পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে কমিউনিটি ভিত্তিক সচেতনতা জরুরি
৩১ মার্চ ২০২২ ১৪:৩০
ঢাকা: দেশে প্রতিদিন পানিতে ডুবে পাঁচ বছরের কম বয়সী ৩০ শিশুর মৃত্যু হয়। আর ১৮ বছরের কম বয়সীদের ধরা হলে ৪০ জনের মৃত্যু হয়। আর তাই পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে কমিউনিটি ভিত্তিক সচেতনতা জরুরি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে করণীয় শীর্ষক জাতীয় ক্যাম্পেইনের উদ্বোধনকালে বিশেষজ্ঞরা এ কথা বলেন। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আয়োজিত জাতীয় এই ক্যাম্পেইন পরিচালিত হচ্ছে ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স ফর ড্রাউনিং প্রিভেনশন (এনএডিপি) এর অধীনে।
ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠানে এনএডিপির আহ্ববায়ক সদরুল হাসান মজুমদার পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর কারণ এবং এর প্রতিরোধ সর্ম্পকে জানাতে গিয়ে বলেন, পানিতে ডুবে মৃত্যু নিয়ে ব্যাপক সচেতনতা ও দেখাশোনার অভাব রয়েছে।
প্রায় ৬০ ভাগ মৃত্যুর ঘটনা সকাল নয়টা থেকে দুপুর একটার ভেতরে ঘটে বলে গবেষণাতে এসেছে জানিয়ে তিনি জানান, এর কারন এই সময়টার ভেতরে শহর ও গ্রামে পরিবারের অন্য সদস্যরা বিশেষ করে বাবা-মা নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে যান।
তিনি বলেন, এক থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের যদি প্রাতিষ্ঠানিক সুপারভিশনের ( ডে কেয়ার সেন্টার) ভেতরে রাখা যায় তাহলে ৮০ ভাগ শিশুর মৃত্যু বন্ধ করা যায়। যে পরিবারে শিশুর সংখ্যা বেশি সেসব পরিবারে এ ধরনের ঘটনা বেশি হচ্ছে এবং এটা প্রমাণিত, তাই সচেতনতার জায়গাটা খুব দরকার।
পানিতে ডুবে শিশৃমৃত্যু রোধে সামগ্রিকভাবে কিছু প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরে তিনি জানান, পানিতে ডুবে মৃত্যুরোধে প্রথমেই সাঁতারের কথা চিন্তা করা হয়। কিন্তু সাঁতার মনে হলেই সেটাকে একটি স্পোর্টস হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু সাঁতার একটি গুরুত্বপূর্ণ জীবনরক্ষাকারী দক্ষতা, কেবলই খেলাধূলা নয়।
গবেষণায় এসেছে, একটি শিশুকে যদি সাঁতার শেখানো যায়, তাহলে তার প্রায় ৯০ শতাংশ ঝুঁকি কমে যায় পানিতে ডুবে মৃত্যুর।
পানি থেকে তোলার পরও সঠিকভাবে চিকিৎসা না হওয়ার কারণে অনেক শিশু শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় জানিয়ে সদরুল হাসান মজুমদার বলেন, পানিতে ডুবে যাওয়ার পর সেই শিশুকে পানি থেকে তোলার পর কিছু অবৈজ্ঞানিক-পুরাতন প্র্যাকটিসের মাধ্যমে পানি বের করার চেষ্টা করা হয়। আর সেটা করতে গিয়ে মৃত্যুকে আরও ত্বরান্তিত করা হয়। কিন্তু শ্বাসনালীতে যাওয়া পানিটা যদি বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে (সিপিআর) বের করা যায় তাহলে তাকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখা যায়। আবার পানি থেকে উদ্ধার করারও যে বৈজ্ঞানিক উপায় রয়েছে, সেটাও আমাদের জানা নাই। অথচ পানিতে ডুবে মৃত্যুকে কারণে হোক, অকারণে হোক, অসচেতনতা বা অবহেলা করে হলেও এখন আর তাকে অবহেলা করার সুযোগ নেই। তাই পানিতে ডুবে মৃত্যুকে একটি মাল্টি সেক্টরাল স্টেকহোল্ডারদের ভেতরে সমন্বয় করতে হবে। সেইসঙ্গে একে কেবলমাত্র এনজিওভিত্তিক কার্যক্রম হিসেবে না দেখে একে আন্দোলন হিসেবে দেখতে হবে, যাতে করে সমাজে এর প্রভাব পরে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এনএডিপির সাধান সম্পাদক ডা. মো আবদুল জলিল। অনুষ্ঠানে ৬৪ জেলার এনজিও প্রতিনিধিরা এবং জেলার স্থানীয় সাংবাদিক প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। ৮ বিভাগের সমন্বয়কদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়ক মো. আরিফুর রহমান, বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়ক মো. রহিমা সুলতানা কাজল এবং রংপুর বিভাগীয় সমন্বয়ক তপন কুমার কর্মকার।
পানিতে ডুবে যাওয়া রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে কথা বলেন ঢাকা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সাইলা ইমাম কান্তা। উপদেষ্টাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন লিঙ্গ বৈষম্য ও নারী বিষয়ক একটিভিস্ট সেলিনা আহমেদ এনা এবং মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আবুল কালাম মোঃ হুমায়ূন কবির।
আরও বক্তব্য রাখেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি ডাঃ ইশাকুল কবির, মামালা ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি মোঃ মোশাররফ তানসেন। দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ। আগামী পাঁচ বছর পুরো বাংলাদেশে এই সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলবে।
সারাবাংলা/এসএসএ