্মানির নির্ভতার কারণে এই যুদ্ধ গতি পাচ্ছে।’

অ্যাকটিভিজম নেটওয়ার্ক ‘ফ্রাইডেজ ফর ফিউচার’ আয়োজিত বিশ্বব্যাপি অনুষ্ঠেয় এই সমাবেশে জার্মানজুড়ে হাজার হাজার প্রতিবাদী তরুণ অংশ নেন। জার্মানির রাজধানী বার্লিনে কয়েক হাজার তরুণ ‘আগে মানুষ, পরে লাভ’ নীতির আলোকে জলবায়ু নেতৃত্ব গড়ে তোলার দাবিতে সমাবেশ করেছে। এই সমাবেশে ইউক্রেন যুদ্ধ ও রাশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি গুরুত্ব পায়।

এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় শুরু হওয়া এই প্রতিবাদ কর্মসূচি পরে ইউরোপ ও আফ্রিকা হয়ে আমেরিকাতেও অনুষ্ঠিত হয়। সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ রাস্তায় এক সমাবেশে যোগ দেন। থুনবার্গের সেই একক প্রতিবাদই পরে আন্তর্জাতিক এই কর্মসূচির সূচনা করে।

শুক্রবারের আন্দোলনে অংশ নেওয়ার এক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে শেয়ার করেন গ্রেটা। তাতে দেখা যায় তিনিসহ বাকি তরুণরা প্ল্যাকার্ড হাতে লাফাচ্ছেন ও চিৎকার করে বলছেন, ‘আমাদের থামানো যাবে না! বিকল্প বিশ্বও সম্ভব!”

জার্মান কর্তৃপক্ষ বলেছে, বার্লিনে দশ হাজারেরও বেশি মানুষ যাদের অধিকাংশই তরুণ এই সমাবেশে অংশ নেয়। তবে প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজকদের দাবি এতে ২২ হাজারের বেশি মানুষ অংশ নিয়েছে। এছাড়াও আরও কয়েক হাজার তরুণ জার্মান অন্য শহর হামবুর্গ, ব্রিমেন, মিউনিখসহ আরও কয়েকটি শহরে প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেয়। সমাবেশে রাশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানির উপর জার্মান নির্ভরশীলতার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। তাদের মতে, রাশিয়া থেকে জ্বালানি কেনার মাধ্যমে জার্মান সরকার এই যুদ্ধে টাকা ঢালছে। তাই তারা যত দ্রুত সম্ভব রাশিয়া থেকে সব ধরনের জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানি বন্ধের আহ্বান জানান।

সম্প্রতি জ্বালানি বিষয়ে চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজের জোট সরকারের করা পরিবর্তনগুলিকেও কঠোরভাবে তিরস্কার করা হয় এই সমাবেশ থেকে। প্রতিবাদকারীদের দাবি, সরকার এখন আগামী দুই বছরের জন্য অটোমোবাইল ভর্তুকি দেওয়ার জন্য জার্মান সরকারের জলবায়ু লক্ষ্যসমূহ বাতিল করার পরিকল্পনা করছে এবং দেশে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস সম্প্রসারণ এবং শক্তির ব্যবহার কমানোর পরিবর্তে আমদানির জন্য নতুন করে তরল গ্যাস শিপিং টার্মিনাল তৈরি করবে যা জলবায়ুকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে।

রাশিয়ান ও ইউক্রেনের পরিবেশবাদী কর্মীরাও বার্লিনের এই সমাবেশে অংশ নেন। কেউ কেউ আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে বক্তব্য দেন। রাশিয়ান অ্যাকটিভিস্টদের কেউ কেউ বলেন, তাদের জন্য রাশিয়ায় এমন প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার বিপদ আছে কিন্তু তাদের সেখানেও এমন কর্মসূচি নেওয়া প্রয়োজন।

ইউক্রেনের খারকিভ থেকে জার্মানি পালিয়ে যাওয়া একজন শরণার্থী বলেন, ‘ইউক্রেনের যুদ্ধ যেকোনো সময় থেমে যেতে পারে যদি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জার্মানি রাশিয়াকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয়।’

বার্লিনের ছাত্র ক্লারা ডুভিগনিউ বলেন, ‘আজ আমরা এখানে এসেছি বিশ্বকে এটা দেখাতে যে শান্তি ও ক্লাইমেট জাস্টিস হাতে হাত রেখে চলতে পারে।’ তিনিসহ সমাবেশে উপস্থিত বাকিরা এই নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন যে জার্মানি প্রতিদিন রাশিয়াকে ইউরো দেয় জ্বালানি কিনতে। এই জ্বালানি আবার পৃথিবীর অস্তিত্বের জন্য ক্ষতিকর। ক্লারা বলেন, ‘আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসতে হবে।’

অনেক প্রতিবাদকারী আবার শোলজ সরকারের রাশিয়ার পরিবর্তে কাতার থেকে তরল গ্যাস কেনার চেষ্টাকে এক স্বৈরাচারি থেকে অন্য স্বৈরাচারির উপর নির্ভরতা স্থানান্তর হিসেবে দেখেছেন। শোলজ প্রশাসনের এই প্রচেষ্টার সমালোচনা করছেন তারা।

উল্লেখ্য, চলতি সপ্তাহে ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স এবং ক্লাইমেট অ্যাকশন মিনিস্টার রবার্ট হ্যাবেক আমিরাতের সঙ্গে তরল গ্যাস ক্রয়ের চুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য কাতার সফর করেছেন।

জলবায়ু কর্মী লুইসা নিউবাউয়ার শুক্রবার বার্লিনের দৈনিক তাজ পত্রিকাকে বলেছেন, ‘যদি, রবার্ট হ্যাবেকের মতো আপনাকে পুতিনের গ্যাস থেকে বাঁচতে কাতার ভ্রমণ করতে হয় তবে আপনার একটি পদ্ধতিগত সমস্যা আছে। উভয় ক্ষেত্রেই আমরা গণতন্ত্রের বিরোধীদের অর্থায়ন করি এবং জলবায়ু ধ্বসের ঝুঁকি বাড়াচ্ছি।’

‘লাস্ট জেনারেশন’ নামের আরেক জলবায়ু আন্দোলন শনিবারও জার্মানজুড়ে আরও প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজনের কথা বলছে। তারা দেশজুড়ে বড় বড় বিল্ডিং থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি সম্বলিত ব্যানার ঝোলাবে। তাদের প্রধান টার্গেট ব্যাংক, ব্যবসায়ী ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবন, যারা প্রাণঘাতী জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের জন্য বিশ্বব্যাপি অর্থ দিচ্ছে।

সারাবাংলা/আরএফ/এমও

টপ নিউজ যুদ্ধে অর্থায়ন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর