Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘জনগণের ক্ষমতা তাদের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৭ মার্চ ২০২২ ২৩:০৫

ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের ক্ষমতা আমরা জনগণের হাতে ফিরিয়ে এনেছি। যে ক্ষমতা ক্যান্টনমেন্টে বন্দি ছিল, জিয়াউর রহমানের পকেটে ছিল বা এরশাদের পকেটে ছিল বা খালেদা জিয়ার আঁচলে ছিল। জনগণের সেই ক্ষমতা তাদের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

রোববার (২৭ মার্চ) বিকেলে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন।

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি ইতিহাস বিকৃতির কথা বলে। ইতিহাস বিকৃতি করেছে কে?’ তিনি দেশ স্বাধীনের আগে চট্টগ্রাম যাওয়ার ঘটনার প্রসঙ্গ স্মরণ করে বলেন, ‘১৯৬১ সালে আমরা চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম। ওখানে সুলতান সাহেবের মেয়ের আকিকা ছিল। সেখানে দাওয়াত দিয়েছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন। তার মেয়ে জরিনার আকিকাতে আমরা গিয়েছিলাম। সেই সময় আমরা চট্টগ্রাম ঘুরে দেখি।’

তিনি বলেন, ‘ঘুর্ণিঝড়ে একবার একটা বড় জাহাজ ডাঙ্গায় উঠে যায়। চট্টগ্রামের নেতা ছিলেন আজিজ সাহেব; তিনি আমাদের নিয়ে যান সেই জাহাজ দেখাতে। ফেরার পথে পড়ে কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র। ধু ধু মাঠ, হলুদ একটা দালান; এখনো আমার চোখে ভাসে। তিনি বলেছিলেন, মা এই জায়গাটা দেখে রাখো। এই জায়গা থেকেই একদিন আমরা স্বাধীনতার ঘোষণা দেব। টাইগার পাস থেকে যখন আসি তখন ঘন জঙ্গল ছিল। মাঝখানে রাস্তা। তিনি বলেছিলেন, এই জায়গা থেকে যুদ্ধ শুরু হবে। আমরা ওদের সাথে থাকব না, আমাদের দেশ স্বাধীন হবে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘১৯৬২ সালে একটা উদ্যোগ নিয়েছিলেন জাতির পিতা। কিন্তু সেটা কার্যকর করতে পারেননি। সেটা ধরেই পরবর্তী সময়ে আগারতলা ষড়যন্ত্র মামলা দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো তথ্য তারা পায়নি এবং কিছুই করতে পারেনি। দেশ স্বাধীন করার চিন্তা সেদিন থেকেই যেদিন বাংলা ভাষার উপর আঘাত আসে। তার পর থেকে সেই চিন্তা নিয়েই কিন্তু এই সংগঠনকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ ‍মুজিব।’

আগে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য থাকলে মন্ত্রী থাকতে পারবেন না- এমন নিয়ম ছিল জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেজন্য তিনি মন্ত্রিত্ব ছেড়েছিলেন শুধু দলকে সুসংগঠিত করার জন্য। কারণ, চিন্তা একটাই ছিল; সেটা হলো- দল সুসংগঠিত হলেই সংগ্রাম করা যায় এবং স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া যায়। সেই প্রস্তুতিই তিনি নিয়েছিলেন।’

তিনি বলেন, ‘১৯৫৮ সালে মার্শাল ’ল যখন হলো তারপর থেকেই তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন- এই দেশকে মুক্ত করতেই হবে। স্বাধীন করতেই হবে। সেজন্য ১৯৬২ সালে নিউক্লিয়াস গঠন করেন সমস্ত মহকুমাতে। এইভাবে ধাপে ধাপে তিনি এগিয়েছেন। হঠাৎ করে একদিনেই ঘোষণা দেননি। প্রত্যেকটা পদক্ষেপ অত্যন্ত সুচারুভাবে নিয়েছিলেন দিনি। ফলে আমরা এত অল্প সময়ের মধ্যে স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘একটা যুদ্ধবিধস্ত দেশ এত অল্প সময়ের মধ্যে কেউ গড়ে তুলতে পারেনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মত বলিষ্ট নেতৃত্ব ছিল বলেই এটা সম্ভব হয়েছিল। মাত্র সাড়ে তিন বছরে মধ্যে যুদ্ধবিধস্ত বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত করে রেখে যান তিনি। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী চক্ররা সেটা মানতে পারেনি।’

জিয়াউর রহমানের সঙ্গে পাকিস্তানের যোগাসাজেশের প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘লেফটেন্যান্ট কর্নেল আসলাম বেগ, যে পরবর্তীতে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান হয়েছিল, সে তখন এখানে কর্মরত। সে একটা চিঠি পাঠিয়েছিল জিয়াউর রহমানের কাছে। তার কাজের প্রশংসা করেছিল এবং তাকে ভবিষ্যতে আরও ভালো কাজ দেবে, সেই কথা বলেছিল। জিয়াউর রহমানের স্ত্রী এবং দুই ছেলে তাদের কাছে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে যে ভালো আছে সেই তথ্যটাও দিয়েছিল। সেই চিঠিটা কিন্তু আমি দিয়েছিলাম আপনাদের (আওয়ামী লীগ নেতাদের) সবার কাছে। সংসদেও এটা পড়ে শোনানো হয়েছে। কপি এখনও একটা আমার কাছে আছে।’

জিয়াউর রহমানকে লেখা আসলাম বেগের প্রশংসামূলক চিঠি নিয়ে প্রশ্ন তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যদি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসটা দেখি তাহলে দেখা যাবে, জিয়াউর রহমান সেক্টর কমান্ডার হতে পারে, কিন্তু রণক্ষেত্রে সে থাকেনি। যেখানে গোলাগুলি হতো সেখান থেকে সে তিন মাইল পিছনে চলে যেত। মোশাররফ ভাই (চট্টগ্রামের) এখনো আছেন, যারা একইসঙ্গে রণক্ষেত্রে ছিলেন। পেছনে চলে যাওয়ার জন্য তার নাম দিয়েছিলেন মি. রিট্রেড। পাকিস্তানি কোন সৈনিকের উপর একটা গুলি চালিয়েছে বা তাদের বিপক্ষে যুদ্ধ করেছে- এটা দেখাতে পারবে না বিএনপি।’

জাতির পিতার স্বাধীনতার ঘোষণার দেওয়ার বিভিন্ন প্রেক্ষাপট ‍তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘২৫ মার্চ থেকে জিয়াউর রহমান তো কোনো বাঙালি সৈনিককে বা কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা করেনি। যার জন্য এখানে সব থেকে বেশি ক্যাজুয়ালটি হয়। বাকি যারা বাঙালি অফিসার ছিলেন তারা তাদের ট্টুপস নিয়ে চলে গিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। কিন্তু জিয়া কেন ২৫ মার্চ পর্যন্ত থাকেন চট্টগ্রামে এবং যারা ব্যারিকেড দিয়েছে সে উল্টো তাদের গুলি করেছে, তাদের মেরেছে। এছাড়া সোয়াত জাহাজ থেকে যখন অস্ত্র নামাতে যায় তখন তাকে ধরে ফেলে, সবাই আটকায়। তারপর তাকে নিয়ে আসে কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে এবং তাকে দিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করায়।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘কেউ এতটুকু করলেও আওয়ামী লীগ কখনো তা অস্বীকার করেনি। জাতির পিতা জিয়াউর রহমানকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই মর্যাদা সে রক্ষা করতে পারেনি। কারণ ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পিছনে জিয়াউর রহমানের হাত। মোশতাক-জিয়া একসঙ্গে মিলেই তো এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। যে কারণে খুনিদেরকে ইনডেমনিটি দিয়ে বিভিন্ন দেশে দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছে। খালেদা জিয়া জনগণের ভোট চুরি করে তাদের সংসদে বসিয়েছে। খালেদা জিয়া বা জিয়াউর রহমানের প্রত্যেকটা ইলেকশনই গোলমাল হয়েছে। সেই ১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচন, মাগুরার নির্বাচন, ঢাকা-১০ আসনের নির্বাচন- প্রত্যেকটা নির্বাচনই তো তাদের উল্টো ভোট চুরির ইতিহাস রয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব- সেই স্লোগান তো আওয়ামী লীগই দিয়েছে। জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষার জন্য এই স্লোগান দিয়েই আমরা সংগ্রাম করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি। আর জনগণের ক্ষমতা তাদের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছি। সেখানে যদি বিএনপির নেতারা গণতন্ত্র না দেখেন, উন্নয়ন যদি তাদের চোখে না পড়ে তাহলে তো বলার আর কিছু থাকে না।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। পরে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, কেন্দ্রীয় সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী বক্তৃতা করেন।

গণভবন প্রান্তে সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ। সভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতাসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

আওয়ামী লীগ ক্ষমতা জনগণ শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর