সিআরবি রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন মোশাররফ
২৭ মার্চ ২০২২ ২১:০০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত সিআরবিতে হাসপাতাল ঠেকাতে সামনের সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করবেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। দেড় মাস আগে সিআরবি রক্ষার আন্দোলনে যুক্তদের সঙ্গে বৈঠকেও তিনি একই কথা বলেছিলেন।
রোববার (২৭ মার্চ) বিকেলে সিআরবি এলাকায় নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রামের ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশে একই প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ বলেন, ‘সিআরবি হেরিটেজ এলাকা। এটা রক্ষা করতে হবে। সামনে সংসদ বসলে আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ করব। প্রধানমন্ত্রী সৃজনশীল এবং বাস্তব অবস্থা বোঝেন। আমার মনে হয় তিনি এটা শুনবেন। এটা হেরিটেজ হিসেবে আমরা শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে রক্ষা করব। আপনাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছি।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বর্ষীয়ান রাজনীতিক মোশাররফ হোসেন আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামে হাসপাতাল অনেক হয়েছে। রেলওয়ের জায়গায় মধ্যে অনেক হাসপাতাল হয়েছে। ইউএসটিসি, ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল, ডায়াবেটিস হাসপাতাল সব রেলওয়ের জায়গায় হয়েছে। কিন্তু এরকম জায়গায় যেখানে হেরিটজ আছে, সেখানে গাছপালার মধ্যে হাসপাতাল হয়নি।’
‘আমরা কেউ হাসপাতালের বিরোধিতা করছি না। হাসপাতাল হোক, তবে এ জায়গায় নয়। এই জায়গায় হাসপাতাল হলে আমাদের রক্তের ওপর হতে হবে। এক বিন্দুও ছাড় দেব না। এভারকেয়ার হাসপাতাল হয়েছে শহরের বাইরে। ওখানে রোগীরা যাচ্ছে। তাই এখানে হাসপাতাল নয়’— বলেন মোশাররফ।
একই সমাবেশে কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রের সামনে বিএনপির সমাবেশ ঘোষণার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি রেডিও স্টেশনে যাবে ঘোষণা দিয়েছিল। তারা বলেছে, জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কখন ঘোষণা দিয়েছিলেন? তিনি ২৮ মার্চ ঘোষাণা দিয়েছেন। আসল সত্য হলো- ২৫ তারিখ বঙ্গবন্ধু অয়ারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। এরপর ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এম এ হান্নান।’
উল্লেখ্য, রোববার বিএনপি কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রের সামনে কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নিলেও পুলিশের বাধায় পারেনি। পরে বিএনপি নগরীর পলোগ্রাউন্ডে সমাবেশ করে।
নাগরিক সমাজের কো-চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে সিআরবিতে অনুষ্ঠিত সমাবেশ সঞ্চালনা করেন একই সংগঠনের সদস্য সচিব ও নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল।
সমাবেশে বক্তব্য দেন- চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম, সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ, চট্টগ্রামের সভাপতি এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম, অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন, নাগরিক সমাজের যুগ্ম সদস্য সচিব মহসিন কাজী প্রমুখ।
উল্লেখ্য, সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারিত্বের আওতায় সিআরবিতে হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ ও নার্সিং ইনস্টিটিউট বাস্তবায়ন ও পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ কোম্পানি লিমিটেড। ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে এই প্রকল্পের জন্য। প্রকল্পের মেয়াদ ১২ বছর।
দুই বছর আগে প্রকল্পটি অনুমোদনের বিষয়টি প্রকাশ পেলে চট্টগ্রামে বিভিন্ন নাগরিক ও পেশাজীবী সংগঠন আন্দোলনে নেমেছিল। গত বছরের জুলাইয়ে গণমাধ্যমে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাসপাতাল নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়টি উঠে এলে আবারও সোচ্চার হন চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন এবং ১৭ জন বিশিষ্ট নাগরিক বিবৃতি দিয়ে সিআরবির প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংসের এই প্রক্রিয়া রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানালে রাস্তায় নামে মানুষ।
এরপর নাগরিক সমাজ গঠন করে ধারাবাহিকভাবে সিআরবি এলাকায় নানা ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। শুরুর দিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ সিআরবিতে হাসপাতালের বিরোধিতা করলেও এখন তারা নিশ্চুপ আছেন।
এর মধ্যে, গত ৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে সরকারি সফলে এসে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন সাংবাদিকদের বলেছেন, চট্টগ্রামের মন্ত্রী-এমপি, জনপ্রতিনিধিরা সিআরবিতে হাসপাতাল না চাইলে প্রধানমন্ত্রীও মত দেবেন না।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম