‘র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অত্যন্ত গর্হিত কাজ’
২৮ মার্চ ২০২২ ১৪:২৫
ঢাকা: কয়েকজন র্যাব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আমেরিকার দেওয়া নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অপরাধীদের রক্ষা করে যাদের দেশে স্থান দেয়, আবার বিনা অপরাধে আমাদের দেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়; এটা যাদের চরিত্র, তাদের বিষয়ে আর কী বলব। এ ধরনের একটা বিধিনিষেধ জারি অত্যন্ত গর্হিত কাজ।
সোমবার (২৮ মার্চ) ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে সরকার প্রধান একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি শহিদ লে. কর্নেল আজাদ মেমোরিয়াল হল র্যাব ফোর্সেস সদর দফতরে যুক্ত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী র্যাব-পুলিশ বা যে কেউ যদি কোনো অপরাধে জড়িয়ে পড়ে, আমরা তার শাস্তির ব্যবস্থা করি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে যারা আমাদের বিনা কারণে, বিনা দোষে র্যাবের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে ‘শ্যাংসন’ জারি করেছে, তাদের দেশে এ ধরনের অপরাধ করলে তারা কিন্তু তাদের কোনো বাহিনীর বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে না।’
তিনি বলেন, আমেরিকায় একটা বাচ্চা ছেলে শুধুমাত্র পকেট হাত দিয়েছিল, তাকে গুলি করে মারল। আবার রাস্তায় ফেলে একজনকে পা দিয়ে গলা চেপে মেরে ফেলল। সেখানে যদি এ ধরনের অপরাধ কেউ করে অর্থাৎ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার নামে কেউ যদি অপরাধ করে, তাদের কিন্তু সেখানে কোনো শাস্তি দেওয়া হয় না। কিন্তু বাংলাদেশেই একমাত্র দেশ পৃথিবীতে যেখানে কেউ অপরাধ করলে আমরা তার শাস্তির বিধান করি।
র্যাবের সফলতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলদস্যু, বনদস্যু বা মাদক বিভিন্ন ক্ষেত্রে র্যাবের সাফল্য আছে। আমি জানি না এই সাফল্যে এরা কোনো দুঃখ পেয়েছে কি না? কিন্তু বাংলাদেশ যে এক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছে, এটা সত্য। সেক্ষেত্রে এ ধরনের একটা বিধিনিষেধ জারি অত্যন্ত গর্হিত কাজ।
সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী ও জাতির পিতার খুনিদের আমেরিকায় আশ্রয় পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে যুদ্ধাপরাধীরা স্থান পেয়েছে, জাতির পিতার খুনি, আত্মস্বীকৃত খুনি, সাজাপ্রাপ্ত আসামিও কিন্তু আমেরিকাতে বসবাস করছে। তাকে তারা ওখানকার সিটিজেন করে নিয়েছে। আমরা বারবার তাদেরকে অনুরোধ করেছি। প্রেসিডেন্টের কাছে চিঠি দিচ্ছি। একের পর এক প্রেসিডেন্ট আসছে, আমরা তার কাছে ধরনা দিয়ে যাচ্ছি। আমেরিকার জাস্টিস ডিপার্টমেন্টেও আমরা আহ্বান করেছি যে এরা অপরাধী, এরা শিশু হত্যাকারী, নারী হত্যাকারী, খুনি। ১৫ আগস্ট তারা খুন করেছে। তাদেরকে আমাদের দেশে ফেরত দিতে হবে। তারা অপরাধীদের রক্ষা করে যাদের দেশে স্থান দেয়, আর বিনা অপরাধে আমাদের দেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়।
তিনি বলেন, র্যাবকে আমরা আরও শক্তিশালী করার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি। ইতোমধ্যে ত্রিমাত্রিক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছি। যার ফলে যে কোনো ঘটনা ঘটলে খুব দ্রুত যেন তারা অ্যাকশন নিতে পারে, কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারে; সেই ব্যবস্থা আমরা করেছি।
পরে প্রধানমন্ত্রী র্যাবের বিভিন্ন অবকাঠামোর উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, র্যাব চরমপন্থীদের আগ্রাসন থেকে দেশকে রক্ষা করেছে। বিভিন্ন খুন, ধর্ষণের ঘটনায় মূল অপরাধীদের আইনের আওতায় এনেছে। মানবপাচারকারীদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নিয়েছে। জঙ্গি দমনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।
তিনি বলেন, সুন্দরবন ছিল জলদস্যুর অভয়ারণ্য। র্যাবের ক্রমবর্ধমান চাপে আজ সুন্দরবন জলদস্যুমুক্ত হয়েছে। অপরাধীদের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনের মাধ্যমে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
র্যাবের সম্মিলিত কার্যক্রমকে স্মরণীয় করে রাখার লক্ষ্যে র্যাব সদস্যদের জন্য একটি নতুন ‘ইনসিগনিয়া’ প্রবর্তন করা হয়েছে। ১৮তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সোমবার ২৮ মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে ইনসিগনিয়া ব্যাজ পরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে তা উদ্বোধন করেন।
সারাবাংলা/এনআর/এএম