‘উচ্চ আদালতই গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষিত করেছে’
৩১ মার্চ ২০২২ ১৪:৪৮
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিচার বিভাগের সাহসিকতার প্রশংসা করে বলেছেন, বাংলাদেশে ১৯৭৫’র পর বারবার মিলিটারি ডিটেকটররা ক্ষমতায় এসেছে। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছে। কৃতজ্ঞতা জানাই হাইকোর্ট-সুপ্রিম কোর্টের প্রতি। এই উচ্চ আদালতই রায় দিয়ে এ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষিত করে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল যে অবৈধ সেই নির্দেশ তারা দিয়েছেন, সেই রায় তারা দিয়েছেন। সে জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।
বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) সুপ্রিম কোর্টের নবনির্মিত ১২ তলা বিজয় ৭১ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতার ভূমিকার প্রসঙ্গ পুর্নব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালি জাতি সব সময় শোষিত-বঞ্চিত ছিল; নির্যাতিত-নিপীড়িত ছিল। সেই জাতিকে একটি উন্নত জাতি হিসেবে উন্নীত করা, একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা, বাঙালি হিসাবে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য- নিজেদের চিন্তাভাবনা করতে পারা, নিজের উন্নয়ন করতে পারা, সেই ভাবেই চিন্তা ভাবনা করে একটি স্বতন্ত্র জাতি হিসাবে আত্মমর্যাদা দিয়ে গেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ১৯৮১ সালে তার দেশে ফিরে এসে গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়ার কথাও স্মরণ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, পাকিস্তান আমলে দেখেছি আইয়ুব খান একাধারে সেনাপ্রধান, একইসঙ্গে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিল। তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে জেনারেল জিয়াউর রহমান যাকে খন্দকার মোশতাক ১৫ আগস্টের পর সেনাপ্রধান নিয়োগ করে। কারণ তার সব থেকে ঘনিষ্ট ছিল। কারণ তারা ষড়যন্ত্র করেই জাতির পিতাকে হত্যা করেছিল।
জিয়া সেনাপ্রধান একাধারে আবার রাষ্ট্রপতি। এই অনিয়ম করতে গিয়ে সে সেনা আইনও যেমন ভঙ্গ করে তেমনি সংবিধানকেও পদদলিত করে মার্শাল ল জারি করে। একই পদাঙ্ক অনুসরণ করে পরবর্তীতে আবার জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখল করে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এই ক্ষমতা দখলের পালা যখন চলছে বাংলাদেশে একের পর একটি ক্যূ হতে থাকে। প্রায় ১৯-২০টা ক্যূ হয়েছে দেশে। তার খেসারত দিয়েছে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনীর অফিসার, সৈনিক, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, দেশের মানুষ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজেই বাংলাদেশে ন্যায়বিচারের পথ বন্ধ করে দিয়ে এই সমস্ত খুনি যারা জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, শিশু নারীদের হত্যা করেছে। সেই হত্যাকারীদের বিচার না করে ইমডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়েছিল। যার মাধ্যমে খুনিদেরকে পুরস্কৃত করে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকির দেওয়া হয়েছিল। তাদের নির্বাচন করার অধিকার দেওয়া হয়েছিল। যুদ্ধাপরাধীরা যারা, যাদের বিচার জাতির পিতা শুরু করেছিলন, সেই যু্দ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দিয়ে যারা কারাগারে বন্দি বা সাজাপ্রাপ্ত এমনকি সাত খুনের সাজাপ্রাপ্ত আসামি তাদেরকেও মুক্তি দিয়ে এদেশে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিল জিয়াউর রহমান এবং পরবর্তীতে তার স্ত্রী খালেদা জিয়াও একই কাজ করেছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে আর্দশ নিয়ে যে চেতনা নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল সেই চেতনা ভুলন্ঠিত হয়ে গিয়েছিল। আমি মনে করি এই একটি রায়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশর মানুষের গণতিান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষিত হয়েছে।’
পরে, সুপ্রিম কোর্টের অত্যাধুনিক সুবিধাসহ ১২ তলা ‘বিজয় ৭১’ ভবনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হকের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার।
সারাবাংলা/এনআর/একেএম