এসির কাভার ছিল খোলা, মুক্তার মাথা-কান-কাঁধে গভীর ক্ষত
২৭ মার্চ ২০২২ ১৯:১০
ঢাকা: শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র (এসি) মেরামতের নাম করে যারা বাসায় এসেছিল, তারাই সবুজবাগের গৃহিণী তানিয়া আফরোজ মুক্তাকে (২৮) হত্যা করেছে বলে ধারণা করছেন তার স্বামী মাইনুল ইসলাম। তিনি বলছেন, বাসার আলমারি থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেওয়ার সময় হয়তো তানিয়া দেখে ফেলেছিলেন। সে কারণেই দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করেছেন।
এদিকে, তানিয়া আফরোজ মুক্তার সুরতহাল প্রতিবেদন বলছে, তার মাথা-কান ও কাঁধে গভীর ক্ষত রয়েছে। এর মধ্যে একটি ক্ষত ১১ ইঞ্চি দীর্ঘ।
শনিবার (২৬ মার্চ) রাতে রাজধানীর সবুজবাগ দক্ষিণগাঁওয়ের বেগুনবাড়ি মাস্টার গলির মজিবর রহমানের বাড়ির দ্বিতীয় তলার বাসা থেকে তানিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, সন্ধ্যার দিকেই তাকে হত্যা করা হয়। এসময় তানিয়ার দুই সন্তানও আহত হয়। এর মধ্যে এক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ময়নাতদন্তের জন্য শনিবার রাতেই সবুজবাগ থানা পুলিশ তার তানিয়ার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠায়। রোববার (২৭ মার্চ) সকাল ১১টার দিকে মর্গে তানিয়ার স্বামী মাইনুল ইসলাম ঢামেক মর্গে যান। এসময় স্ত্রীর মরদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
আরও পড়ুন- সবুজবাগ থেকে নারীর মৃতদেহ উদ্ধার, হাত-পা বাঁধা ছিল ২ শিশুর
ঢামেক মর্গের সামনে কথা হয় মাইনুল ইসলামের সঙ্গে। জানালেন, ফরিদপুরে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট হিসেবে চাকরি করেন। ৮ বছর আগে তানিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় তার। চার বছর বয়সী মেয়ে মায়মুন ও ১০ মাস বয়সী ছেলে তানভিরুলকে নিয়ে তানিয়া থাকতেন ঢাকায়। মাইনুল প্রতি সপ্তাহে ঢাকা আসেন তাদের দেখতে।
মাইনুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, গতকাল (শনিবার) বিকেল ৩টা ৫২ মিনিটে তানিয়া ফোন। বলে, এসি সার্ভিসিংয়ের জন্য বাসায় কয়েকজন লোক এসেছে। আমাকেও ফোন ধরিয়ে দেয়। ফোনের ও প্রান্ত থেকে তারা বলেন, ‘কয়েক মাস আগে আপনাদের এসি সার্ভিসিং করে দিয়ে গেছি। তাই আবার আসলাম, সার্ভিসিং করতে হবে কি না জানার জন্য।’ আমি তখন তাদের বলি, এখন সার্ভিসিং লাগবে না। প্রয়োজন হলে যোগাযোগ করব। তানিয়াকেও বলি তাদের বিদায় করে দিতে।
পরে রাতে মুগদা হাসপাতালের পরিচিত একজন মাইনুলকে ফোন দিয়ে জানান, তার ছেলে তানভিরুল ওই হাসপাতালে ভর্তি। বিষয়টি জানার জন্য তিনি স্ত্রী তানিয়ার মোবাইলে কল করলেও কল রিসিভ হয়নি। পরে বাড়িওয়ালার মোবাইলে ফোন করেন মাইনুল বাড়িওয়ালা তাকে দ্রুত বাসায় আসতে বলেন। রাতেই ফরিদপুর থেকে ঢাকার বাসায় ফিরে স্ত্রীকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন।
মাইনুল বলেন, আমার সন্দেহ ওই ব্যক্তিরাই তানিয়াকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে বাসায় ঢুকে এসি সার্ভিসিং করছিল। কারণ বাসায় ফেরার পর এসির কাভার খোলা অবস্থায় দেখতে পাই। আমার ধারণা, ওরা এসির কাজ করার সময় হয়তো আলমারি খুলে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিল। তানিয়া দেখে ফেলার কারণেই হয়তো তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। আলমারির জামাকাপড়ও ছড়ানো-ছিটানো ছিল।
এদিকে, তানিয়ার মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন সবুজবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রবিনা আউয়াল। সুরতহালে তিনি উল্লেখ করেছেন, তানিয়ার নাক-মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছিল। তার ডান কানের নিচে রয়েছে কাটা ক্ষত। মাথার মাঝখানে আড়াই ইঞ্চি পরিমাণ ও মাথার পেছনের অংশে ডান কানের লতি থেকে বাম কান পর্যন্ত ১১ ইঞ্চি দীর্ঘ একটি ক্ষতও রয়েছে। এছাড়া ডান কাঁধের পেছনে সাড়ে ৮ ইঞ্চি পরিমাণ কাটা ক্ষতও রয়েছে।
শনিবার রাতে খবর পাওয়ার পর পুলিশ মজিবর রহমানের ওই বাড়ি থেকে তানিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে। এসময় ওই বাসা থেকে মাইনুল-তানিয়া দম্পতির দুই সন্তানকে হাত-পা বাঁধা ও মুখে স্কচটেপ পেঁচানো অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। দুই সন্তানের মধ্যে মেয়ে মায়মুনের অবস্থা স্থিতিশীল। ছেলে তানভিরুল মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সারাবাংলা/এসএসআর/টিআর