Thursday 31 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সেচ সংকটে পতিত বোরো জমি, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শঙ্কা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৩০ মার্চ ২০২২ ০৮:২৩

খাগড়াছড়ি: শুষ্ক মৌসুমে পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়িতে সেচ ব্যবস্থার সংকটে ব্যাহত হচ্ছে বোরো ধান চাষাবাদ। আমন ধানের চেয়ে অর্ধেকের কম, আর মোট চাষযোগ্য জমির চার ভাগের একভাগ জমিতে চাষ হয়েছে বোরো ধান। বাকি তিন ভাগ চাষযোগ্য জমি পড়ে আছে পতিত হিসাবে। এ পরিস্থিতিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শঙ্কা প্রকাশ করেছে কৃষক ও কৃষি বিভাগ।

কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, খাগড়াছড়ি জেলায় সমতল ও পাহাড়ি ঢালু জমিতে চাষযোগ্য আবাদি জমি রয়েছে ৬২ হাজার ৬শ ৭২ হেক্টর। গেল আমন মৌসুমে ২৮ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে চাষ হলেও বোরো মৌসুমে চাষাবাদ দাঁড়িয়েছে মাত্র ১১ হাজার ৪৫৫ হেক্টরে। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের বোরো ধান চাষ হয়েছে ৫ হাজার ৬৯০ হেক্টর জমিতে, আর উফসি জাতের বোরো ধান চাষ হয়েছে ৫ হাজার ৭৬৫ হেক্টর জমিতে। হাইব্রিড জাতের বোরো ধান হেক্টর প্রতি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ দশমিক ৭ মেট্রিক টন আর উফসি প্রতি হেক্টরে ৩ দশমিক ৮ মেট্রিক টন ধরা হয়েছে। কিন্তু উৎপাদন লক্ষমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা আছে কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের মাঝে।

বিজ্ঞাপন

খাগড়াছড়ি সদরের গোলাবাড়ি এলাকার কৃষক আরা মারমা জানান, শুষ্ক মৌসুমে সেচ সংকট, ডিজেলসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণেই কমেছে বোরো চাষের পরিমাণ। ধানের বিকল্প হিসেবে রবি শস্যসহ শীতকালীন শাকসবজি রোপণ হলেও অধিকাংশ জমি থেকে যাচ্ছে অনাবাদি। যেসব জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে, তাতে পর্যাপ্ত পানি দিতে না পারলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না।

খাগড়াছড়ি সদরের আপার পেরাছড়া এলাকার কৃষক রাসাথোয়াই মারমা জানান, তাদের এলাকার বেশিরভাগ জমি বোরো চাষের আওতায় আসেনি। শুষ্ক মৌসুমে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় অনাবাদি থাকে এসব জমি। বোরো মৌসুমে পতিত জমিগুলো চাষাবাদের আওতায় আনতে তিনি ডিপ টিউবওয়েল বসানোর দাবি জানান।

বিজ্ঞাপন

মানিকছড়ি এলাকার কৃষক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দুর্গমতা, উঁচু-নিচু ও পানি সংকটের কারণে বেশিরভাগ জায়গা খালি পড়ে আছে। পানি সংকটের কারণে কেউ চাষ করতে আগ্রহী নয়। নদীতে যেটুকু পানি আছে তা পাম্পের মাধ্যমে তুলতে গেলে এখন অনেক খরচ পড়ে। তাছাড়া সার, কীটনাশকসহ সব কিছুর দাম বেশি। এত খরচ দিয়ে ধান চাষ করে লাভ করা যায় না বিধায় বেশিরভাগ জমি পতিত পড়ে আছে।

দিঘীনালা উপজেলার বেতছড়ি এলাকার কৃষক আবুল হাশেম বলেন, দুর্গমতা, উঁচু-নিচু ভূমি, শুষ্ক মৌসুমে পানি সংকট তো আছেই। কিন্তু জমিগুলোতে নদী থেকে পানি নেওয়ার কোনো সেচ নালা না থাকায় কমছে বোরো চাষ। বোরো ধান চাষ করার বিষয়ে কৃষি বিভাগ বা সরকার কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন এই কৃষক।

দিঘীনালা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, পুরো জেলায় বোরো ধান চাষের পরিসংখ্যান হতাশাজনক। পানি সংকট সমাধান করা সম্ভব হলে বোরো ধানের চাষ আর বাড়ত। তার উপজেলায় উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে পানি সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে কৃষি বিভাগ বলেও মন্তব্য করেন এই কৃষি কর্মকর্তা। তবে এই পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতির কথা জানাতে পারেননি তিনি।

খাগড়াছড়ি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক ড. মো. শফিউদ্দিন জানান, পাহাড়ে অনেক সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যা তার দফতর এককভাবে সমাধান করতে পারে না। পানি সংকট দূর করা না গেলে বোরো ধান চাষের পরিধি বাড়বে না। চলতি বছর যেসব জমিতে হাইব্রিড বা উফসি বোরো ধান চাষ হয়েছে সেখানেও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না। কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের মাধ্যমে সেচ প্রকল্পের কার্যক্রম পাহাড়ে বাড়ানোর পাশাপাশি বর্ষাকালে পানি ধরে রাখা এবং প্রাকৃতিক পানির উৎস নদী, খাল, বিল, পুকুর, ডোবা সংরক্ষণে জোর দেওয়ার পরামর্শ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার।

সারাবাংলা/এএম

সেচ সংকটে পতিত বোরো জমি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

বাংলাদেশের পরবর্তী অধিনায়ক কে?
৩১ অক্টোবর ২০২৪ ২৩:৩২

আরো

সম্পর্কিত খবর