বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী: নানা কর্মসূচিতে প্রশংসিত যুবলীগ
৩১ মার্চ ২০২২ ১৬:০৬
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, নিপীড়িত মানুষের মুক্তিসংগ্রামের মহানায়ক, বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের মধ্য দিয়ে এক অবিস্মরণীয় গৌরবকাল পার করছি আমরা। বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশ এক সূত্রে গাঁথা। এই বন্ধন অবিচ্ছেদ্য। বঙ্গবন্ধু আমাদের আত্মপরিচয়ের ঠিকানা, আত্মমর্যাদার প্রতীক। তার শ্রেষ্ঠত্ব হলো, তিনি শুধু বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের একজন স্বপ্নদ্রষ্টাই ছিলেন না, তিনি বাঙালি জাতিকে অভূতপূর্ব ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ করে হাজার বছরের বাঙালি জাতির স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদান করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি তাঁর নেতৃত্বের সম্মোহনী শক্তির এক জাদুকরী স্পর্শে বাঙালি জাতিকে জাগিয়ে তুলে স্বাধীনতার মন্ত্রে উদ্দীপ্ত করেছিলেন। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে পরাধীনতার গ্লানি থেকে জাতিকে মুক্ত করে তিনি এনে দিয়েছেন রক্তিম লাল-সবুজের পতাকা খচিত স্বাধীন সার্বভৌম এক দেশ-বাংলাদেশ। তাই বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী আমাদের জাতীয় জীবনে অন্যতম বৃহৎ এক উপলক্ষ।
সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০-২১ সালকে ‘মুজিববর্ষ’ হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয়। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে মুজিববর্ষ উদযাপনের নানা পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়। সাংগঠনিকভাবেও নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। যার মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কর্মসূচি বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুপ্রেরণায় যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে অসহায়-গৃহহীন মানুষের মাঝে গৃহদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। আশ্রয় কর্মসূচি নামক এই কর্মসূচির মাধ্যমে যুবলীগ দেশব্যাপী ১২৬টি গৃহহীন পরিবারের মাঝে গৃহ দান করেছে। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর ৪টি ধাপের চূড়ান্ত পর্বে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৬৮টি গৃহহীন পরিবারের মাঝে গৃহ হস্তান্তর কার্যক্রম এর শুভ উদ্বোধন করেন। ‘গাছ লাগাই, জীবন বাঁচাই’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে সারাদেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করে যুবলীগ। মুজিবর্ষ উপলক্ষে গত বছর ১৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল এর জন্মদিন উপলক্ষে গত ১৭ অক্টোবর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে প্রকাশ পায় যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ সম্পাদিত চিঠি সংকলন গ্রন্থ ‘প্রিয় বঙ্গবন্ধু’। মুজিববর্ষ উপলক্ষে যুবলীগের পক্ষ থেকে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মাঝে ফিজিক্যালি ও অনলাইনে মুজিববর্ষের শুভেচ্ছাবার্তা সংবলিত গ্রিটিং কার্ড পাঠানো হয়।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে যুবলীগ প্রকাশ করে বিশেষ স্মারক পোস্টার। এমনকি গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর ঢাকার আবাহনী মাঠে বিকাল ৩টায় যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হয় ‘বজ্রকণ্ঠ’ কনসার্ট। এই কনসার্টে গান পরিবেশন করেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী জেমস, মমতাজ, ওয়ারফেজ, শিরোনামহীন, লালন, মেহরিন ও দূরবীন ব্যান্ড। হাজার হাজার তরুণ-তরুণীর স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণে কনসার্টটি বেশ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছিল। ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে এবং দুপুরে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। ২১ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার অডিটোরিয়ামে সমাজের পিছিয়ে পড়া ১০০০ মানুষের মাঝে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী ও বস্ত্র বিতরণ করে যুবলীগ। মানবিক কার্যক্রমের চলমান অংশ হিসেবে যুবলীগের গৃহীত এ কর্মসূচি টুঙ্গিপাড়ার আপামর জনসাধারণের কাছে বিপুল প্রশংসিত হয়। এদিন সন্ধ্যায় পুণ্যভূমি টুঙ্গিপাড়ায় যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিলের উপস্থিতিতে দোয়া মাহফিল ও বিশেষ প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ২২ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ‘টুঙ্গিপাড়া: হৃদয়ে পিতৃভূমি’ প্রতিপাদ্যে আলোচনা সভা ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ সংলগ্ন মাঠ, টুঙ্গিপাড়ায়। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জনাব শাজাহান খান এমপি। প্রধান আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন মানবিক যুবলীগের রুপকার, শেখ ফজলে শামস পরশ ও সঞ্চালনা করেন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল।। যুবলীগ চেয়ারম্যান তরুণ প্রজন্মকে শুধু দেশপ্রেমী নয়, বাঙালি সংস্কৃতি ও ইতিহাস অনুরাগী হবার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে ‘চিরঞ্জীব মুজিব’ চলচ্চিত্রটি প্রদর্শিত হয়। চৈত্রের প্রচণ্ড তাপদাহ আর তীব্র রোদকে উপেক্ষা করে গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, নড়াইল, খুলনা, খুলনা মহানগর, বাগেরহাট ও পিরোজপুর থেকে প্রায় ২৫০০০ নেতাকর্মী অনুষ্ঠানে যোগদান করে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক অনন্য মাইলফলক। জাতির এই মাহেন্দ্রক্ষণে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কর্তৃক গৃহীত কর্মসূচি সকল শ্রেণি-পেশা ও আপামর জনসাধারণের কাছে বিশেষ প্রশংসা অর্জন করে। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শের পতাকাবাহী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মণি’র পদাঙ্ক অনুসরণ করে এগিয়ে চলেছে কোটি যুবকের প্রাণের সংগঠনটি, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারই সুযোগ্য উত্তরসুরী অধ্যাপক শেখ ফজলে শামস পরশ। তার সুদক্ষ নেতৃত্বে এক অনন্য উচ্চতায় অধিষ্ঠিত হচ্ছে যুবলীগ। দায়িত্ব গ্রহণ করার পর যুবলীগকে একটি মানবিক সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে তার গৃহিত বিভিন্ন পদক্ষেপ দেশে-বিদেশে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে তার পিতা যেমন নিবেদিত ছিলেন তিনিও নিষ্ঠার সাথে সেই পথে এগিয়ে চলেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা যে উদ্দেশ্য নিয়ে শেখ পরশের হাতে যুবলীগের নেতৃত্বভার তুলে দিয়েছেন তার মর্যাদা রক্ষার পাশাপাশি দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্খার নতুন ঠিকানায় পরিণত হয়েছে যুবলীগ।
বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের অর্জন ও সাফল্য অনেক। বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়ন অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সোনার বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন তা কেবল বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতেই সীমাবদ্ধ নয়; বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলাদেশ-এর অর্থ ব্যাপক। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হলে অবশ্যই সোনার মানুষ তৈরি করা জরুরি। মূল্যবোধ সম্পন্ন, পরিচ্ছন্ন ও মানবকল্যাণমূখী রাজনীতির চর্চায় যুবসমাজকে সম্পৃক্ত করতে যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের যে নিরলস প্রচেষ্টা, তা আমাদেরকে আশান্বিত করে। তাই তাঁর মানবিক মূল্যবোধ, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, সততা ও নিষ্ঠা এই যুবলীগকে নিশ্চয়ই একদিন দক্ষিণ এশিয়ার সেরা যুব সংগঠনের সম্মান এনে দেবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
লেখক: শিক্ষক ও কলামিস্ট
সারাবাংলা/এসএসএ