চক্ষু ইনস্টিটিউটে বিএনপি নেতাদের চোখ দেখাতে বললেন প্রধানমন্ত্রী
২৭ মার্চ ২০২২ ১৯:৫৭
ঢাকা: সরকারের উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করতে বিএনপি নেতাদের জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চোখ পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা তো এখন আই ইনস্টিটিউট (জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট) করে দিয়েছি। যারা বক্তৃতা দেয় যে উন্নয়ন হয়নি, যারা উন্নয়ন চোখে দেখে না, আমার মনে হয় তাদের চোখ পরীক্ষা করা দরকার। তাহলে হয়তো দেখতে পাবে উন্নয়ন হয়েছে কি না।
রোববার (২৭ মার্চ) বিকেলে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন।
আলোচনায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সার ও বিদ্যুতের জন্য কৃষকদের দাবির আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে জীবন দেওয়ার ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু দেশের মানুষের চাহিদা বিবেচনায় আওয়ামী লীগ সরকার বরাবরেই কৃষকদের গুরুত্ব দিয়ে এসেছে বলেও জানান তিনি। বলেন, এ কারণেই আজ দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাদ্য ও মানুষের জীবন-জীবিকার চাহিদাটা পূরণই আমাদের লক্ষ্য। সেই সঙ্গে আমরা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাতেও জোর দিচ্ছি। কারণ এগুলো আমাদের দেশে উৎপাদন করতে পারলে, প্রক্রিয়াজাত করলে ভ্যালু-অ্যাড করা যাবে। আমরা তখন নিজের দেশের চাহিদা মেটাতে পারব, উদ্বৃত্ত থাকলে বিদেশেও রফতানি করতে পারব।
কৃষি অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীলতার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এখন একদিকে করোনার ধাক্কা, আরেকদিকে যুদ্ধাবস্থা। সবকিছু মিলিয়ে খাদ্যের অভাবটা সারাবিশ্বেই দেখা দিতে পারে। তাই এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। এ কারণেই আমি বলেছি— কোথাও যেন এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না থাকে। যার যেটুকু আছে সেটুকুতেই চাষাবাদ করবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে শ্রমিকদের বেতনভাতা বাড়ানো হয়েছে জানান শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, অথচ এই শ্রমিকরা মজুরি চেয়ে যখন তারা আন্দোলন করে, খালেদা জিয়ার নির্দেশে রমজান মাসে ১৭ সতের জন শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কথা মনে হয় বারবার মনে করিয়ে দেওয়া উচিত। কারণ বিএনপির নেতারা প্রায়ই বক্তৃতা দেয়— বাংলাদেশের গণতন্ত্র নাকি নাই। গণতন্ত্র নাকি ধ্বংসে করে ফেলেছি!
‘এখন কাদের মুখে গণতন্ত্রের ছবক শুনতে হয়? যাদের জন্ম হয়েছে অগণতান্ত্রিকভাবে, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে— তাদের কাছে? এটি শুধু আমার মুখের কথা না, উচ্চ আদালতই বলেছেন— জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখল ছিল অবৈধ, এরশাদের ক্ষমতা দখল ছিল অবৈধ। কারণ তারা সংবিধান লঙ্ঘন করে, এমনিক সামরিক আইন ভঙ্গ করেও নিজেদের রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। তারপর আবার সেই হ্যাঁ-না ভোট, তারপর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, তারপর দল গঠন করে রাজনীতিতে অবতরণ— তারা তো এই করেছে,’— বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, যারা ক্ষমতা দখল করে রাজনীতিতে অবতরণ করে, যারা রাজনীতিবিদদের গালি দিয়ে আবার পরে উর্দি খুলে সেই রাজনীতিবিদ হয়ে যায়— সেই ধরনের ক্ষমতা দখলকারী অবৈধভাবে তাদের হাতে বিএনপির জন্ম। বিএনপি প্রতিষ্ঠা করে গেছে জিয়াউর রহমান, যে জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধানের পদে থেকেও ক্ষমতা দখল করেছিল, পরে আবার রাজনীতিবিদ হয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের চার জাতীয় নেতাকে হত্যা থেকে শুরু করে সামরিক বাহিনীর হাজার হাজার কর্মকর্তা, সৈনিককে তারা হত্যা করেছিল ক্ষমতা নিষ্কণ্টক করার জন্য। একদিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, যুবলীগ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের গুম খুন করছে, অন্যদিকে সেনাসদস্যদের কত পরিবার যে তাদের আপনজনের লাশটা পর্যন্ত পায়নি তার কোনো হিসাব নেই। পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার পর একের পর এক ১৯ থেকে ২০টি ক্যু (সামরিক অভ্যুত্থান) হয়েছে। সেসব ক্যু’তে হাজার হাজার কর্মকর্তা-সৈনিককে যারা হত্যা করেছে, তাদের কাছ থেকে এখন গণতন্ত্রের ছবক শুনতে হয়— এটাই জাতির দুর্ভাগ্য।
তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্র নাকি ধ্বংস হয়ে গেছে! তাদের গণতন্ত্রের সংজ্ঞাটা (ডেফিনেশন) কী? আর যাদের জন্ম জনগণের মধ্য থেকে হয়নি, জন্ম হয়েছে সেনা ছাউনিতে ক্ষমতা দখলকারীর পকেট থেকে, তারাই কি না আমাদের এখন গণতন্ত্র শেখায়! এটাই হচ্ছে এ জাতির সবথেকে বড় দুভার্গ্য।
দেশে কোনো উন্নয়ন হয় না— বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শতভাগ বিদ্যুতায়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ কিছুই তাদের চোখে পড়ে না। অথচ আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশের সব সুবিধা তারাও ব্যবহার করছে। এটা উন্নতি না? পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র— এগুলো উন্নয়নের লক্ষণ না? অথচ এগুলো কিছুই তাদের চোখে পড়ে না। আজ দারিদ্র্যের হার কমেছে, সেই উন্নয়নও তাদের চোখে পড়ে না। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি, এটাও তাদের চোখে উন্নয়ন না। আমি তো বলব, চক্ষু হাসপাতাল করে দিয়েছি, তারা চোখ দেখিয়ে নিক।
খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করলে বিদেশ থেকে সাহায্য পাওয়া যাবে না— বিএনপির মন্ত্রীসহ খালেদা জিয়ার অতীতের এমন মন্তব্যের কথা স্মরণও করেন শেখ হাসিনা। বলেন, সেই সময় তার জবাবে আমি বলেছিলাম— জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকে না। তাই আমরা ভিক্ষুক জাতি হিসাবে থাকতে চাই না। এই মাটি ও মানুষকে দিয়েই আমরা দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছিলাম। আমরা ভিক্ষুক জাতি হয়ে থাকব না। কারও কাছে হাত পেতে চলব না। এবং আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই আমরা আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পের এখন প্রায় ৯০ শতাংশের বেশি নিজেদের অর্থায়নে তা বাস্তবায়ন করতে পারি। পদ্মাসেতুর যে চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম, সেটি করেই আমরা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছি— হ্যাঁ, বাংলাদেশ নিজেই পারে।
বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে রেল যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়ার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর বিপরীতে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নতুন নতুন রেলপথ সম্প্রসারণ, নদী ড্রেজিং করা করে নৌপথ সচল করার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন তিনি। এই সরকারের মেয়াদে দেশের রাস্তাঘাট, অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নের কথাও তুলে ধরেন।
উন্নয়ন নিয়ে বিএনপি অনবরত মিথ্যাচার করছে অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, মিথ্যা বলায় তারা এক্সপার্ট। তাদের সঙ্গে আমরা (মিথ্যা বলে) পারব না। আর তারা ভাঙা রেকর্ডের মতো বলেই যাচ্ছে। অবশ্য ভাঙা রেকর্ড এখন আর কেউ চিনবে না। এখন তো সবকিছু ডিজিটাল। আগের মতো আর নেই। তারপরও তারা কিন্তু বলেই যাচ্ছে। একটার পর একটা মিথ্যা বলেই যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, কেন্দ্রীয় সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী।
গণভবন প্রান্তে সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় নেতাসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এনআর/টিআর
আওয়ামী লীগ সভাপতি আওয়ামী লীগের আলোচনা সভা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতা দিবস