বোরো আবাদে রেকর্ড, কমতে পারে ধানের দাম!
২৭ মার্চ ২০২২ ০৮:১৬
ঢাকা: দেশে এ বছর বোরো আবাদে নতুন রেকর্ড হয়েছে। চলতি মৌসুমে গেল পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, এবার বোরো আবাদের পরিমাণ বেড়েছে ৫০ হাজার হেক্টরেরও বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আবাদ বাড়ায় মৌসুমটিতে বোরো ধানের উৎপাদন বাড়বে। একইসঙ্গে কমে যেতে পারে ধানের দাম।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৮ লাখ ৭৩ হাজার হেক্টর। এর বিপরীতে বোরো আবাদ হয়েছে ৪৯ লাখ ৬৩ হাজার হেক্টর জমিতে। বোরো আবাদে অগ্রগতির হার ১০১ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
এ বছর ১২ লাখ ৩৭ হাজার হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতীয় বোরো ধানের আবাদ হওয়ার কথা থাকলেও আবাদ হয়েছে ১৩ লাখ ৩১ হাজার হেক্টর জমিতে। ৩৬ লাখ ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে উফশী (উচ্চ ফলনশীল) জাতীয় বোরো ধানের আবাদ হওয়ার কথা থাকলেও আবাদ হয়েছে ৩৬ লাখ ১১ হাজার হেক্টর জমিতে। আর ২০ হাজার হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের ধানের আবাদ হওয়ার কথা থাকলেও আবাদ হয়েছে ২১ হাজার হেক্টর জমিতে। বছরটিতে বোরো ধানের বীজতলা তৈরির অগ্রগতির হারও ছিল ১১৭ শতাংশ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য বলছে, ২০২১-২২ মৌসুমে বোরো আবাদ হয়েছে ৪৯ লাখ ৬৩ হাজার হেক্টর জমিতে। এর আগের বছর তথ্যা ২০২০-২১ মৌসুমে আবাদ হয়েছিল ৪৮ লাখ ৭২ হাজার হেক্টর জমিতে। তার আগের মৌসুম ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪৭ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে, ২০১৮-১৯ মৌসুমে ৪৯ লাখ ৯ হাজার হেক্টর জমিতে এবং ২০১৭-১৮ মৌসুমে বোরোর আবাদ হয়েছিল ৪৯ লাখ হেক্টর জমিতে।
এই তথ্য বলছে, গত পাঁচ বছরের মধ্যে চলতি মৌসুমে বোরোর আবাদ আগের বছরগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে। এই সময়কালে বোরোর আবাদি জমির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৫৪ হাজার হেক্টর।
জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. বেনজীর আলম সারাবাংলাকে বলেন, সাধারণত ৪৬, ৪৭ বা ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়ে থাকে। এ বছর এই আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৮ লাখ ৭৩ হাজার হেক্টর। এর বিপরীতে ৪৯ লাখ ৬৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এবার আবাদ ভালোও হয়েছে।
কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে সারাবাংলাকে বলেন, করোনা মহামারির ধাক্কায় সারাবিশ্বে খাদ্য উৎপাদন ব্যহত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় আমাদের দেশে উৎপাদন অব্যাহত ছিল। এবার এখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে খাদ্য সংকট নিয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছিলেন, দেশের এক ইঞ্চি জায়গাও যেন অনাবাদি না থাকে। সে নির্দেশনাকে সামনে রেখে আমরা বোরোর আবাদি জমি বা বোরোর আবাদ বাড়ানোর চেষ্টা করেছি। সে কারণেই এবার বোরো আবাদে রেকর্ড হয়েছে, যা উপাদনেও ইতিবাচক প্রভাব বয়ে আনবে।
মন্তব্য জানতে চাইলে কৃষি অর্থনীতিবিদ আসাদুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, বোরো আবাদের পরিমাণ বাড়ার ‘ভালো’ ও ‘মন্দ’ দু’টি দিকই আছে। চালের দাম বাড়তি থাকায় কৃষক এ বছর বোরো আবাদ বাড়িয়ে দিয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে এর ফলে উৎপাদন বাড়বে। কিন্তু উৎপাদন বাড়লেই কৃষক লাভবান হবে— এমনটি নয়। কারণ একইসঙ্গে দেশে চালের আমদানিও হচ্ছে। ফলে উৎপাদন বাড়লে ধানের দাম কমে যাবে। তখন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তিনি বলেন, আমরা তো কৃষকের দিকটি চিন্তা করি। অতীতের দিকে তাকলে দেখা যায়— উৎপাদন বাড়লেই কৃষকের কপাল পোড়ে। এ বার যেন তা না হয়, সরকারকে সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হবে।
কৃষি সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, যেহেতু চাষাবাদ বেড়েছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চলতি বোরো মৌসুমে দুই কোটি টনেরও বেশি ধান পাওয়া যেতে পারে। বাড়তি উৎপাদন চালের বাজারকে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করবে।
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর